অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে

বিনিয়োগ

| শনিবার , ৩০ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ

সরকারের নীতিনির্ধারকেরা সম্প্রতি দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে কেন বিনিয়োগ করবেন, মন্ত্রীরা তারও একটা ধারণা দিয়েছেন। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে এসব তথ্য জানা যায়। ২৬ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সপ্তাহব্যাপী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রীরা জানান, এখানে বিনিয়োগের সুন্দর পরিবেশ রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন জানান, বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন। কৃষি খাত শক্ত অবস্থানে রয়েছে। সরকার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছে। প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো। তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের অর্জন অভাবনীয়। সারা দেশে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন দৃশ্যমান। সারা দেশে সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে, ২৮টি হাইটেক পার্ক হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ বিরাজমান। তিনি বলেন, এখানে বিনিয়োগ করবেন, আপনি বিজয়ী হবেন। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, গত এক দশকে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। মাথাপিছু জাতীয় আয় ২ হাজার ২০০ ডলারের বেশি। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হচ্ছে। করোনা মহামারির মধ্যে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে ৫ শতাংশের ওপরে। এসব চিত্র তুলে ধরে বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান জানান, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে যেখানে সংস্কার দরকার, সরকার সেসব জায়গায় সংস্কার করেছে। আগের চেয়ে দেশে বিনিয়োগ পরিবেশ অনেক ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি। অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে। ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান জানান, অর্থনীতির প্রাণ হলো বেসরকারি খাত। করোনার মধ্যেও বাংলাদেশে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এ অর্জন সম্ভব হয়েছে বেসরকারি খাতের অবদানে।
এদিকে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) বলেছে, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য সাতটি খাতে উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। খাতগুলো হলো পরিবহন ও লজিস্টিকস, জ্বালানি, আর্থিক সেবা, হালকা প্রকৌশল, কৃষি বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসেবা এবং ওষুধ। বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে কিছু খাতে সংস্কারের পরামর্শও দিয়েছে আইএফসি। এগুলো হলো স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীর জন্য সহায়ক বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টি; আর্থিক খাতের আধুনিকায়ন ও সমপ্রসারণ; অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা দূর করা।
এ কথা বলা বাহুল্য যে, আধুনিক বিশ্বে কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈদেশিক বিনিয়োগের গুরুত্ব অপরিসীম। অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গত চার বছরে বাংলাদেশে এক হাজার ১০০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের মতো নিম্ন আয়ের দেশের জন্য এটি কম নয়। বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপিতে বৈদেশিক বিনিয়োগের অবদান ১ শতাংশের কাছাকাছি। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের এফডিআই যদি ৫ থেকে ৬ শতাংশে উন্নীত করা যায়, তাহলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ১০ শতাংশ। সুযোগও রয়েছে বাংলাদেশের সামনে।
দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সেবা দেওয়ার সাথে সাথে নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে দ্রুত গতিশীল করতে বিশেষত শিল্পায়নকে শক্তিশালী করতে সরকার বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে একটি উন্মুক্ত নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ কর্তৃপক্ষ (বেপজা) দেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকায় বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা ও শিল্প স্থাপনে বিভিন্ন সহায়তা প্রদানে দায়িত্ব পালন করছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পেরেছে এবং তাদের আস্থা অর্জনে সফল হয়েছে। জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সহায়ক ও আকর্ষণীয় প্রস্তাবসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। টেক্সটাইল, চামড়াজাত সামগ্রী, ইলেকট্রনিক্স দ্রব্য, রাসায়নিক ও পেট্রোকেমিক্যাল, কৃষি ভিত্তিক শিল্প, কাঁচা পাঁ, কাগজ, রেশম শিল্প, হিমায়িত খাদ্য (বিশেষত চিংড়ি), পর্যটন, কৃষি, ক্ষুদ্র শিল্প, সফটওয়্যার ও ডাটা প্রসেসিং এর মতো রপ্তানীমুখী শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের সুযোগ অনেক। সামপ্রতিককালে বাংলাদেশ সরকার বেসরকারি বিনিয়োগে একটি সহায়ক ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নীতির ক্ষেত্রে বেশ কিছু পুরাতন ব্যবসার সংস্কার করেছে। দেশে বিনিয়োগ ও টেকসই উন্নয়নের জন্য সহায়ক স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজমান। বিনিয়োগের উজ্জ্বল পরিবেশ আমাদের ধরে রাখতে হলে অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে