আবিরের মা-বাবা কি কিছুই জানত না!

উত্তর পেতে বোনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার, রিমান্ডে

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৩০ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:২৪ পূর্বাহ্ণ

নগরীর ইপিজেড এলাকায় ৫ বছরের শিশু আলীনা ইসলাম আয়াতকে হত্যার পর লাশের টুকরো ফেলতে যাওয়ার পথে রাস্তায় তার মায়ের সাথে দেখা ও কথা হয়েছিল। এছাড়া আয়াতকে আবির প্রথমে তার বাবার বাসায় নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। এরপর মায়ের বাসায় নিয়ে গিয়ে ছয় টুকরো করে। সারা রাত লাশের টুকরোগুলো মায়ের বাসায় ছিল, যেখানে আবিরের ছোট বোনও থাকত। দুটি বাসায় এত কাণ্ড ঘটে গেলেও তার বাবামাবোন কি কিছু জানত না? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত আবির আলীর পর এবার তার মাবাবা ও বোনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তারের পরপর আয়াতের লাশের টুকরো উদ্ধারে তথ্য জানতে আবিরের মাবাবাকে আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পিবিআই। তবে বোন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) মনোজ কুমার দে আজাদীকে বলেন, মঙ্গলবার সকালে গ্রেপ্তারের পর আবিরের বাবা আজাহারুল ইসলাম

ও মা আলো বেগমকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহর আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়া আবিরের ১৫ বছর বয়সী বোনকে তিন দিন ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রেখে সমাজসেবা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল৬ এর বিচারক সিরাজউল্লাহ কুতুবী।

মনোজ কুমার দে আজাদীকে জানান, রিমান্ডে আবিরকে জিজ্ঞাসাবাদে কিছু তথ্য পেয়েছি। এরপর আমাদের সন্দেহ হয় হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আবিরের বাবামা ও বোনের কাছে আরও তথ্য থাকতে পারে। এসব বিষয় মাথায় রেখে আবিরের মাবাবা ও বোনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে আনা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে আমরা সবকিছু খোলাখুলিভাবে বলতে পারছি না। যেসব তথ্য আবিরের কাছ থেকে পাওয়া গেছে সেগুলো তার বাবা, মা ও বোনের সঙ্গে ক্রস চেক করা হবে।

এর আগে প্রধান অভিযুক্ত আবির আলীকে দুই দফায় রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত। ২৬ নভেম্বর দুদিনের এবং সর্বশেষ সোমবার আবেদনের প্রেক্ষিতে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

গত ১৫ নভেম্বর আয়াত নিখোঁজ হওয়ার পরদিন ইপিজেড থানায় জিডি করে তার পরিবার। সন্ধান চেয়ে পোস্টার ও প্রচারপত্রও বিলি করা হয়। তার দাদা নাতনীর সন্ধান চেয়ে পিবিআইয়ের কাছে আবেদন করেন। পরে পিবিআই তদন্তে নেমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবিরকে আটক করে।

আয়াত ইপিজেড থানার নয়ারহাট ওয়াছ মুন্সী বাড়ি এলাকার সোহেল রানার মেয়ে। তাদের বাড়িতে দীর্ঘদিন ভাড়া থাকে আবিরের পরিবার। ২৫ নভেম্বর পিবিআই জানিয়েছিল, মুক্তিপণের জন্যই আয়াতকে অপহরণ করে খুন করেছে তাদের ভাড়াটিয়ার ছেলে আবির আলী। শিশুটিকে ছয় টুকরো করে সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে সে। ওইদিন তাকে নিয়ে পিবিআই সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বঁটি, আয়াতের জুতা উদ্ধার করে।

আবির পিবিআইকে জানায়, মুক্তিপণের জন্য আয়াতকে অপহরণ করলেও কোথাও রাখার জায়গা না পেয়ে আয়াতকে খুন করে সে। তারপর আয়াতের বাবার কাছে টাকা দাবি করার পরিকল্পনা করে। সেজন্য একটি মোবাইলও কিনেছিল। আগে রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া একটি সিম তার সংগ্রহে রেখেছিল। কিন্তু সেটা সচল না থাকায় ফোন করতে পারেনি।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় শনিবার প্রথম দফায় দুদিনের হেফাজতে এনে আবিরকে নিয়ে শিশু আয়াতের মরদেহের খণ্ডিত অংশের খোঁজে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় পিবিআই। এরপর আবিরের মা ও বোনের বাসায় রক্তের ছাপ ও মাংস কাটার গাছের গুঁড়ি উদ্ধার করে পিবিআই। পিবিআইয়ের কাছে আয়াতকে খুনের পর কেটে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও ঘটনার ১৫ দিন পরও শরীরের কোনো অংশ উদ্ধার হয়নি। পরে সোমবার আবিরকে ফের সাত দিনের হেফাজতে নিয়েছে এ তদন্ত সংস্থা।

এদিকে তদন্ত কাজে সম্পৃক্ত পিবিআই মো. ইলিয়াস খান আজাদীকে জানান, কয়েক দফা অভিযানেও লাশের হদিস না পাওয়ায় আয়াতের পরিবারের দাবি, তাদের আয়াত বেঁচে আছে এবং আবিরের মাবোনরা জানে সে কোথায়। নিখোঁজ মামলায় তাদের আটকের দাবি জানিয়ে আসছিল আয়াতের পরিবার। পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যাবে যুবলীগের ২ লাখ নেতাকর্মী
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে সাজ সাজ রব