অগ্নিঝুঁকিতে নগরীর ছোট-বড় ২৯ মার্কেট

চার বছর আগে সতর্ক করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেই পানির রিজার্ভার ট্যাংক ও অগ্নি সরঞ্জাম রাখার পরামর্শ

জাহেদুল কবির | বৃহস্পতিবার , ৬ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:১৭ পূর্বাহ্ণ

নগরীর ছোট বড় ২৯ মার্কেট অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে প্রায় চার বছর আগে সতর্কীকরণ ব্যানার সাঁটিয়ে দেয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর চট্টগ্রাম। এসব মার্কেটের ব্যবসায়ীদের অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জাম কেনা ও ফায়ার লাইসেন্স নেয়ার জন্যও উদ্বুব্ধ করা হয়। কিন্তু এত বছর পেরিয়ে গেলেও সেই আগের অবস্থায় রয়েছে বলছেন ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। এমনকি সিংহভাগ ব্যবসায়ীর কাছে ফায়ার এক্সটিংগুইসার বা অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রও নেই।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের তালিকা তৈরি করার পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বারবার সেসব মার্কেটে ধরনা দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীদের চিঠি পাঠানোর পরেও কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাওয়া যায়নি। তারা বারবার উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তবে বর্তমানে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের যান্ত্রিক সক্ষমতা বেড়েছে। ইতিমধ্যে যুক্ত হয়েছে তিনটি টার্ন টেবিল লেডার (টিটিএল)। এই গাড়িগুলোতে দীর্ঘ একটি মই থাকে। এই মইয়ের মাধ্যমে ১৭ তলা থেকে সর্বোচ্চ ২০ তলা ভবন পর্যন্ত পানি ছিটানো সম্ভব হবে। এছাড়া রাসায়নিক অগ্নিকাণ্ড নির্বাপনে রয়েছে দুটি বিশেষায়িত গাড়ি। এরমধ্যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। যার মাধ্যমে কাছ থেকে ফোম দিয়ে আগুন নেভানো সম্ভব। এছাড়া ২১ হাজার লিটার পানির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন আরেকটি বিশেষায়িত গাড়িও যুক্ত রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের বহরে।

ফায়ার সার্ভিসের তালিকাভুক্ত অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ২৯ মার্কেটের মধ্যে রয়েছেকালুরঘাট ফায়ার স্টেশন এলাকার হক মার্কেট, স্বজন সুপার মার্কেট, বখতেয়ার মার্কেট, নজু মিয়া মার্কেট ও বলির হাট মার্কেট। লামা বাজার ফায়ার স্টেশন এলাকার ভেড়া মার্কেট, চাউলপট্টি, শুঁটকি পট্টি, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, মিয়া খান নগর পুরাতন জুট মার্কেট এবং ওমর আলী মার্কেট অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ। বন্দর ফায়ার স্টেশন এলাকার পোর্ট মার্কেট, বড়পুল বাজার, ইশা মিস্ত্রি মার্কেট, ফকির হাট মার্কেট, নয়া বাজার মার্কেট ও ফইল্লাতলি বাজার। ইপিজেড ফায়ার স্টেশন এলাকার চৌধুরী মার্কেট ও কলসি দীঘির পাড় এলাকাধীন মার্কেট। চন্দনপুরা ফায়ার স্টেশন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের তালিকায় রয়েছে চক ভিউ সুপার মার্কেট, কেয়ারি শপিং মল ও গোলজার মার্কেট। এছাড়া নন্দনকানন ফায়ার স্টেশন এলাকার মধ্যে রিয়াজউদ্দিন বাজার, জহুর হকার্স মার্কেট, টেরি বাজার ও তামাকুমন্ডি লেইন। অপরদিকে আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশন এলাকায় রয়েছে সিঙ্গাপুর সমবায় মার্কেট এবং কর্ণফুলী মার্কেট। তবে বায়েজিদ ফায়ার স্টেশন এলাকাতে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় কোনো মার্কেট নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অগ্নিনিরাপত্তায় দেশের নাগরিকরা খুব বেশি সচেতন নন। ফলে অগ্নিদুর্ঘটনায় আমাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও খুব বেশি হয়। প্রায় আবাসিক ভবন ও বাণিজ্যিক ভবন আইন মেনে নির্মিত হচ্ছে না। গলিগুলো অত্যন্ত সরু। এসব সরু গলিতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশও অসম্ভব। এছাড়া পুকুর কিংবা জলাধার ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে দেখে থাকা ছাড়া আর কিছুই যেন করার থাকবে না। তাই অগ্নিনিরাপত্তা আইন মেনে প্রত্যেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ফায়ার এঙটিংগুইসার রাখতে হবে। পাশাপাশি আগুন নেভাতে শপিং সেন্টারগুলোতে স্বয়ংসম্পূর্ণ অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা থাকা, জরুরি প্রস্থানের সিড়ির সংখ্যা ও ছয় তলার ওপরে প্রতি তলায় সেফটি লবির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে বৈদ্যুতিক তারে কনসিল ওয়্যারিং থাকা, বৈদ্যুতিক মেইন সুইচ বঙ ও ডিমান্ড বঙে নিরাপদ অবস্থানে থাকা এবং স্মোক ও হিট ডিটেক্টর রাখা এবং মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মীদের নিয়মিত অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।

নগরীর জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সদস্য সচিব মো. ফজলুল আমিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, জহুর হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীদের আমরা বিভিন্ন সময় ডেকে ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনার কথা জানিয়েছি। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আমাদের এখানে মহড়া দিয়েছে বিভিন্ন সময়। আমরা আবারও বলবযাতে যারা অগ্নিনিরপত্তা সরাঞ্জাম এবং লাইসেন্স যারা নেননি তারা যেন নিয়ে নেন।

টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমদ হোসাইন বলেন, অগ্নিনিরাপত্তার জন্য আমরা ব্যবসায়ীদের কিছু নির্দেশনা দিয়েছি। দোকান বন্ধ করার সময় যাতে বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া রিজার্ভার ট্যাংকে যাতে পর্যাপ্ত পানি রাখা হয়। আজকে (গতকাল) আমাদের মার্কেটে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসেছে। তারা আমাদের ফায়ার সরাঞ্জাম কেনাসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা সেগুলো মাইকে প্রচার করছি।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক এমডি আবদুল মালেক দৈনিক আজাদীকে বলেন, নগরীর অনেকগুলো মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে অনেক আগে। আমরা তাদের নোটিশ দিয়েছি, সতর্ক করেছি। কারণ বেশিরভাগ মার্কেটের গলিগুলো অনেক সরু। সেখানে কোনো অবস্থাতেই ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের সুযোগ নেই। আমরা তাদের গাড়ি প্রবেশের মতো গলি রাখতে বলেছি। এছাড়া বৈদ্যুতিক ত্রুটিপূর্ণ ওয়্যারিং আছে সেগুলো মেরামত করতে বলেছি। সবচেয়ে বড় সমস্যা পানির উৎস না থাকা। ব্যবসায়ীরা চাইলে একটি বড় পানির রিজার্ভার ট্যাংক তৈরি করে সেখানে পানি স্টক রাখতে পারেন। অগ্নিদুর্ঘটনা হলে আমরা সেখানে পাম্প লাগিয়ে সহজে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি। তাই বিষয়টি আমরা ব্যবসায়ীদের জানিয়েছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅঝোর ধারায় বইছে আল্লাহর করুণাধারা
পরবর্তী নিবন্ধগার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন ১০ এপ্রিল, বোনাস ঈদের আগে