অনন্ত যাত্রা

জেসমীন জেসী | রবিবার , ২৩ মে, ২০২১ at ৭:২৯ পূর্বাহ্ণ

মহামারির দাপুটে চেহারা মলিন হবে একদিন
সুপ্তিতে মিলাবে তার অগ্নিমূর্তি।
মহাকালের শুরু থেকে…
অন্তরীক্ষে তারার মিছিল, বনে- কাননে ফুলের সুরভি,
বাঁধনহারা পাখির কুহুতান, চন্দ্রের সমুদ্রটান, ডান থেকে
বামে ঘুরতে থাকা ঘড়ির কাঁটা… সবই চলছে অবিরাম।

হয়ত নিঃশেষের পথে মানবীর দেহ ঘড়ির ঘূর্ণন
রয়ে যাবে চেরাগীর মোড় কিংবা প্রেসক্লাবের সম্মুখের
মানববন্ধন, জেগে ওঠা তারুণ্যের প্রদীপ্ত প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর।
বছর ঘুরে আসবে বৈশাখ, আসবে বসন্ত।
ডিসি হিল আর শিরিষতলায় লালপেড়ে সাদা শাড়ি,
কিংবা হলুদাভ শাড়িতে রমনীর উচ্ছলতা,
মাথায় ঘাসফুল আর বর্ণিল ফুলের টায়রা কিংবা
খোঁপায় গোঁজা গাজরা শোভিত হবে।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখা–
সেগুনের মগডালের মরা-শুকনো ফুলের গুচ্ছ
নিয়ে কাকদের বাসা কুড়োনো,
কুহু কুহু ডাকা কোকিলের সেই বাসাতে চুপিসারে
ডিম রেখে যাওয়া,
আলো ফোটার ক্ষণে দোয়েলের মিষ্টি সুর,
প্রজাপতির নাচানাচি, কাঠবিড়ালির ছুটোছুটি,
ঝিরিঝিরি বাতাস, ঝুপ ঝুপ বৃষ্টির উদামতা-
সবই চিরবহমান।

মৃত্যু নিগূঢ় রহস্যময়, কিন্তু চরম সত্য
তা জেনেও বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যথা হয়।
কালে কালে জন্ম হবে, মৃত্যু হবে
এই চিরন্তন এক মহাসত্য।
তবুও কষ্ট হয় ভেবে, বাঁচতে ইচ্ছে করে।
এই কাক, কোকিল, ফুল, বৃষ্টি
তরুণ-তরুণীর উচ্ছলতা, সহাস্যমুখ…
দেখার এই সাধ মৃত্যুহীন।
চলে যাব অসীমে, চলে যেতে হয়…
তবুও নিলোর্ভহীন মন কেঁদে যায় বিচ্ছেদ-বেদনায়।

বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা মুগ্ধ দুটি নয়ন
মহাযাত্রায় বিলীন হয়ে যাবে অতীত।
কালের গর্ভে হারিয়ে যায় পুরনো, আবির্ভাব হয় নতুনের।
নতুন কোনো মুগ্ধতার চোখ, নতুন কোনো অনুভবের নেশা
বারান্দায় দাঁড়িয়ে জাগাবে নব শিহরণ।
কেবল আমি অনন্ত যাত্রার পথিক
নিঃশেষের প্রাণে তবু ব্যথা জাগে, তবু বিষাদে ভরে
বাঁচতে ইচ্ছে করে ভীষণ
ভালোবাসার পৃথিবীর এ আকর্ষণ আমার অনিঃশেষের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশব্দ শ্রমিক
পরবর্তী নিবন্ধন মানুষ