ওয়ার্ডে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার পদের এক জুনিয়র চিকিৎসকের সাথে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের এক সহকারী পরিচালকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই সহকারী পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে হাসপাতালের পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা।
অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। তিনি বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তবে মৌখিকভাবে তিনি (সহকারী পরিচালক) তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আমরা তার কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিচ্ছি। অবশ্য, অভিযোগ মিথ্যে দাবি করে ওই সহকারী পরিচালক বলছেন, ওয়ার্ডে গিয়ে সহকারী পরিচালকের পরিচয় দেয়ার পরও তারা ন্যূনতম সম্মান ও সৌজন্যতা দেখায়নি। বরং আমার সাথে উল্টো খারাপ আচরণ করেছেন। এ নিয়ে নিজেও হাসপাতাল পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ আগস্ট (শনিবার) দুপুরে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (অর্থ ও ভান্ডার) ডা. জাহাঙ্গীর আলম হেমাটোলজি ওয়ার্ডে যান। তার পরিচিত এক রোগীকে ওই (হেমাটোলজি) ওয়ার্ডে ভর্তি করানোর কথা থাকলেও সেখানে ভর্তি নেয়া হয়নি। এ নিয়ে হেমাটোলজি ওয়ার্ডে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসারের কাছে জানতে চান তিনি। ওই সময় মেডিকেল অফিসার অদিতি গোস্বামী ওয়ার্ডে দায়িত্বরত ছিলেন। দায়িত্বরত চিকিৎসক ওয়ার্ডে শয্যা খালি না থাকায় ভর্তি রাখা যায়নি বলে জানান। তখন সহকারী পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর আলম ক্ষুব্ধ হয়ে দায়িত্বরত চিকিৎসকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার (অশোভন আচরণ) করেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা।
ওয়ার্ডের চিকিৎসকদের অভিযোগ, এ সময় সহকারী পরিচালক অন্য রোগীকে রিলিজ দিয়ে হলেও তার রোগী ভর্তি রাখতে বলেন। এ নিয়ে দায়িত্বরত চিকিৎসকের সাথে অশোভন আচরণ করেন। এ ঘটনায় হাসপাতাল পরিচালক বরাবর ওইদিনই (১৩ আগস্ট) লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন হেমাটোলজি ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা। অভিযোগ পত্রে ৫ জন চিকিৎসক স্বাক্ষর করেছেন।
ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. আশেকুল ওয়াহাব বলেন, আমাদের ওয়ার্ডটি সুপার স্পেশালাইজড একটি ওয়ার্ড। সরকারিভাবে মাত্র দশটি শয্যার অনুমোদন আছে। তবে আমরা ১৬টি শয্যায় এখানে রোগী ভর্তি রাখি। ইনফেকশনের শঙ্কায় এখানে ফ্লোরে কোন রোগী রাখা হয় না। যার কারণে আমরা শয্যার সমান সংখ্যক রোগী ভর্তি রাখতে পারি। এর বাইরে রোগী আসলে প্রথমে অন্য ওয়ার্ডে (মেডিসিন) ভর্তি রাখা হয়। পরে শয্যা খালি হলে এখানে স্থানান্তর করা হয়। ওয়ার্ডে শয্যা খালি না থাকায় উনার (সহকারী পরিচালক) রোগীকে এখানে ভর্তি রাখা যায়নি। তবে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়। এ নিয়ে তিনি (সহকারী পরিচালক) ক্ষুব্ধ হন। ওয়ার্ডে এসে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসারের সাথে অশোভন আচরণ করেন। তুই-তুকারি করে কথা বলেন। হেনস্থা করেন। একজন ডাক্তার হয়ে জুনিয়র একজন ডাক্তারকে এভাবে হেনস্থা করা মানা যায় না। আমরা এ ঘটনায় ব্যবস্থা চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
যদিও এসব অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (অর্থ ও ভান্ডার) ডা. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি আজাদীকে বলেন, ওয়ার্ডে গেলে সহকারী পরিচালক পরিচয় দেয়ার পরও তারা (দায়িত্বরত চিকিৎসকরা) ন্যূনতম সম্মান বা সৌজন্যতা দেখায়নি। এসব নিয়ে টুকটাক কথা কাটাকাটি হয়েছে। এরপরও তাদের সাথে যেহেতু একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে, আসার সময় আমি সরি বলে এসেছি। তবে আমার রোগী ভর্তি রাখতে অন্য রোগী রিলিজের যে কথা বলছে, সেটি পুরোপুরি মিথ্যে। এখন সাজানো অভিযোগ আনা হচ্ছে। ঘটনার দিন (১৩ আগস্ট) তিনি নিজেও হাসপাতালের পরিচালক মহোদয় বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন বলে জানান সহকারী পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর আলম।