অনুকূল আবহাওয়া, আবারও পুরোদমে লবণ চাষ শুরু

২ দিনে ২৫ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন

আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার | বৃহস্পতিবার , ২৮ মার্চ, ২০২৪ at ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

কয়েকদিন আগে বৃষ্টিপাতের কারণে উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হলেও এখন অনুকূল আবহাওয়ায় কক্সবাজারের উপকূলীয় ৭ উপজেলা এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও পটিয়াতে পুনরায় পুরোদমে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। গত ২০ ও ২১ মার্চ হালকা বৃষ্টিপাতের কারণে লবণ উৎপাদন ব্যাহত হলেও ২২ মার্চ থেকে আবারও লবণ উৎপাদনে নামে চাষিরা। এরপর ২৪ মার্চ থেকে আবারও সুবাতাস বইছে লবণ উৎপাদনে। ইতোমধ্যে দেশে লবণ উৎপাদন সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বিসিক।

বিসিকসূত্র মতে, চলতি মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন। গত ৩০ অক্টোবর বাঁশখালীতে চলতি মৌসুমের প্রথম লবণ উৎপাদন শুরু হয় এবং এরপর ধীরে ধীরে কক্সবাজারের চাষিরাও লবণ উৎপাদনে নামেন। গত ২৩ মার্চ পর্যন্ত বিসিকের সর্বশেষ তথ্য মতে, দেশে মোট ১২ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। তবে গত ২৪ ও ২৫ মার্চ ২ দিনে আরো ২০ থেকে ২৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে বলে ধারণা করছেন কক্সবাজারস্থ বিসিক লবণ কেন্দ্রের উপমহাব্যবস্থাপক ড. জাফর ইকবাল ভূইয়া।

তিনি বলেন, লবণ সেক্টরের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সুনজর থাকায় গত কয়েক মৌসুম ধরে লবণের ভাল দাম পাচ্ছে চাষিরা। ফলে একদিকে লবণ চাষের জমি বাড়ছে, অন্যদিকে বাড়ছে একর প্রতি লবণ উৎপাদনের হারও।

বিসিক জানায়, ২০২১২২ মৌসুমে দেশের প্রায় ৬৩ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণের চাষ হয়। আর গত মৌসুমে (২০২২২৩) লবণের চাষ হয়েছে ৬৬ হাজার ৪২৪ একর জমিতে। ওই মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন এবং উৎপাদিত হয়েছে ২২ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন। অথচ এর আগের মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদনের টার্গেট ছিল ২৩ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। আর উৎপাদন হয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন।

. জাফর ইকবাল ভূইয়া বলেন, গত মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদন অতীতের ৬২ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। একসময় দেশে সনাতন পদ্ধতিতে লবণের চাষ হত। এখন মাঠে পলিথিনের সাহায্যে আধুনিক প্রযুক্তিতে লবণের চাষ করা হচ্ছে। সেই সাথে আরো উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে লবণ উৎপাদন করে দেশে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে কুতুবদিয়ার লবণ চাষিরা। সনাতনী পদ্ধতিতে নদনদীর পানি দিয়ে লবণ উৎপাদনের চেয়ে এ নতুন পদ্ধতিতে নলকূপ বসিয়ে অনেক কম খরচে ও আগের চেয়ে ৩০%-৫০% বেশি লবণ উৎপাদন করা যাচ্ছে। ফলে চলতি মৌসুমেও কুতুবদিয়ার দুটি ইউনিয়নে এ পদ্ধতিতে ব্যাপকভিত্তিতে লবণ চাষ শুরু হচ্ছে। দেশে লবণ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য উপকূলজুড়ে এ নতুন পদ্ধতির লবণ চাষকে উৎসাহিত করতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কুতুবদিয়ার লবণ চাষিদের বিনামূল্যে সোলার সিস্টেম দেওয়া হচ্ছে।

গত মৌসুমে কক্সবাজারের সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও পটিয়া উপজেলার অন্তত ৩৯ হাজার ৪৬৭ জন চাষি ৬৬ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণের চাষ করেন। তবে চলতি মৌসুমে মোট জমি পরিমাণ ও চাষির সংখ্যা এখনও জরীপ করা হয়নি বলে জানান বিসিক লবণ কেন্দ্রের উপমহাব্যবস্থাপক জাফর ইকবাল ভূইয়া।

লবণ চাষিরা বলছেন, লবণ উৎপাদনের মৌসুম সাধারণত ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ৬ মাস সময় ধরা হলেও আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাতের কারণে উৎপাদনকাল কমবেশি হয়। তবে মূলত ফাল্গুন, চৈত্র ও বৈশাখ মাসেই বেশি লবণ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে বৈশাখ মাসের তীব্র গরমে অন্য মাসের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ লবণ উৎপাদন হয়। পুরো বৈশাখ মাস আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দেশের লবণ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআনোয়ারায় অস্ত্রের মুখে খামারির ৯টি গরু লুট মারধরে আহত কর্মচারী
পরবর্তী নিবন্ধরামুতে সাড়ে ৭ কোটি টাকার আইস উদ্ধার