সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের হত্যার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত জিহাদ হাওলাদার জেরার মুখে জানিয়েছে, আজীমকে হত্যা করার পরে তার শরীর থেকে মাথা কেটে ফেলা হয়েছিল। তারপর সেটিকে টুকরো করে ফেলেছিল সে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের তদন্তকারী শাখা সিআইডি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
এর আগে সিআইডি জানিয়েছিল, আজীমকে খুন করার পরে জিহাদই তার শরীর থেকে চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে মাংস ও হাড় পৃথক করে ফেলে। লাগাতার জেরায় জিহাদ তখন তদন্তকারীদের বলেছে, হাড় ও খুলির টুকরো সে–ই আলাদা করেছিল। কিন্ত তা কোথাও ফেলে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল আরেক অভিযুক্ত ফয়সালের ওপরে। আনারের শরীরের মাংসের টুকরোগুলি কোথায় ফেলেছিল জিহাদ, সেটা সে সিআইডির তদন্তকারীদের দেখিয়েছে। কিন্তু ফয়সাল কোথায় খুলি ও হাড়ের টুকরোগুলি ফেলেছে, তা সে জানে না বলে জেরায় দাবি করেছে।
নিউ টাউন সংলগ্ন ভাঙ্গর এলাকার কৃষ্ণমাটি সেতুর কাছে যে জায়গায় বাগজোলা খালে আনারের শরীরের মাংসের টুকরোগুলি ফেলেছিল বলে জিহাদ দেখিয়ে দিয়েছিল, সেখানে গতকাল চতুর্থ দিনের মতো ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালানো হলেও কিছু উদ্ধার করা যায়নি। খবর বিবিসি বাংলার।
এদিকে গতকাল পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় গেছেন বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি টিম। ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে এ টিমে গেছেন ডিবি ওয়ারী বিভাগের উপ–কমিশনার (ডিসি) আব্দুল আহাদ ও অতিরিক্ত উপ–কমিশনার সাহেদুর রহমান। তারা সিআইডির তদন্তকারীদের সঙ্গে নিউ টাউন থানা থেকে সঞ্জীভা গার্ডেন্সের সেই ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন, যেখানে হত্যা করা হয়েছিল আনোয়ারুল আজীমকে। বেশ কিছুক্ষণ সেখানে থেকে ডিবির টিমটি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সদর দফতর ভবানী ভবনে গিয়ে সিআইডির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
ধৃত জিহাদকে জেরা : ভবানী ভবনে হেফাজতে রাখা হয়েছে এই হত্যাকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত জিহাদ হাওলাদারকে। হারুন অর রশীদ বলেন, আমাদের দেশে যে তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের যেহেতু আমরা মুখোমুখি বলে কথা বলেছি, আমরা চাইব যে তাদের থেকে যেসব তথ্য আমরা পেয়েছি সেগুলো পশ্চিমবঙ্গে ধৃত জিহাদের সঙ্গে কথা বলে সেগুলো যাচাই করে নিতে।
গতকাল রাত প্রায় সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ডিবির দলটি ভবানী ভবনে জিহাদকে জেরা করে। জিহাদকে জেরা করা ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি যেসব সিসিটিভি ফুটেজ জোগাড় করেছে সেসবও তারা দেখবেন, ঢাকায় ধৃতদের কাছ থেকে যা তথ্য পেয়েছেন জেরায়, সেসবও পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দাদের সঙ্গে মিলিয়ে নেবেন বলে জানান হারুন।
কিন্তু ধৃতদের বিচার কী ভারতে হবে নাকি বাংলাদেশে? এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা এক দেশে করা হয়, হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয় আরেক দেশে। অভিযুক্তরা এক দেশ থেকে এসে অপরাধ করেছে, আবার মূল পরিকল্পনাকারী তৃতীয় একটি দেশের নাগরিক। এক্ষেত্রে এই মামলার বিচার কোন দেশে হবে, ভারতে না বাংলাদেশে, তা নিয়ে একটা আলোচনা ইতিমধ্যে উঠেছে।
কলকাতা হাই কোর্টের সিনিয়র ক্রিমিনাল লইয়ার জয়ন্ত নারায়ণ চ্যাটার্জী বলেন, অপরাধ যেহেতু ভারতে হয়েছে, তাই এদেশের আইন অনুযায়ীই বিচার হওয়ার কথা। তবে এক্ষেত্রে অপরাধের মূল পরিকল্পনা হয়েছিল বাংলাদেশে, অভিযুক্তরাও বেশির ভাগই সেদেশের নাগরিক। আবার পশ্চিমবঙ্গে প্রথম নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। অন্যদিকে ঢাকাতেও এফআইআর হয়েছে বলে জানি। সেক্ষেত্রে বিচারটা কোন দেশে হবে, তা দুদেশের মধ্যে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ডিবি প্রধান হারুন উর রশীদ বলেন, আমাদের দেশে কেউ কোনও অপরাধ করলে যেমন দেশেই তদন্তের পরে তাকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়, তেমনই একস্ট্রা–টেরিটোরিয়াল অফেন্সের ক্ষেত্রেও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আমরা কোনও ব্যক্তিকে দেশেই বিচারের সম্মুখীন করতে পারব।
ডিবিপ্রধান হারুন কলকাতায় : পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় গেছেন বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি টিম। গতকাল সকালে ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়ে কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছান তারা। কলকাতার নিউ টাউন এলাকায় ঝিনাইদহ–৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে তদন্তের অংশ হিসেবে তাদের এ সফর।
ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ জানান, দুই দেশের গোয়েন্দারা অতি গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছেন। ফলে খুব শীঘ্রই রহস্যের উন্মোচন হবে। তবে আমরা আশা করছি, পুরো লাশটা না পেলেও তার একটা অংশবিশেষ উদ্ধার করতে পারব। কারণ লাশের অংশবিশেষ উদ্ধার না হলে মামলার নিষ্পত্তি করা যাবে না। এ কারণে আমাদের মূল কাজ হলো দেহাংশ উদ্ধার করা। অন্যদিকে আসামিদের জেরা করে অন্য কোনো অভিযুক্তের নাম উঠে আসে কিনা সেদিকেও আমাদের লক্ষ্য রয়েছে।