আনোয়ারুল হক : চিত্রকলার বিকাশে এক অনন্য পথিকৃৎ

| বৃহস্পতিবার , ১৮ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

শিল্পী আনোয়ারুল হক। বাংলাদেশে প্রথম সারির চিত্রশিল্পীদের মধ্যে অন্যতম। দেশের চিত্রকলার প্রতিষ্ঠা, চর্চা ও বিকাশে তিনি ছিলেন নিরলস ও নিবেদিতপ্রাণ।
আনোয়ারুল হকের জন্ম ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই উগান্ডায়। সেখানে বাবা-মায়ের সঙ্গে তাঁর শৈশব অতিবাহিত হয়। ৮ বছর বয়সে সপরিবারে কলকাতা চলে আসেন এবং শৈশবে ও কৈশোরের সময়গুলো কলকাতাতেই কাটে তাঁর। চিত্রকলায় আনোয়ারুলের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কলকাতা আর্ট কলেজে। বিশ শতকের শুরুতে তৎকালীন মুসলমান সমাজে ছবি আঁকা ছিল রীতিমতো নিষিদ্ধ। এই প্রথাবিরোধিতায় গিয়ে অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর নিবিড় ভালোবাসায় তিনি ছয় বছরের পাঠ শেষ করে কৃতিত্বের সাথে চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কর্মজীবনের সূচনা ফরিদপুর জেলা স্কুলে চিত্রকলার শিক্ষক হিসেবে। পরবর্তী সময়ে হাওড়া জেলা স্কুল, কলকাতা আর্ট স্কুল, চট্টগ্রাম নর্মাল স্কুল এবং পূর্ব পাকিস্তান আর্ট ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৪৭-এ দেশ বিভাগের পর আনোয়ারুল হক তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। সে সময় সরকারি আর্ট স্কুল (বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউট) প্রতিষ্ঠায় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, শফিউদ্দীন আহমেদ, কামরুল হাসান প্রমুখের পাশাপাশি শিল্পী আনোয়ারুল হকের ভূমিকাও ছিল গুরুত্ববহ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তিনি এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। জল রং ও তেল রং- এই দুটো মাধ্যমে আনোয়ারুল ছবি এঁকেছেন। আনোয়ারুল হকের বেশসংখ্যক চিত্রকর্ম রয়েছে। জলরং ও তেলরং উভয় মাধ্যমকে তিনি চিত্রকর্ম সৃষ্টিতে ব্যবহার করেছেন। প্রথম দিকে বাস্তবধর্মী চিত্রকর্ম সৃষ্টিতে বিশেষ করে জলরং এবং ষাটের দশকের পর প্রকৃতি নির্ভর চিত্রকর্মে তেলরং-এ নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিত্র নির্মাণ করেন। পরাবাস্তবধর্মী ছবি আঁকায় তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, বঙ্গভবন, দিল্লি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, পাকিস্তান আর্ট কাউন্সিল প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে তাঁর উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম রয়েছে। বাংলাদেশের সমকালীন বেশির ভাগ প্রথিতযশা শিল্পীই তাঁর ছাত্র। ১৯৮১ সালের ১৮ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধসর্বত্র স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হোক