সাতদিন পিছিয়ে চসিক বইমেলা শুরু হবে ১৭ ফেব্রুয়ারি

কমবে ব্যাপ্তি

মোরশেদ তালুকদার | শুক্রবার , ২৮ জানুয়ারি, ২০২২ at ১২:৩২ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে নগরেও বইমেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। সাতদিন পিছিয়ে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে অমর একুশে বইমেলা। এবার মেলার ব্যাপ্তি চারদিন কমানো হয়েছে।

এবারও মেলা চলবে নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে। ২০১৯ ও ২০২০ সালেও সিটি কর্পোরেশন মাঠটিতে বইমেলা আয়োজন করে।

সিটি কর্পোরেশন আয়োজন করলেও চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্প-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরাই সম্মিলিতভাবে বইমেলা বাস্তবায়ন করেন। তাই তা ‘অভিন্ন বইমেলা’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। এবার বাস্তবায়িত হলে তা হবে সম্মিলিত উদ্যোগের তৃতীয় আয়োজন।

এর আগে নগরে ফেব্রুয়ারি মাসে একাধিক বইমেলা আয়োজিত হতো। ২০১৯ সালে তৎকালীন সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীনের উদ্যোগে অভিন্ন বইমেলা শুরু হয়।

২০২১ সালে করোনার ‘অজুহাতে’ বইমেলা আয়োজন করেনি চসিক। এবারও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল।

এ বিষয়ে গত ২২ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীতে ‘বইমেলা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় চসিক, ঢাকায় প্রস্তুতি শুরু হলেও চট্টগ্রামে নিশ্চুপ, প্রকাশকরা চান মেলা হোক’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর নড়ে-চড়ে বসে চসিক।

সর্বশেষ গতকাল বৃহষ্পতিবার(২৭ জানুয়ারি) লেখক, প্রকাশকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন মেয়র। এতে বইমেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়।

অবশ্য করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার মেলার ব্যাপ্তি চারদিন কমানো হয়েছে। এবার বইমেলা চলবে ১৫ দিন। ২০১৯ সালে ও ২০২০ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় মেলা। ২০১৯ সালে ২১ দিন (বর্ধিত দুই দিনসহ) এবং ২০২০ সালে ২০ দিন মেলা চলে।

২০২০ সালে চট্টগ্রামের ৪০টি এবং ঢাকার ১১৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০৫টি স্টল ছিল। ২০১৯ সালে ছিল ১১০টি। ২০২০ সালে মেলা প্রাঙ্গণের আয়তন ছিল এক লক্ষ ২০ হাজার ৩০০ বর্গফুট যা ২০১৯ সালে ছিল ৮০ হাজার ৩০০ বর্গফুট।

এবার মেলার আয়তন ও স্টল সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। তবে ২০২০ সালের মতো সমসংখ্যক প্রকাশক অংশ নিবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

তিনি বলেন, “করোনা মহামারির কারণে গত বছর(২০২১) প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও অমর একুশে বইমেলা শুরু করতে পারিনি। এবার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে বইমেলা শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের আলোকে বইমেলা আয়োজনের সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

মেয়র বলেন, “কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে বইমেলায় ক্রেতা ও পাঠকরা আসতে পারেন সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।”

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাস করে না তাদের প্রকাশিত বই যাতে বইমেলায় স্থান না পায় সেই ব্যাপারে সকলকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন মেয়র।

২০২১ সালে মেলা হয়নি যে কারণে:
২০২০ সালের ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালেও লেখক এবং প্রকাশকের প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল বইমেলাকে ঘিরে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।

পরবর্তীতে একই বছরের ২ মার্চ বইমেলাকে ঘিরে আন্দরকিল্লাহস্থ নগর ভবনে সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্প-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। সেদিন ২৩ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বইমেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়।

পরে ২০ মার্চ জেলা প্রশাসন চসিককে জানায়, ২৭ ও ২৮ মার্চ জিমনেশিয়াম মাঠে উন্নয়ন মেলা করবে। এর প্রেক্ষিতে ২১ মার্চ বইমেলা বাস্তবায়ন কমিটির জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল ২৯ মার্চ মেলা শুরু হবে।

তবে উদ্বোধনের দুই দিন আগে ২৭ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করেন সিটি মেয়র। সেদিন উপস্থিত প্রকাশক ও লেখকদের সঙ্গে আলোচনা করে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বইমেলার তারিখ পেছানোর ঘোষণা দেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে মেয়র বলেন, ‘২৩ মার্চ বইমেলা শুরুর কথা ছিল। আমরা সব আয়োজন শেষ করেছি। অনিবার্য কারণে সেটা পিছিয়েছে। দেশে দিন দিন করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে। কোনো ব্যাপারে যেন বইমেলা প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে’। সবার সাথে আলোচনা শেষে মেয়র ওইদিন বলেন, ‘আমি মেলা বন্ধ করার পক্ষপাতি নই। পরিস্থিতি বিবেচনায় তারিখ পিছিয়ে দেয়া যায়। মেলা নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে বিজয় মেলার পূর্ব পর্যন্ত সময়ে আয়োজন করা হবে।’ যদিও এ ঘোষণা অনুযায়ী নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে মেলা আয়োজিত হয়নি। অবশ্য এক্ষেত্রে প্রকাশকদেরও তেমন আগ্রহ ছিল না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউত্তর জেলা যুবদলের পাঁচ ইউনিটে আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন
পরবর্তী নিবন্ধখাল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার সাবেক ইউপি সদস্য