অহংকারী রাজা

অনিন্দ্য আনিস | বুধবার , ১৭ মে, ২০২৩ at ৬:৪১ পূর্বাহ্ণ

হরিপুর রাজ্যের রাজা আলী জ্যাকসন। অহংকারী অত্যাচারী এক কথায় যাকে বলে নিষ্ঠুর মনের অধিকারী। রাজ্যের সাধারণ মানুষ খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছিল। সারাবছর রোদ বৃষ্টিতে ভিজে জমিতে ফসল ফলাত, সেই ফলস ঘরে তোলার আগেই রাজা আলী জ্যাকসন। ভয় ভীতি দেখিয়ে চার ভাগের তিন ভাগ ফলস নিয়ে আসত। এভাবে কাটছিল নিরীহ প্রজাদের দুঃখের দিন। দীর্ঘ এক যুগ পরে রাজা আলী জ্যাকসন এর পুত্র সন্তান পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে।

তাতে প্রজারা খুশি হওয়ার বদলে আরও নিরাশ হয়ে যায়। বাবার অত্যাচারে তাদের জীবন অতিষ্ঠ। এখন যদি বাবার মত ছেলে বদমেজাজি আর অহংকারী হয়। তাহলে তো এই রাজ্যে বসবাস করা তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়বে। এই বলাবলি করছে রাজ্যের সাধারণ মানুষ। একদিন কথাটা রাজার কানে পৌঁছায়। তাতে রাজা আরও ক্ষেপে যায়। রাজা আগের থেকে এখন দ্বিগুণ অত্যাচার শুরু করতে লাগল। আকাশের চাঁদ, তারা, রাত জাগা পাখিরাও এইসব দেখে কেঁদে ওঠে। কিন্তু নিষ্ঠুর রাজার মনে বিন্দুমাত্র মায়া হয় না। এই সাধারণ মানুষের প্রতি।

ধীরে ধীরে এই রাজ্য ছেড়ে মানুষ অন্য রাজ্যে চলে যেতে লাগল। এই রাজ্যে আগের মত পাখির কিচিরমিচির শব্দ কানে ভেসে আসে না। গাছপালা মরে যাচ্ছে। মরুভূমি মরুভূমি মনে হয়। নদীনালা শুকিয়ে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। রাজা আলী জ্যাকসন চিন্তায় পড়ে গেল। কেন এমন হচ্ছে? এই ভেবে কাটাচ্ছে দিনরাত। ক’দিন আগে আলী জ্যাকসন এর স্ত্রী রাণী ইমলা মারা গিয়েছে বড় অসুখে। ছেলের দেখভাল করার মতো ছিলো না কোনো আপনজন। নিজে দেখাশোনা করে। আলী জ্যাকসনের পুত্র আলভী জ্যাকসন। ক্রমে ক্রমে বেড়ে ওঠতে লাগল।

একদিন বাবাকে না বলে রাজপ্রাসাদের বাইরে যায়।

এক প্রজাপতির সাথে দেখা। কী চমৎকার! রঙে রঙ্গিন দেহখানি। প্রজাপতির পিছু পিছু ছুটে আর মিষ্টি করে বলে

প্রজাপতি প্রজাপতি

একটু খানি দাঁড়াও

কেমন করে রঙিন ডানা

হাওয়ার তালে নাড়াও?

প্রজাপতি পিছু ফিরে তাকায় না। বেশ কিছু পথ যাওয়ার পরে, ঘুরে দেখে রাজপুত্র তার পিছু পিছু ছুটছে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আর হাঁপাচ্ছে। প্রজাপতির মনে মায়া হলো।

থমকে গেল, সঙ্গে রাজপুত্র আলভী জ্যাকসন।

প্রজাপতি বলল

হাতে আমার নাইকো সময়

তোমায় দেওয়ার মত

ঝড়ের বেগে বলো তুমি

কথা আছে যত।

আলভী জ্যাকসন বলল আমি এই রাজ্যের রাজা আলী জ্যাকসন এর একমাত্র পুত্র। আলভী জ্যাকসন।তুমি অসাধারণ দেখতে। তুমি কোথায় পেলে এত সুন্দর ডানা! আমি তোমার মতো উড়ে বেড়াতে চাই। প্রজাপতি প্রতিউত্তরে বলে, ‘আমি জানি তুমি কে? তুমি যে এই রাজ্যের রাজা আলী জ্যাকসন এর পুত্র তাও জানি।

