আত্মবিশ্বাস ও ইগো

টুম্পা ভট্টাচার্য্য | বুধবার , ২১ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

ইগো কি? এর সঠিক বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে, আমি, আত্মা, আত্মমর্যাদা, অহম, অহংবোধ, স্বাতন্ত্র্যবোধ। ইগোর অনেক সংজ্ঞা থাকলেও রায়ান হলিডের (লেখক, মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ এবং সফল উদ্যোক্তা) মতে ইগো হচ্ছে ‘নিজের বড়ত্বের প্রতি একটি অস্বাভাবিক বিশ্বাস। যার সাথে মনে মিশে থাকে অতি অহংকার এবং আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর উচ্চাকাঙ্ক্ষা।” তার লেখা ঊমড় রং ঃযব ঊহবসু বই এ এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বর্তমানে মানুষের মধ্যে এই ইগো সমস্যাটা প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে। আত্মবিশ্বাসকে অহংবোধে নিয়ে যাওয়ার কারণে ব্যক্তি শুধুমাত্র নিজেকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন এবং সবসময় মনে করে আমিই সেরা আমই সব। লেখকের মতে, ইগো একটি নেতিবাচক বোধ যেটা আমাদের সবার মাঝে কিছু না কিছু মাত্রায় হলেও আছে। আর সেটা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বও আমাদের। তিনি বলেছেন, নিজের প্রতি অস্বাভাবিক ও অবাস্তব উঁচু ধারণা একজন মানুষের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করে। ইগো মানুষের মাঝে বাস করা ছোট শয়তানের মতে, যা একজন মানুষকে ভাবতে শেখায় তিনিই একমাত্র সেরা সবার থেকে। যে ব্যক্তি সত্যিকার বড় হওয়ার আগেই নিজেকে বড় ভাবতে শুরু করে, তার এমন ভাবনার জন্য তাকে এগিয়ে যেতে বাধা দেয়। তার মিথ্যা অহংকার তাকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে। ইগো সমস্যার প্রধান লক্ষণ তারা ভুল করেও ভুল স্বীকার করতে চায় না। অনেক সময় ভুল বুঝতে পারলেও তারা তা স্বীকার করে না। সেটা যেমন অন্যের কাছে করে তেমনি নিজের কাছেও। এজন্য তারা কখনো নিজের ভুল শোধরাতে পারে না।
ইগো সম্পন্ন মানুষকে কখনো যুক্তি দিয়ে বোঝানো যায় না। তারা যুক্তিকে তর্ক হিসেবে দেখে এবং জিতে থাকার প্রবণতা থাকে বেশি। ইগো দ্বারা অসুস্থ মানুষ ব্যর্থ হলেও সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করে পরিস্থিতি, সময় ও মানুষের উপর দোষ চাপাতে থাকে। এটি এক প্রকার মানসিক প্যারালাইসিস বলে মনে করেন লেখক।
ইগো আপনার সব থেকে বড় শত্রু। ইগো সুন্দর সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি করে। ব্যক্তিকে অসামাজিক করে তুলে। তারা সবার প্রিয় হয়ে উঠতে পারে না। ইগোর কারণে হতাশা বৃদ্ধি পায়, সফলতায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
লেখক বলেছেন, সময় মতো ইগো থেকে মুক্ত হতে না পারলে, ইগো আমাদের জীবন ও এগিয়ে চলার পথকে গ্রাস করতে পারে। ব্যক্তিকে বুঝতে হবে জ্ঞান, সততা, সরলতা, শিক্ষা, উদারতা ও মানবিক সকলগুণ প্রকাশের মাধ্যমে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বুঝা যায়। অহংকার ও জাগতিক ওজন বুঝে আচরণ কখনো ব্যক্তিত্ব নয়। যেটাকে আপনার ব্যক্তিত্ব ও আত্মসম্মান বোধ মনে করছেন সেটা সত্যিই কি সেই মাত্রায় আছে কিনা খুঁজে দেখা জরুরি। যদি দেখা যায় আপনার চিন্তা ধারণা আপনাকে সহজ হতে দিচ্ছে না দূরে সরিয়ে নিচ্ছে সবকিছু থেকে তাহলে বুঝবেন আপনি ইগো সমস্যায় ভুগছেন। ব্যক্তিত্ব ও আত্মসম্মান মানুষকে আকর্ষণ করে।আপনার ব্যবহার আপনাকে আরো মহিমান্বিত করবে। সহোযোগিতা ও উদার ভাবনা আপনার ইগোকে কাটিয়ে তুলবে। ব্যক্তিজীবনে আত্মবিশ্বাস হলো সফলতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি থাকলে এগিয়ে যাওয়া হয় না। অনেকে এই আত্মবিশ্বাসকে ভুলভাবে প্রয়োগ করে ইগোতে (অহংকারবোধ) পরিণত করে। আত্মবিশ্বাস হলো মনের সুপ্ত প্রতিভা যেটা আমাদের মানসিক অবস্থার উন্নতির মাধ্যমে শক্তির সঞ্চার করে। অপরদিকে ইগো মনের একটা সুপ্ত নেতিবাচক চিন্তা যেটা আত্মবিশ্বাসকে নষ্ট করে। সফলতার পথে বাধা সৃষ্টি করে। তাই আত্মবিশ্বাস ও ইগো সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে আমাদের এগিয়ে চলার পথে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজীবনের শ্রীবৃদ্ধি
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের কথা