মাধ্যমিকের গণ্ডিও পার হননি, কিন্তু নিজেকে পরিচয় দিতেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। আর অনায়াসে চাকরি দিতে পারেন সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীতেও। থানার ওসি, এসআই ও পুলিশ কর্মকর্তাদের ফোন করে ভয় দেখান এবং হুমকি দেন। হারিফ মিয়া নামের ওই প্রতারকের এইচ এম শফিকুল আলম নামে রীতিমতো ভিজিটিং কার্ডও রয়েছে। এভাবে দিনের পর দিন প্রতারণা করে মানুষকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নিতো লাখ লাখ টাকা। এভাবে প্রতারণাসহ নানা অপরাধের অভিযোগে নগরীর মধ্যম হালিশহর এলাকা থেকে এমন এক প্রতারক চক্রের মূলহোতা হারিফ মিয়াসহ চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে বন্দর থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর এই প্রতারক চক্রকে আদালতে হাজির করে চালান দেয়া হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো– কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার আহেদ আলীর ছেলে মো. হারিফ মিয়া (২৩), বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার মো. ফজলুর রহমানের ছেলে মো. ইয়ার হোসেন (৪২), একই এলাকার দুলাল খানের ছেলে মিলন খান (৩০) ও ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানার চরজিতরের আব্দুস সাত্তারের ছেলে মো. ইউসুফ মিয়া (৪০)।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় কুমার সিনহা। তিনি বলেন, গতকাল বিকেলে ঘর ভাড়ার টাকা নিয়ে বিবাদের সূত্র ধরে ৯৯৯–এর মাধ্যমে অভিযোগের ভিত্তিতে দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ধুমপাড়া সাগরপাড় মা কলোনির একটি বাসায় যাই। সেখানে তাদের কথা শোনার সময় মিলন খান নামে এক ব্যক্তি মোবাইল নিয়ে এসে আমাকে কথা বলতে বলে। মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আপনি কে? ওখানে কেন গিয়েছেন? আমি কি পুলিশ কমিশনাকে বলব, নাকি তুমি বিষয়টি ওখানে শেষ করবে।’ তখন উনার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এইচ এম শফিকুল আলম বলে জানান। তারপর তিনি আমাকে বলেন, তোমার বাড়ি ফেনীতে জেলার এসপিকে পাঠাচ্ছি। এরপর মিলন খান আমাকে উনার একটি ভিজিটিং কার্ড দেয়। বিষয়টি সন্দেহ হওয়ায় কার্ডে থাকা দুটি ফোন নম্বর যাচাই বাছাই করা হয়। ফোন নম্বর দুটি হারিফ মিয়া নামে এক ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রেশন পাওয়া যায়। পরে নম্বর দুটির অবস্থান নির্ণয় করে দেখা যায় নম্বর তিনটি ওই ঘটনাস্থলেই রয়েছে। পরে ওই এলাকায় হারিফ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে তার ঘর থেকে জব্দ করা হয় অন্তত দুই ডজন সিম কার্ড, বিভিন্ন বাহিনীর চাকরির আবেদনপত্র, ভিজিটং কার্ড, সেনাবাহিনীর লোগো সম্বলিত মানিব্যাগসহ প্রতারণায় ব্যবহার করা নানা উপকরণ। ধুমপাড়া সাগরপাড় মা কলোনি থেকে অপর সহযোগীদের আরও তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও জানান, তাকে গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশ হওয়ার পর তার প্রতারনার শিকার কিশোরগঞ্জ ও করিমগঞ্জ থেকে এমন ভুক্তভোগী ৬ জনকে আমরা শনাক্ত করেছি। তারা আমাদের কাছে যোগাযোগ করেছিল। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতার সবার বাড়ি কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহে হলেও চট্টগ্রামের বন্দর এলাকায় তারা গড়ে তুলেছিল প্রতারণার এক সাম্রাজ্য।
এলাকার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পুলিশকে ফোন দিত তারা। গ্রেফতার মো. হারিফ মিয়া এলাকায় বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ভাই হিসেবে পরিচিত। আসলে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল পরিচয়ে হারিফ মিয়া বিভিন্ন জনকে কল দিত। তার নেতৃত্বে আছে চার থেকে পাঁচ জনের একটি দল।