ক্ষমতার পালাবদলের মধ্যে সাম্প্রদায়িক হামলার যে অভিযোগ উঠেছে, সেটিকে পুঁজি করে অনেকে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক সমস্যা নাই, সেটা আমি কিন্তু বলব না। এটা ব্যতিক্রম, এটাকে যেভাবে দেখিয়ে বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সেটা তো বাংলাদেশ নয়। কলকাতায় বাংলাদেশের দূতাবাস ভাঙছে, বিভিন্ন দেশে যে প্রতিক্রিয়া হয়– এই অস্থিরতা কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু অস্থির করছে না, সেই প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। অন্যরা যেটা করছে, সেটা বাংলাদেশে করতে দেওয়া হবে না। কিন্তু সাবধান থাকতে হবে– সতর্ক থাকতে হবে; এর মাধ্যমে আগামী বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন– সেটা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেন আমরা ফিরে যেতে পারি। গতকাল শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে গণফোরামের সপ্তম জাতীয় সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। খবর বিডিনিউজের।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আপনারা দেখেছেন, বিভিন্ন ঘটনাবলি– যেটা ১৫–১৬ বছরে ছিল না, এখন দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠী, বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন দাবি নিয়ে নামছে, একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে, এসব দাবি দাওয়ার পেছনে অন্য শক্তি কাজ করছে, কারা এটা– আমাদের বুঝতে হবে। এই শক্তির উৎস কোথায় তা জানতে হবে। ইদানীং যে ঘটনাগুলো ঘটছে ধর্মের নামে, আসলে কি ধর্মের নামে যে দাবি দাওয়াগুলো, সেগুলো বোঝার জন্য আরেকটু গভীরভাবে দেখতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, সংস্কার নিয়ে কারও চিন্তা করার দরকার নাই, সংস্কার আমরা করব।
আমীর খসরু বলেন, স্বৈরাচারের দোসররা কিন্তু বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম বিভিন্নভাবে শুরু করেছে। কখনও আনসারের বিদ্রোহ, কখনও সংখ্যালঘু, কখনও অটোরিকশার মাধ্যমে, প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। স্বৈরাচারকে সরিয়েছি, আজকে কিন্তু আমাদের ঐক্যকে অটুট রাখতে হবে। জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে একটা কারণে; মানুষের প্রত্যাশা, আকাক্সক্ষা পূরণ করতে হলে আপনাকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে যেতে হবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, যুদ্ধটা ছিল গণতন্ত্রের জন্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধটা হয়েছিল গণতন্ত্রের জন্য। আমরা সম্মিলিতভাবে একসাথে কাজ করার প্রত্যয়ে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে যেতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি এবং আমরা সেটা করতে চাই এই কারণে– এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়া আর কোনো পথ নেই।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আগামী দিনে যেন একটা নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে পারি; এটা আমাদের লক্ষ্য। সংস্কারের কথা যারা বলে, তার বহু আগে ৩১ দফা সংস্কারের কথা এক বছর আগে তুলে ধরেছি। সেই ৩১ দফার মধ্যে আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সবকিছু আছে। সেটা আমরা করব। আগামী দিনে নির্বাচনের পরে যে সরকার হবে, সেটা হবে জাতীয় সরকার এবং সেই জাতীয় সরকার এই ৩১ দফা সংস্কার বাস্তবায়ন করবে। এটা আমরা জাতির কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি বলেন, সুতরাং সংস্কার নিয়ে কারও চিন্তা করার দরকার নাই, সংস্কার নিয়ে কারও চিন্তা করার কোনো কারণ নাই। ৩১ দফা সংস্কার এই বাংলাদেশে আমরা বাস্তবায়ন করব। নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যমতের ভিক্তিতে নির্বাচনি সংস্কারসহ যে কয়টি সংস্কার দরকার, সেটা করতে রাজি আছি, সেটা করতে সময় লাগবে না, অতিসত্তর করা যায়। অতিসত্তর নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মালিকানা বাংলাদেশের জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।
গণফোরামের এমিরেটাস সভাপতি কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বিপ্লবী গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি সাইফুল হক, গণফোরাম নেতা মোস্তফা হোসেন মন্টু। সম্মেলন উদ্বোধন করেন শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া।