আঞ্চলিক ভাষার বিপর্যয়

| শনিবার , ৬ মার্চ, ২০২১ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

বাঙালি ভাষা সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ আঞ্চলিক ভাষা। প্রতিটি জেলার মানুষ তার নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। অঞ্চলভেদে রয়েছে ভাষার বিভিন্নতা। বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষার বৈচিত্র্য নিজস্ব সৌন্দর্যে ও উৎকর্ষে অতুলনীয়। কিন্তু কালের পরিক্রমায় আধুনিকতার নামে আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনে মানুষের মুখের ভাষা পরিবর্তনের সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে আঞ্চলিক ভাষা। বর্তমানে আঞ্চলিক ভাষা দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিনিয়ত আঞ্চলিক ভাষার মৃত্যু হচ্ছে। ক্রমাগত আঞ্চলিক ভাষার বিকৃত উপস্থাপনের ফলে এর ব্যবহার নিয়ে তৈরি হচ্ছে লোকলজ্জা ও অনাগ্রহ। বর্তমানে দর্শক টানতে আঞ্চলিক ভাষাকে বিনোদনের খোরাক বানিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষার ব্যবহারে তৈরি হচ্ছে টেলিভিশন নাটক ও সিনেমা। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আঞ্চলিক ভাষাকে নিয়ে মানুষ বিভিন্নভাবে ট্রল করছে। বর্তমানে বিশেষ করে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও বরিশালের অঞ্চলের ভাষা যেন মানুষের কাছে নিত্যদিনের বিনোদনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরাঞ্চলে বিচিত্র অঞ্চলের মানুষের বসবাস। আঞ্চলিক ভাষা সকলে বুঝতে না পারায় প্রমিত বাংলা উচ্চারণ বৃদ্ধির ফলে আঞ্চলিক ভাষা ক্রমশ পরিবর্তন হচ্ছে। এছাড়া শহরাঞ্চলে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বললে অনেকেই হাসি-ঠাট্টা সহ নানান বিরূপ মন্তব্যে মেতে ওঠে। বেশির ভাগ মানুষ প্রমিত বাংলা উচ্চারণে নিজেকে স্মার্ট মনে করে। এভাবে চর্চা, সংরক্ষণ ও অবহেলার কারণে আঞ্চলিক ভাষার স্বকীয়তা ও ভাষাগত ঐতিহ্য বিপন্ন হতে চলেছে। আঞ্চলিক ভাষা বাংলা ভাষার অলংকার। আঞ্চলিক ভাষার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আঞ্চলিক ভাষার প্রাচুর্য যদি হারিয়ে যায়, তবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে নিজস্ব ভাষা বলতে আর কিছুই থাকবে না। তাই আঞ্চলিক ভাষার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে নিজেদেরই উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগেরও প্রয়োজন।

– আরিফুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থী, চট্টগ্রাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ : কালের মহানায়ক
পরবর্তী নিবন্ধমা আমার মা