রাজধানীর বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী মারামারিতে জড়িয়েছে, যাতে অন্তত ৭ জন আহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলের এ ঘটনায় এক নারী শিক্ষার্থীসহ আহত ৭ জনের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেওয়ার তথ্য দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক। আগের দিন রাজধানীর ডেমরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক কর্মীকে মারধরের ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মারামারিতে জড়ায় দুই অংশ। ডেমরা থেকে আসা সংগঠনটির নেতাকর্মীরা তাদের উপর হামলার অভিযোগ এনেছে। খবর বিডিনিউজের।
আহতদের একজন ইমরান ঘটনার বর্ণনা করে হাসপাতালে সাংবাদিকদের অভিযোগ করেন, ডেমরার এক সহযোদ্ধাকে সোমবার সমন্বয়কদের সামনে মারধর করা হয়। মঙ্গলবার বিকালে আমদেরকে বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মীমাংসার জন্য ডাকা হয়েছিল। সেখানে যাওয়া মাত্রই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সদস্য নাঈমের নেতৃত্বে ৮/১০ জন মিলে আমাদের মারধর করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মহিউদ্দিন কিছু সংখ্যক নেতাকর্মীদের মারামারিতে জড়ানোর তথ্য দিয়ে বলেন, এ নিয়ে নির্বাহী কমিটি বৈঠকে বসেছে। বৈঠক শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।
এ ঘটনা নিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তদন্ত শেষে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কেউই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নয় বলেও দাবি করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, আহত ৭ শিক্ষার্থীরা জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতরা হলেন– কবি নজরুল কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আনতা মিম (২০), দনিয়া কলেজের রাবেয়া (১৯), তেজগাঁও কলেজের আশরাফ উদ্দিন বাবু (১৯), ইস্ট–ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমরান হোসেন (২২) এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থী মাকছুদুর রহমান (২৪), আল আমিন (২২) ও মো. হাসিব (২০)।
ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের তরফে বলা হয়, সোমবার ডেমরায় মারামারির ঘটনায় তারা মঙ্গলবার বিকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু মানববন্ধন করতে তাদের বাধা দেওয়া হয়। এ নিয়ে পরে তাদের মারধরের অভিযোগ করেন তারা। তাদের ভাষ্য, ঘটনার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রিফাত রশিদ উপস্থিত ছিলেন। তবে এ বিষয়ে জানতে রিফাত রশিদকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সেলের দায়িত্বরত জাহিদ আহসান সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, নির্বাহী কমিটির একজন এই ঘটনায় আহত হয়েছেন। এতে বলা হয়, বাংলামোটরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিপথগামী কয়েকজন মানুষ এসে বিভিন্ন অপ্রীতিকর স্লোগান দিতে থাকে। এক সময় তারা জোর–জবরদস্তি করে কার্যালয়ের ফটক বন্ধ করে দেয়। এতে অফিস রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রিফাত রশিদ, আহনাফ সাঈদ খান, নাঈম আবেদিন, আসাদ বিন রনি সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে আগত ব্যক্তিদের দাবি–দাওয়া শুনতে চান। কিন্তু তারা সহযোগিতার বদলে নির্বাহী সদস্যদের ওপরও চড়াও হন। নির্বাহী সদস্য নাঈম আবেদিন এতে আহত হন। পরবর্তী সময়ে অন্যান্য নেতাকর্মী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এলে পরিস্থিতি উত্তপ্তকারীরা কার্যালয় ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
এ বিষয়ে সংগঠনের অবস্থান তুলে ধরে বলা হয়, সহিংসতার বদলে সৌন্দর্য এবং সমপ্রীতির বিকাশ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাথেয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মনে করে, সাংগঠনিক সকল সমস্যার সমাধান আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব। আলোচনার বদলে যারা সহিংসতার পথ বেছে নেবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের বিষয়ে বিন্দুমাত্র সহানুভূতি প্রদর্শন করবে না।