অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন

| শুক্রবার , ৯ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেই আমাদের রাজনীতির মাঠ সরগরম হয়। কোথাও কোথাও সংঘাত তৈরির আশংকা সৃষ্টি হয়। ঠিক সেভাবে এখন নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। শুরু হয়েছে সভা-সমাবেশের আয়োজনের প্রতিযোগিতা। বিভাগীয় সমাবেশ সামনে রেখে ঢাকার নয়াপল্টনে জড়ো হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ওই এলাকা রণক্ষেত্রের রূপ নেয় গত বুধবার। সংঘর্ষের মধ্যে আহত এক বিএনপি কর্মী হাসপাতালে মারা গেছেন বলে আজাদী পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে। সংঘর্ষের পর দলটির কার্যালয় ঘিরে রাখে পুলিশ। সেখান থেকে বিএনপির কয়েক ডজন নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপিকর্মীরা তাদের কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন।

বিপুল সংখ্যক পুলিশও সতর্ক অবস্থায় ছিল আশপাশের সড়কে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে বিকেল ৩টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পুলিশ ধাওয়া দিলে বিএনপি কর্মীরা ঢিল ছুড়তে শুরু করে। পুলিশ তখন রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সোয়াট সদস্যদেরও দেখা যায় সেখানে।

আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। সরকার ও বিরোধী দল বিপরীত অবস্থানে। ১০ ডিসেম্বরের বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে শাসক দল, বিএনপি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাল্টাপাল্টি অবস্থানে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। এ বিষয়ে উদ্বেগ বাড়ছে বিভিন্ন মহলেও। কয়েকদিন আগে পত্রিকান্তরে নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আমরা চিন্তিত। এমনিতেই অর্থনীতি ঝুঁকিতে আছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হবে। আমরা মনে করি, আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান বের হবে। যদি দেশে সত্যি সত্যি কোনো সংঘাত দেখা দেয়, বিদেশি ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নেবে। আগে যেমন আমরা সস্তায় পণ্য সরবরাহ করতে পারতাম। এখন ভারত ও পাকিস্তানও সেটি করছে। অনেক ক্রেতা সেখানে চলে গেছে।

রাজনৈতিক সংঘাত হলে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ আরও কমে যাবে। ছোট ও মাঝারি শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। বেকারত্ব বাড়বে। অতীতেও রাজনীতিকেরা ব্যবসায়ীদের কথা শোনেননি। এবারও শুনবেন বলে মনে হয় না। তবে আমরা আমাদের সমস্যার কথা বলতে পারি। রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। রাজনৈতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমস্যা সমাধানে সরকারের ভূমিকাই মুখ্য। ব্যবসা-বাণিজ্য সুরক্ষার পাশাপাশি নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। সংঘাত এড়াতে বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করা উচিত তাদের।

বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এ অবস্থায় কোনো পক্ষকে সংঘাতকে ‘ওয়েলকাম’ করলে সেটি কারও জন্য ভালো হবে না। এক পক্ষ বলছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। অপর পক্ষ বলছে, রাস্তায় থাকবে। এ অবস্থায় সংঘাত অনিবার্য। মনে রাখতে হবে, বিদেশি ব্যবসায়ীরা কিন্তু কোনো ঝুঁকির মধ্যে ব্যবসা করতে আসবেন না। যখন সরকার ও বিরোধী দল সংঘাতের অবস্থানে চলে যায়, তখন তার প্রভাব-প্রতিক্রিয়া কেবল দেশের মধ্যেই থাকে না, বাইরেও চলে যায়।

আমাদের মনে রাখা দরকার যে, উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে স্থিতিশীল পরিবেশ। দেশে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক সংঘাত সহিংসতা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়-তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমাদের বড় দলগুলোর দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের উচিত আলোচনা করে উদ্ভূত নির্বাচনী সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করা। নাগরিক সমাজও শান্তিপূর্ণ উপায়ে নির্বাচনী সংকটের সমাধান চায়।

তারা বারবার হোঁচট খেলেও এখনো আশাবাদী। দেশ ও মানুষের কল্যাণ এবং সামগ্রিক সমৃদ্ধির প্রশ্নে, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়নও জরুরি। একইসঙ্গে প্রত্যেক দলের একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রেখে রাজনৈতিক দলগুলো দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করবে এমন প্রত্যাশা জনসাধারণের। কিন্তু কোনোভাবেই সংঘাত ও সহিংসতার মতো ঘটনা কারো কাম্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে