অঝোর ধারায় বইছে আল্লাহর করুণাধারা

আ ব ম খোরশিদ আলম খান | বৃহস্পতিবার , ৬ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

মাহে রমজান খোদায়ী অনুগ্রহ ও করুণাধারায় মানবতার পুণ্যসিক্ত ও সমৃদ্ধ হওয়ার মাস। আল্লাহর সঙ্গে বান্দার দূরত্ব ঘুচে যায় এ মাসে। স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে সেতুবন্ধের নূরছটায়আলোকমালায় দুনিয়ায় অঝোর ধারায় নামে রহমতের বারিধারা। আল্লাহর ডাকে নিষ্ঠার সাথে সাড়া দেয়া মানুষের সৌভাগ্য ও শান্তি নিশ্চিত হয় রমজানে। মাহে রমজান বান্দাহর প্রতি স্রষ্টার এক বড় অনুগ্রহ। পাপতাপে দগ্ধ মানুষের করুণাসিক্ত হওয়ার বিরাট সুযোগ ঘটে এ মাসে।

মুসলমানদের পাপে ভরা মৃত জীবনবৃক্ষ যেন আবার সজীব হয়ে ওঠে এ রমজানে খোদায়ী রহমতের বারিধারায়। ফরজ রোজাসহ তারাবিহ, সেহরি, ইফতার, নফল নামাজ ও দানখয়রাতের মাধ্যমে পুণ্যের যে ধারা প্রবাহিত হয় তাতে বান্দাহর আমলনামা পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। রোজাদারের ধ্যানেচিন্তায়, মননেকর্মক্ষেত্রে অনুকূল পরিবর্তন আসে। উচ্ছ্বসিত মন বারবার পুণ্যের হাতছানি দিয়ে ডাকে। আর তাই তো প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাছের সঙ্গে পবিত্র রমজান মাসের রোজা রাখে এবং রাতে তারাবিহর নামাজও আদায় করে, তাহলে সে সকল পাপ থেকে এমনি পূতপবিত্র হয়ে যায়, যেমনি সদ্যপ্রসূত শিশু নিষ্কলুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করে থাকে।’ (নাসাঈ)

রমজান’ শব্দটির মধ্যেই লুকায়িত আছে এ মহান মাসের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য। সকল মহত্ত্বকেই যেন এ পরিপূর্ণ শব্দটি ধারণ করে রেখেছে অত্যন্ত চমৎকারভাবে। ‘রমজান’ শব্দটি ‘রমজ’ ধাতু থেকে উৎপন্ন। আর ‘রমজ’ শব্দের দুটো অর্থ আছে। এক. জ্বালিয়ে ফেলা, পুড়িয়ে ফেলা। যেহেতু এ মাসের সিয়াম সাধনা এবং সার্বিক ইবাদত রিয়াজত বান্দাহর চরিত্রের অবাঞ্ছিত দিককে জ্বালিয়ে একেবারে ছাই করে দেয়তাই এ মাসকে রমজান বলে। দুই. মরুদ্যানের আকস্মিক বৃষ্টিকেও ‘রমজ’ বলা হয়। এ বৃষ্টি মরুভূমির মানুষের দেহ মন আত্মা এবং সার্বিক পরিবেশকে যেমন সজীব করে তুলে ঠিক তেমনি রমজানও পাপ পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত মানব জীবনের মরুদ্যানে বয়ে আনে রহমতের প্রত্যাশিত বৃষ্টি। তাই একে ‘রমজান’ বলে। বাস্তবেই আমরা রমজানের দিনে আল্লাহর দয়া, অনুগ্রহ ও রহমতের বারিধারা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি উপলব্ধি করি। রমজান তাই মহিমান্বিত ও রহমতপূর্ণ। মানুষের সামগ্রিক জীবনে রোজার ইতিবাচক প্রভাব ক্রিয়াশীল। রোজার আধ্যাত্মিক ও সামাজিক তাৎপর্য অপরিসীম। ব্যক্তি চরিত্রের অনুকূল পরিবর্তনে ও অপরাধমুক্ত জীবন গঠনে রোজার প্রত্যক্ষপরোক্ষ ভূমিকা লক্ষণীয়। প্রকৃত রোজাদার অন্যের কল্যাণ প্রয়াসী হয়, ক্ষুধার অন্তর্জ্বালা অনুধাবন করে গরিবদুখীর পাশে দাঁড়ায়। একজন প্রকৃত রোজাদার কখনো অপরের ক্ষতি ও শান্তি নষ্ট করতে পারে না। যদি তার দ্বারা এমন কিছু ঘটে তবে সে রোজা অন্তঃসারশূন্য উপবাস ছাড়া কিছুই নয়। ওই পথ থেকে আল্লাহ পাক আমাদের রক্ষা করুন। পাপ তাড়না ও পাপাচার থেকে আত্মরক্ষায় সকলকে মহান প্রভুর কাছে মিনতি জানাতে হবে রোজার করুণা সিক্ত দিনগুলোতে। তবেই ক্ষমা ও পরিত্রাণ আশা করা যায়। পবিত্র কোরআনের নানাস্থানে মহান আল্লাহ পাক তাঁর সেরা সৃষ্টি মানবজাতিকে সৎকর্মের নির্দেশ দিয়েছেন। অসৎ, ক্লেদাক্ত পথ থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন নানা প্রসঙ্গে বহুবার। জোর দিয়ে এও নির্দেশ রয়েছে মানুষের প্রতিসৎ কাজ ও ইবাদত বন্দেগির প্রতিদান হচ্ছে করুণা প্রাপ্তি ও নিশ্চিতভাবে আল্লাহর রহমত। পৃথিবীতে মানুষের ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয় নিজেদের কাজ ও আমলের ভালমন্দ বিবেচনায়। মানুষেরা সৎকর্মশীল, সত্যনিষ্ঠ, কর্তব্যপরায়ণ ও সদাচারে অভ্যস্ত হলে পৃথিবীময় ঐশী অনুগ্রহ ও কল্যাণধারা বর্ষিত হয় অবারিত। আর অসৎ কর্মের প্রতিফল হচ্ছে দুঃখ, গ্লানি, বিপদদুর্দশা ও খোদায়ী গজব। আল্লাহ পাক বলেন, ‘জলে স্থলে যত বিপর্যয় তোমরা দেখ, তা তো তোমাদের দু’হাতের উপার্জন’ [কুরআন মজিদ]। এতে বুঝা যায় জগতে যত অশান্তি, হানাহানি, বিপর্যয় ও মানুষের দুঃখকষ্ট লেগে আছে সবই মানুষেরা নিজ নিজ কাজের প্রতিদান হিসেবে পেয়ে থাকে। আর সদাচার, সহানুভূতি, মানবতাবোধের চর্চায় শান্তি বয়ে চলে জগৎজুড়ে। বান্দাহ আল্লাহর প্রতি সমর্পিত হলে দুনিয়া হয়ে ওঠে পুষ্প উদ্যান, শান্তির ঠিকানা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাড়তি করের পরিবর্তে আদায় বৃদ্ধি চান মেয়র
পরবর্তী নিবন্ধঅগ্নিঝুঁকিতে নগরীর ছোট-বড় ২৯ মার্কেট