তুমি আলী জ্যাকসনের পুত্র বলেই কথা বলতে নারাজ। শুধু আমি না, কেউ তোমার সাথে কথা বলবে না। আলভী জ্যাকসন বিস্মিত হলো। তুমি কী বলছো? কথা বলবে না। মানে কী? প্রজাপতি এক কথায় বলল, ‘এটা তোমার বাবাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করো। তাহলে জানতে পারবে। এই বলে কোথায় মিলিয়ে গেল। আলভী জ্যাকসন আর দেখতে পেল না। মন খারাপ করে রাজপ্রাসাদে ফিরে গেলো।

প্রজাপতির কথা ঘুরেফিরে মাথায় আসছিল। মনে মনে ভাবছে বাবা কী করে জানে? আসলেই কী বাবা এই বিষয়ে জানে? এই ভাববে ভাবতে গেলো। সালাম দিয়ে বাবার সম্মুখীন দাঁড়ালো। রাজা আলী জ্যাকসন বলল, ‘পুত্র কিছু বলবা?সে বলল,’ আমি রাজপ্রাসাদের বাইরে গিয়েছিলাম সেখানে এক প্রজাপতির সাথে দেখা। সে আমার সাথে কথা বলতে নারাজ। আরও বলেছে এই রাজ্যের কেউই নাকি আমার সাথে কথা বলবে না। এর কারণ নাকি আপনি জানেন? আসলেই কী আপনি জানেন? রাজা আলী জ্যাকসন শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো। কিছু বলতে পারছেন না। মনে হচ্ছিল কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলছে।

সেনাপতি, রাজপুত্র আলভী জ্যাকসনকে বলল,’ তোমার বাবা অহংকারী আর বদমেজাজি রাজা। তোমার বাবা এই রাজ্যের মানুষদের অত্যাচার করেছে দিনের পর দিন। এই রাজ্যের মানুষের কষ্টের ফসল নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে লুটপাট করে নিজের কোষাগার ভরেছে। তাই বাধ্য হয়ে এই রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ অন্য রাজ্যে চলে গেছে। আগে কত সুন্দর ছিল এই রাজ্যের পরিবেশ। এখন মরুভূমি বললে চলে। এর জন্য দায়ী তোমার বাবা। তোমার বাবাকে সবাই ঘৃণা করে। এইজন্য কেউ আর কথা বলতে চায় না। তুমি এই রাজ্যের রাজুপত্র বলে তোমার সাথেও কথা বলতে চায় না। রাজপুত্র আলভী জ্যাকসন। সেনাপতির মুখে এইসব কথা শুনে। লাজলজ্জায় বাবার মুখের দিকে তাকায় না। বলতে লাগল,’ আপনি না রাজা? আপনার এমন কুরুচিপূর্ণ মনোভাব কেন? এই রাজ্যের নিরীহ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বদলে আপনি তাদের ঠকিয়েছেন।যা ক্ষমা পাওয়ার অযোগ্য।

আমি কোন মুখ নিয়ে এখন সাধারণ মানুষের সামনে দাঁড়াব! রাজা এতো দিনে বুঝতে পেরেছে। যতই ধনসম্পদ থাকুক না কেন? একা একা উপভোগ করার মধ্যে জীবনের প্রকৃত সুখ পাওয়া যায় না। সকল মানুষের সুখে দুখে পাশে থেকে, মুখে হাসির ফুটাতে পারলে প্রকৃত সুখ খোঁজে পাওয়া যায়। নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত। রাজা হয়েও রাজ্যের সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। নিজের ভুলের জন্য। সাধারণ মানুষ ক্ষমা করে দিয়ে বুকে টেনে নিল। অহংকারী আর অত্যাচারী রাজা আলী জ্যাকসন। এখন সাধারণ মানুষের মতো জীবন অতিবাহিত করছে। এই রাজ্যের মানুষ আলী জ্যাকসন এর এই পরিবর্তন দেখে ভীষণ খুশি। তাদের মনে এখন আর কোনো দুঃখ নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকি ছু জা না কি ছু অ জা না
পরবর্তী নিবন্ধনন্দীরহাট রামঠাকুর ধামের উৎসব শুরু কাল