মুহম্মদ আবদুল হাই : শিক্ষাবিদ ও ধ্বনিবিজ্ঞানী

| মঙ্গলবার , ৩ জুন, ২০২৫ at ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ

মুহম্মদ আবদুল হাই (১৯১৯১৯৬৯)। শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, গবেষক, ভাষাবিজ্ঞানী। জন্ম ২৬শে নভেম্বর ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে মুর্শিদাবাদের রাণীনগর থানার মরিচা গ্রামে। পিতা আব্দুল গণি, মাতা ময়মুন্নেসা খাতুন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলায় বিএ অনার্স এবং ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে। এ কলেজে এক মাস শিক্ষকতা করে তিনি ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার লেকচারার পদে বেঙ্গল জুনিয়ার এডুকেশন সার্ভিসে যোগ দেন। একই পদে তিনি ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে কৃষ্ণনগর কলেজ, ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই সেপ্টেম্বর রাজশাহী সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে প্রভাষক পদে তিনি নিয়োগ লাভ করেন। মুহম্মদ আবদুল হাই ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে ভাষাতত্ত্বে অধ্যয়ন ও গবেষণার জন্য গেলে ভাষাতত্ত্ব, ধ্বনিতত্ত্ব ছাড়াও ইংরেজি, আরবি, সংস্কৃত, দ্রাবিড় প্রভৃতি ভাষায় তিনি পাণ্ডিত্য লাভ করেন এবং ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে ডিস্টিংশন সহ এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসে তিনি বাংলা বিভাগকে পুনর্গঠিত করেন। তাঁর আগ্রহে সৈয়দ আলী আহসান, মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আহমদ শরীফ, আনিসুজ্জামান, আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রমুখ কৃর্তিমান শিক্ষক বাংলা বিভাগে যোগদান করেন। মুহম্মদ আবদুল হাই ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা বিভাগের রিডার ও অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অধ্যাপক পদে নিয়োগ লাভ করেন। গবেষণার ক্ষেত্র প্রস্তুত ও প্রসারের লক্ষ্যে তিনি সাহিত্য পত্রিকা (১৯৫৭) প্রকাশ করেন। উচ্চমানের জন্য খুব দ্রুত পত্রিকাটি আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করে। আবদুল হাই এ পত্রিকাটি সম্পাদনার পাশাপাশি নিরলসভাবে নিজের গবেষণাও চালিয়ে যান। প্রকাশিত হয় সাহিত্য ও সংস্কৃতি (১৯৫৪), বিলেতে সাড়ে সাত শ’দিন (১৯৫৮), তোষামোদ ও রাজনীতির ভাষা (১৯৫৯), ভাষা ও সাহিত্য (১৯৬০), ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্‌ব (১৯৬৪) প্রভৃতি গ্রন্থ। বাংলা ভাষার ধ্বনির গঠন, উচ্চারণ ও ব্যবহারবিধি সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাবিশ্লেষণ দিয়ে রচিত তাঁর ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব গ্রন্থটি মুহম্মদ আবদুল হাইকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি দান করে। ধ্বনিবিজ্ঞানী হিসেবে গ্রন্থটি তাঁকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দেয়। পাঠ্যপুস্তকের অভাব দূর করার জন্য মুহম্মদ আবদুল হাই সৈয়দ আলী আহসানের সঙ্গে যৌথভাবে রচনা করেন বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত (আধুনিক যুগ, ১৯৬৮)। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩ রা জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধসড়কের বেহাল দশা : এলাকার বিপর্যস্ত জনজীবন