সাতকানিয়ায় দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে কেন্দ্রে এসে টেবিলের উপর পাতা বিছানায় বসে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়া মাকসুরাতুল জান্নাত জিপিএ–৪.০৮ পেয়ে পাস করেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েও বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মাকসুরাতল পাস করায় শিক্ষক, সহপাঠী ও পরিবারের সদস্যরা বেশ আনন্দিত।
মাকসুরাতুল জান্নাতের বাবা এওচিয়ার ছনখোলা এলাকার নুরুল মোস্তফা জানান, আমার মেয়ে এবারে সাতকানিয়া সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। উত্তর সাতকানিয়া জাফর আহমদ চৌধুরী ডিগ্রি কলেজে তার পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল। ইসলামের ইতিহাস দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা শেষে মেয়েকে সাথে নিয়ে যাত্রীবাহী পিকআপ যোগে বাড়ি ফিরছিলাম। পিকআপটি চট্টগ্রাম–কঙবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়াস্থ নয়াখাল এলাকায় পৌঁছার পর বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকের ধাক্কায় উল্টে যায়। এসময় মেয়ে গুরুতর আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে টানা একমাস বিশ্রামে থাকতে বলে। ডাক্তারের কথা মতো আমরাও তাকে বিশ্রামে থাকতে বলি এবং পরবর্তী পরীক্ষাগুলো দিতে নিষেধ করি। কিন্তু পরীক্ষা দিতে পারবে না শুনে মেয়ে কান্নাকাটি শুরু করে। এক পর্যায়ে মেয়ের ইচ্ছা শক্তির কাছে হার মেনে অ্যাম্বুলেন্সে করে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে বাধ্য হই।
গতকাল রেজাল্ট প্রকাাশিত হওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মাকসুরাতুল জান্নাত জানায়, আমি সকলের নিকট কৃতজ্ঞ। আমার প্রস্তুতি ভালো ছিল। দুর্ঘটনা পরবর্তী পরীক্ষাগুলোতে নম্বর একটু কম পেয়েছি। না হলে ফলাফল আরো ভালো হতো। তিনি জানান, আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করব। সুযোগ পেলে সেখানে ভর্তি হব। সুযোগ না পেলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্সে ভর্তি হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
উত্তর সাতকানিয়া জাফর আহমদ চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ অজিত কান্তি দাশ জানান, মাকসুরাতুল জান্নাত পাস করাতে আমি খুবই খুশি হয়েছি। অনেক কষ্ট করে সে পরীক্ষা দিয়েছে। মাকসুরাতুল একজন সংগ্রামী মেয়ে। সাতকানিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবু রায়হান মো. আশিকুর রহমান জানান, মাকসুরাতুল জান্নাত পাস করাতে আমরা খুবই আনন্দিত। সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার পরও সে থেমে যায়নি। জীবনে অনেকদূর এগিয়ে যাবে মেয়েটি।