আবারো দেবে গেল রাজাখালী ব্রিজের অ্যাপ্রোচ রোড

বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৫ মে, ২০২২ at ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

মাত্র এক বছরের মাথায় আবারো দেবে গেছে রাজাখালী ব্রিজের (পুরাতন) অ্যাপ্রোচ সড়ক। সপ্তাহ-খানেক আগে দেবে যাওয়া অংশটি দিন দিন বড় হচ্ছে। এতে ব্রিজে উঠার সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়ছে বিভিন্ন যানবাহন। ট্রাক-মিনি ট্রাকসহ প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন পার হয় এ ব্রিজ। গতবছরও ব্রিজের অ্যাপ্রোচ রোডটি দেবে গিয়েছিল। ওই সময় জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার সহযোগিতায় তা সংস্কার করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চসিকের এক প্রকৌশলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ছিলেন এম এ মান্নান। তার উদ্যোগে ওই সময় রাজাখালী খালের উপর ব্রিজটি নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। দেবে যাওয়া অংশটি অ্যাপ্রোচের অংশ। ব্রিজটি নির্মাণের পর থেকে কোনো সময় অ্যাপ্রোচ রোড দেবে যায়নি। কিন্তু মেগা প্রকল্পের কাজ করার পর থেকে সমস্যাটি দেখা দেয়। হয়তো মেগা প্রকল্পের কাজ করার সময় নিচ থেকে মাটি সরে গেছে।

তিনি বলেন, ব্রিজের দুটো পার্ট। একটিতে গার্ডার বসিয়েছে। বাকি অংশে অ্যাপ্রোচ। সেখানে ব্রিজের রেলিং টেনে দেয়া হয়েছে। মাটি সরে না যাওয়ার জন্য তা করা হয়েছে। ওটাও আরসিসি করা। ওই অ্যাপার্টমেন্ট পার্টে দেবে গেছে। নিচে এস্কেভেটর দিয়ে কাজ করার সময় হয়তো মাটি সরে গেছে। এ বিষয়ে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ আলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের কাজের জন্য সেখানে সমস্যা হয়নি। তারপরও সিটি কর্পোরেশন বলাতে গত বছর আমরা ঠিক করে দিয়েছিলাম। এখন যে দেবে গেছে সে বিষয়ে কাল (আজ) খবর নিব। জানা গেছে, নগরের পুরাতন চাক্তাই, নতুন চাক্তাই, আছাদগঞ্জ শুটকি পল্লী থেকে প্রতিদিন শত শত পণ্যবাহী ট্রাক ও মিনি ট্রাক কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক হয়ে উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে আসা-যাওয়া করে। এক্ষেত্রে সংযোগ সড়কে পৌঁছার জন্য ট্রাকগুলোকে পার হতে হয় রাজাখালী ব্রিজটি। পণ্যবাহী বিভিন্ন ঠেলাগাড়ি এবং ভ্যান গাড়িও ব্রিজটি পার হয়ে গন্তব্যে যায়। এছাড়া কোতোয়ালী থেকে পাথরঘাটা ও আশরাফ আলী রোড হয়ে আসা-যাওয়া করা দৈনিক কয়েক’শ প্রাইভেট কার, ম্যাঙ্মিা (এক ধরনের গণপরিবহন) সিএনজি ও রিকশাও ব্রিজ দিয়ে চলাচল করে।

গতকাল সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, ব্রিজটির পূর্ব পাড়ের উত্তর অংশ দেবে গেছে। সেখানে একটি গর্তও সৃষ্টি হয়। ব্রিক সলিং উঠে গিয়ে ইটের টুকরো দেখা যাচ্ছে। দুটো বালির বস্তা দিয়ে গর্তটি ডেকে দিয়েছে স্থানীয়রা। কিছু অংশ দেবে যাওয়ায় কমেছে সড়কের প্রশস্ততা। ফলে ব্রিজে উঠা-নামার সময় বিভিন্ন যানবাহনকে এক পাশ হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এসময় একটু এদিক-ওদিক হলেই যানবাহন কাত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনার কথা দৈনিক আজাদীকে জানান করিম নামে এক ট্রাক চালক।

মোজাম্মেল হক নামে এক ম্যাঙ্মিা চালক আজাদীকে বলেন, সপ্তাহ খানেক আগে এটি দেবে গেছে। শুরুতে কম ছিল। এখন বেড়ে যাচ্ছে। দেবে যাওয়ার ফলে রাস্তা সংকীর্ণ হওয়ায় একসঙ্গে দুটো গাড়ি ওই পথ দিয়ে ব্রিজে উঠতে-নামতে পারছে না বলে জানান মিনি ট্রাক চালক নূর মিয়া।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন আজাদীকে বলেন, দেবে যাওয়া অংশ দ্রুত মেরামত করতে হবে। তা নাহলে সামনে বৃষ্টি হলে নিচ থেকে মাটি ও বালি সরে গিয়ে বড় গর্ত সৃষ্টি হতে পারে। তখন কিন্তু দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়বে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরহাদুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, রাজাখালী খালে জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের আওতায় রিটেইনিং ওয়ালের কাজ করা হয়। তখন একবার দেবে গিয়েছিল। ওই সময় তারা ঠিক করে দেয়। পরবর্তীতে আমরা প্যাঁচওয়ার্ক করি। এখন তাদের সঙ্গে আমরা আবার কথা বলবো।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের জুন মাসে রাজাখালী ব্রিজের মাঝখানে প্রায় ৮ বর্গফুটের একটি অংশ ভেঙে খালে পড়ে যায়। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তখন চসিক মেরামত করার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এরপর একই বছরের অক্টোবর মাসে পূর্বের ভাঙার ১০ ফুট পশ্চিমে আরও একটি বড় অংশ ভেঙে যায়। তখন আবারো ব্রিজটি ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে চসিক মেরামত করে। এরপর সাড়ে পাঁচ বছর পার হলেও ব্রিজে কোনো সমস্য দেখা দেয়নি। তবে গত বছর থেকে অ্যাপ্রোচ রোড দেবে যাওয়া জনিত সমস্যা শুরু হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজট খুলেছে বিলাসবহুল ১০৮ গাড়ির
পরবর্তী নিবন্ধহজ ফ্লাইট শুরু ৫ জুন