অসামপ্রদায়িক কবি কাজী নজরুল ইসলাম

প্রতিমা দাশ | মঙ্গলবার , ৩০ মে, ২০২৩ at ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

সাম্যের কবি, দ্রোহের কবি যৌবনের কবি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের বাঙালির প্রতিটি অধ্যায়ে জনসংস্কৃতিতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তাঁর গান কবিতা গজল বাঙালির রাজপথ থেকে শুরু করে যুদ্ধ এবং সমস্ত উৎসবে পর্যন্ত সমান জনপ্রিয়। বৃটিশঅত্যাচারে অতিষ্ঠ বাঙালির কাছে তখন আকাঙ্ক্ষার মূর্ত হয়ে উঠেছিলেন নজরুলের রণ সঙ্গীত। এ সঙ্গীতের এমনই এক শক্তি যেন বাঙালির ভিতর থেকে রণ সূর্যের তেজ এনেছে। আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহের গান কবিতা রণসঙ্গীত ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে বাঘের গর্জনের মতো এক মানসিক শক্তি। ধর্মীয় আনন্দে কাজী নজরুল ইসলামের গান ছাড়া টিভি কিংবা বেতারে ঈদের উৎসব হয় না। তাই তো তিনি লিখেছেন ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। ইসলামী সংগীতে কাজী নজরুল ইসলামের রচিত নাতে রাসুলের প্রতি বিনম্র প্রেম ছাড়া বাঙালি মিলাদ মাহফিল হয় না। তিনি লিখেছেন ‘মোহাম্মদের নাম জপেছিলি বুলবুলি তুই আগে /তাই কিরে তোর কন্ঠের গান এমন মধুর লাগে’

আর হিন্দু সমপ্রদায়ের জন্য শ্যামা সংগীত, ভজন, কীর্তনের বিশাল সম্ভারে পরিপূর্ণ করে গেছেন। যেমন তিনি শ্যামা মায়ের জন্য লিখেছেন’ আমার কালো মেয়ে রাগ করেছে কে দিয়েছে গালি, রাগ করে সেই সারা গায়ে মেখেছে তাই কালি ‘এমন অসংখ্য শ্যামা সংগীত লিখে গেছেন। তিনি ভজন সংগীত লিখেছেন, ওরে নীল যমুনার জল, বলরে মোরে বল ওরে ঘনশ্যাম, আমার কৃষ্ণ ঘনশ্যাম।

এছাড়াও তাঁর বিশাল সাহিত্য ভাণ্ডারে শিশুকিশোরদের ও বঞ্চিত করেননি। তাঁর রচিত ছড়া কবিতাগুলো আনন্দ পরিতৃপ্তি নিয়ে আজও মঞ্চে আবৃত্তি করে শিশুকিশোররা।

শিশুদের শৈশবের রংগুলোকে তিনি প্রজাপতির পাখার সাথে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন ‘প্রজাপতি প্রজাপতি কোথায় পেলে এমন রঙিন পাখা’ কৈশোরের ফল চুরির আনন্দ নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘বাবুদের তাল পুকুরে, হাবুদের ডাল কুকুরে’ ছোট ছোট মিষ্টি খুকুমণিদের জন্য লিখেছেন ‘ভোর হলো দোর খোলো খুকুমণি ওঠো রে’। একজন বাঙালি কবির বোধের জগৎ কতোটা আলোরিত হলে তিনি সকল ধর্মের মানুষের জন্য প্রার্থনায় নিজেকে উজাড় করে দেন। তিনি শুধু বিদ্রোহী কবি নন তিনি প্রেমের কবিও বটে, তাইতো তিনি তাঁর প্রিয়ার উদ্দেশ্যে লিখেছেন ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রানী, দেবো খোঁপায় তারার ফুল’ ‘প্রিয় যাই যাই বলো না’। তাঁর লেখার এমনই এক শক্তি প্রেমে ভালোবাসায় মানবতায়, দ্রোহে বিপদেআপদে উৎসবে সংগ্রামে তাঁর সাহিত্যের সৃষ্টিকর্ম আজও প্রাসঙ্গিক করে রেখেছে আমাদের কাছে। যেখানে শোষণ উৎপীড়ন বঞ্চনা ধর্মান্ধতা সাম্রাজ্যবাদ জেগে উঠবে সেখানেই আমাদের বিদ্রোহী কবির লেখনী বুলেটের মতো জ্বলে ওঠে। তাঁর শক্তিশালী লেখনীর মাধ্যমে একটা অসামপ্রদায়িক মানবিক সমাজ গড়ে তোলার তাগিদ দিয়ে গেছেন বারবার। বাঙালি জাতির সাহিত্য ভাণ্ডারে বিশাল সম্পদ কাজী নজরুল ইসলামের সমস্ত রচনাবলীকে আরো বেশি করে চর্চা করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন জরুরি
পরবর্তী নিবন্ধযে সয়, সে রয়