আবদুল জব্বার খান : বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ

| মঙ্গলবার , ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:৪৭ পূর্বাহ্ণ

আবদুল জব্বার খান। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা এবং চিত্রনাট্যকার ও পূর্ব বাংলার বাংলা চলচ্চিত্রের জনক হিসেবে সমাদৃত। তার চিত্রনাট্য, অভিনয় এবং পরিচালনায় ‘মুখ ও মুখোশ’ চলচ্চিত্র তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র হিসেবে পরিচিত।
আব্দুল জব্বার খান ১৯১৬ সালে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার উত্তর মসদ গাঁও নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার ব্যবসা সূত্রে আসামের ধুবড়ী এলাকায় তিনি ব্যবসা করতেন। সেখানেই শৈশবে তিনি স্কুলে ভর্তি হন। পাঠ্য অবস্থায় জড়িয়ে পড়েন নাটকের সঙ্গে। তিনি অভিনয় করেন ‘বেহুলা’, ‘সোহরাব রোস্তম’ নাটকে। প্রমথেশ বড়ুয়ার সাথে পরিচয়ের সূত্রে তিনি কলকাতায় গিয়ে তাঁর বাসায় থেকে নাটক দেখতেন। এবঙ তিনি জড়িয়ে পড়েন নিয়মিত মঞ্চনাটকে। প্রমথেশ বড়ুয়া পরিচালিত ‘সিন্ধু বিজয়’ নাটকে তিনি অভিনয় করেন আবদুল জব্বার। নবম-দশম শ্রেণীতে পড়ার সময়ই তিনি নাটকের মূল চরিত্রে অভিনয় করেন। গৌহাটিতে পরিচালনা করেন ‘টিপু সুলতান’। তিনি ‘সমাজপতি ও মাটির ঘর’ নাটকে অভিনয় করে স্বর্ণপদক পান। ১৯৪১ সালে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল থেকে ডিপ্লোমা করে চাকরিতে যোগ দেন। পাশাপাশি চলতে থাকে নাট্যচর্চা। ১৯৪৯ সালে ঢাকায় স্থায়ীভাবে চলে আসেন। ঢাকায় এসে সংগঠিত করেন ‘কমলাপুর ড্রামাটিক এসোসিয়েশন’। এ সংগঠনের উদ্যোগে তিনি ‘টিপু সুলতান’ ও ‘আলীবর্দী খান’ নাটক মঞ্চায়ন করেন। পরে তিনি ‘ঈসাখাঁ’ (১৯৫০), ‘প্রতিজ্ঞা’ (১৯৫১), ‘ডাকাত’ (১৯৫৩), ‘জগোদেশ’ (১৯৫৯) রচনা করেন। পরবর্তী সময় ‘ডাকাত’ নাটক অবলম্বনে বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ তৈরি করে খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন আবদুল জব্বার খান। এই চলচ্চিত্রে নিজে অভিনয় করেছেন। চলচ্চিত্র বিষয়ক বেশ কিছু সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। প্রতিষ্ঠা করেছেন চলচ্চিত্র নির্মাণ সংস্থা পপুলার স্টুডিও। আবদুল জব্বার খান পরিচালিত অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ‘জোয়ার এলা’, ‘বাঁশরী’, ‘কাঁচ কাটা হীরে’, ‘খেলারাম’, ‘উজালা’, এবং উর্দু ছবি ‘নাচঘর’। চলচ্চিত্র শিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। এসবের মধ্যে রয়েছে: বাচসাস পুরস্কার, এফডিসি রজত জয়ন্তী পদক, হীরালাল সেন স্মৃতি পুরস্কার, উত্তরণ পদক, বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন স্বর্ণপদক, ফিল্ম আর্কাইভ সম্মাননা প্রতীক, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সম্মাননা পদক, রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি সম্মান পদক প্রভৃতি। ১৯৯৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআনন্দপূর্ণ পরিবেশে বিঘ্ন সৃষ্টি কারো প্রত্যাশিত নয়
পরবর্তী নিবন্ধসর্বত্র জ্ঞান চর্চার পরিবেশ নিশ্চিত হোক