আক্রান্ত ১২ শিশুর নমুনায় সবার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট

চট্টগ্রামে করোনার জিনোম সিকোয়েন্সিং

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৯ জুলাই, ২০২১ at ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে জুন থেকে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত শিশুদের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করে সবার মাঝে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বলে পরিচিত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতির তথ্য জানিয়েছে একদল গবেষক। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তিকৃত ১২ জন শিশুর নমুনার জিনোম সিকুয়েন্সিং করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নবজাতক থেকে ১৬ বছর বয়সী (স্কুলগামী) করোনায় আক্রান্ত শিশুদের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়।
জিনোম সিকোয়েন্সিং কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেন জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের চিকিৎসক ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী ও ডা. আব্দুর রব মাসুম এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় কান্তি বিশ্বাস ও ডা. নাহিদ সুলতানা। সার্বিক পরিকল্পনায় ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. আদনান মান্নান। এই দলে আরও ছিলেন জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. মিনহাজুল হক, ডা. রাজদীপ বিশ্বাস, ডা. একরাম হোসেন এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ডা. ফাহিম হাসান রেজা। তত্ত্বাবধানে ছিলেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমান ও ড. মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন। এই দুজন এর আগে প্রতিষ্ঠানটির ভাইরোলজি বিভাগের গবেষক দলের নেতৃত্ব দেন।
প্রাপ্ত সিকোয়েন্স ডাটা জার্মানি থেকে প্রকাশিত ভাইরাসের আন্তর্জাতিক তথ্যভাণ্ডার সংস্থা গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটায় গৃহীত হয়েছে। গত শনিবার সকালে সংস্থাটি সিকোয়েন্সগুলো তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে।
সিকোয়েন্সিংয়ে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, আক্রান্ত শিশুদের ৮০ ভাগেরই বয়স ১০ বছরের নিচে। সর্বনিম্ন আট মাস বয়সের শিশুর মাঝে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট চিহ্নিত হয়েছে। এই গবেষক দলের অন্য এক গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বয়স্ক কোভিড-১৯ রোগীদের মাঝে ৮০ ভাগ রোগী পুরুষ হলেও শিশুদের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। মেয়ে শিশুরাও সমানভাবে এই ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হচ্ছে। ৫০ ভাগ ছেলে শিশু এবং ৫০ ভাগ মেয়ে শিশুর মধ্যে এই ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি দেখা গেছে। ৯৫ ভাগ শিশুর মাঝেই জ্বরের লক্ষণ এবং ৭০ ভাগ শিশুর সর্দি ও কাশি ছিল। একজন শিশু পুরোপুরি উপসর্গহীন ছিল বলে জানানো হয়।
এই কার্যক্রমে নেতৃত্ব প্রদানকারী জেনারেল হাসপাতালের ডা. হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, আমাদের গত চার মাসের পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, চট্টগ্রামে আলফা ও বিটা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপ ছিল মে মাস পর্যন্ত। কিন্তু জুন থেকে ৯০ ভাগ রোগীর মাঝেই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দেখা যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হচ্ছে, শিশুদের মাঝে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়া।
ডা. সঞ্জয় কান্তি বিশ্বাস বলেন, গত এক বছরে আমরা তেমন উল্লেখযোগ্য হারে শিশুদের মাঝে কোভিড-১৯ দেখতে পাইনি। কিন্তু গত জুন থেকে আক্রান্তের সংখ্যা ও তীব্রতা বেড়ে গেছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে পরিলক্ষিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ছোট শিশুরা নিজের অনুভূতি কিংবা দুর্বলতা প্রকাশ করতে না পারায় অনেককেই কোভিড টেস্ট বা শনাক্তকরণের আওতায় আনা যায় না, যা চিন্তার বিষয়ও বটে।
জেনারেল হাসপাতালের করোনা টিমের ফোকাল পারসন ডা. আব্দুর রব মাসুম বলেন, শিশুদের মাঝে কোভিড হওয়ার মাত্রা বেড়ে যাওয়া অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। সামনের দিনগুলোতে শিশুদের জন্য বিশেষায়িত নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রয়োজন বেড়ে যেতে পারে। ফলে শিশুদের নিয়ে এখন থেকে পরিবারের সবাইকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহার্ডওয়্যার দোকানে মিলল টিসিবির বিপুল পরিমাণ পণ্য
পরবর্তী নিবন্ধসিআরবি টাইগারপাস ইস্যুতে দুদকে অভিযোগ করবে বিএইচআরএফ