‘হালদায় লবণাক্ততা পানি ছড়িয়ে পড়ায় পুরোদমে ডিম ছাড়েনি মা মাছ’

মো. হাবিবুর রহমান, রাউজান | মঙ্গলবার , ২৮ মে, ২০২৪ at ১০:১২ অপরাহ্ণ

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদায় কার্প–জাতীয় মা মাছ (রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস) দ্বিতীয় দফায় নমুনা ডিম ছেড়েছে।

আজ মঙ্গলবার বিকালে ও তার আগের দিন সোমবার জোয়ারের পানিতেও মিলেছে নমুনা ডিম। তবে হালদায় লবণপানি প্রবেশ করায় মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়েনি বলে জানিয়েছে ডিম সংগ্রহকারীরা।

তারা বলছেন, ‘জোঁ না থাকলেও অমাবস্যা বা পূর্ণিমার জো’র সময় যেভাবে পানি বৃদ্ধি পায় একইভাবে টানা বর্ষণ ও ঘূর্ণিঝড়ের জলোচ্ছ্বাস এবং পাহাড়ি ঢলে পানির পরিমাণ ছিল বেশি। মিঠাপানির নদী হালদার পানি মুখে নিয়ে লবণের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে।

লবনাক্ততা ছড়িয়ে পড়ায় নমুনা ছাড়ার পর পুরোদমে ডিম ছাড়েনি মা মাছ।’ জোয়ারের পানির সঙ্গে সাগরের লবণপানি প্রবেশ করে লবণাক্ততা ছড়াতে পারে বলে জানিয়েছেন রাউজান উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন।

তবে পানি পরিক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া লবণাক্ততার আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মঙ্গলবার নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট পরিদর্শনে দেখা যায়, নদীর বাঁকগুলোতে ডিম আহরণকারীরা নৌকা ও বাঁশের ভেলা নোঙর করে জাল ফেলে বসে আছেন।

কয়েকঘন্টা পর পর জাল তুললে মিলছে নমুনা ডিম। তাবে ডিম আহরণকারীদের প্রত্যাশা ছিল পুরোদমে ডিম ছাড়বে। যেহেতু ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর প্রভাবে এখনো জোয়ারের সময় পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে সেহেতু এখনও তারা আশা ছাড়েনি।

নদীর হাটহাজারী ও রাউজান অংশের বেশি কয়েকটি পয়েন্টে নমুনা ডিম পাওয়া গেছে। পরিমাণ ছিল অনেক কম। ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পানি বেড়ে যায়। তবে জোয়ার ভাটা পড়ার পর নদীতে স্রোত সৃষ্টি হলে নমুনা ডিম ছাড়তে শুরু করে মা মাছ।

এর আগে থেকে হালদা নদীর রাউজান ও হাটহাজারী অংশের পাঁচ শতাধিক ডিম সংগ্রহকারী নৌকা জাল ও ডিম সংগ্রহের সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত ছিল। সংশ্লিষ্ট কৃর্তপক্ষের দাবি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশে এবার তাপমাত্রা বাড়ার রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে। পাশাপাশি কিছুটা লবণাক্ততা বেড়েছে। এত তাপমাত্রায় মানুষের মতো মাছের উপরও প্রভাব পড়ে।

হালদায় কার্প জাতীয় মা মাছেরা ডিম দেওয়ার জন্য অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জো এবং বজ্রসহ বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের জন্য অপেক্ষা করেন ডিম সংগ্রহকারীরা। গতবারের মতো এবার প্রজনন মৌসুমের দেড় মাসজুড়েই এসবের কিছুই ঘটেনি। ফলে মা মাছেরা ডিম ছাড়তে দেরি করে। বজ্রবৃষ্টি, পাহাড়ী ঢলে পরিবেশ সৃষ্টি হলে আগামী অমাবস্যা বা পূর্ণিমার জোতে ডিম ছাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। উপজেলা মৎস্য বিভাগের সূত্র মতে, প্রতিবছর হালদা নদীর রাউজান ও হাটহাজারী অংশের দুই পাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ ডিম সংগ্রহকারী মা মাছের নিষিক্ত ডিম ধরার অপেক্ষায় থাকেন। তবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে গত কয়েক বছর ডিমের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় ডিম সংগ্রহকারীর সংখ্যা কমে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রবীণ ডিম সংগ্রহকারী আবুল কাশেম বলেন, গত ৭ মে যে ডিম নদীতে পাওয়া গিয়েছিল সেগুলো নমুনা ডিম নয়। কারণ আমি চার বালতি ডিম পেয়েছি। নমুনা ডিম প্রচার হওয়ায় ক্রেতারা আসেনি। ডিম আহরণকারীদের একটি সিন্ডিকেট হ্যাচারীতে ছাড়া যারা নিজস্ব মাটির বা পাকা কূয়ায় রেণু উৎপাদন করেছিলেন তাদের রেণু বিক্রি করতে দেয়নি। আমার প্রায় এক কেজি রেণু আছে এখনো বিক্রি করতে পারিনাই।

আজ (গতকাল মঙ্গলবার) হালদার পানিতে লবণাক্ততা ছিল বলেও দাবি তার। এদিকে হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীব-বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হালদা নদীতে লবনাক্ততা আছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া বলা যাচ্ছে না। হালদায় রাতে ভাটায় পুরোদমে মা মাছ ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা আছে। তবে না ছাড়লে জুন মাসের অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। রাউজান উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আজও (গতকাল মঙ্গলবার) নমুনা ডিম উঠেছে ডিম আহরণকারীদের জালে। আমার মনে হয় গত ৭ মে যে ডিম ছেড়েছিল সেডিম নমুনা ডিম ছিল না। পুরোদমে ছেড়ে দিয়েছিল। গতকাল (গত সোমবার) এক থেকে দেড় বালতি পর্যন্ত ডিম উঠেছিল জেলেদের জালে। যেহেতু জুনমাস পর্যন্ত সম্ভাবনা আছে সেহেতু পুরোদমে ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা আছে। গত ৭ মে যে ডিম ছেড়েছিল সেটি নমুনা ডিম ছিল কিনা নাকি পূর্ণাঙ্গ ডিম ছিল তা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাউজানে অস্বভাবিক জোয়ারে তলিয়ে গেছে গ্রামীণ সড়ক, দুই ঘর বিধ্বস্ত
পরবর্তী নিবন্ধকাল উখিয়ায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন