বিশ্বের বৃহত্তম প্রবাল দ্বীপ

রেজাউল করিম | বুধবার , ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৯:১৩ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। বর্তমানে এই প্রবাল দ্বীপের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। সরকার দ্বীপটি রক্ষায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এদিকে প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণপশ্চিম অংশে বিশ্বের বৃহত্তম প্রবালের সন্ধান পেয়েছেন একদল গবেষক। সলোমন দ্বীপপুঞ্জের কাছে তিনশ’ বছরেরও বেশি পুরনো প্রবালটি খুঁজে পান ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ভিডিওগ্রাফার মানু সান ফেলিঙ। দৈর্ঘ্যে ১১১ ফুট ও প্রস্থে ১০৪ ফুট প্রবালটির আকার একটি পূর্ণবয়স্ক নীল তিমির চেয়েও বড়।

ধারণা করা হচ্ছে, এক বিলিয়নের বেশি ক্ষুদ্র প্রাণী ও জলজ অণুজীবের উপস্থিতি রয়েছে প্রবালটিতে। এর মাধ্যমে জলজ প্রকৃতি নিয়ে গবেষণার নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তিনশ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল এই বিশাল প্রবাল। সদ্য আবিষ্কৃত এই জলজ বিস্ময়টি এখন পর্যন্ত জানা বিশ্বের সবচেয়ে বড় একক প্রবাল বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। কোরাল বা প্রবাল এক ধরনের সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী। বছরের পর বছর ধরে একসঙ্গে থাকতে থাকতে, পুঞ্জিভূত হয়ে গঠিত হয় বিশাল প্রবাল প্রাচীর। সঙ্গে যুক্ত হয় শৈবাল, মৃত জলজ প্রাণীর দেহাবশেষ ও পলিপ। সব মিলিয়ে জীবন্ত প্রাণীর তৈরি এক আশ্চর্য স্থাপনা এই প্রবাল। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য। অনেকটা দৈবক্রমেই প্রবালটি আবিষ্কার করেন ন্যাট জিও’র ভিডিওগ্রাফার মানু সান ফেলিঙ। সলোমন দ্বীপপুঞ্জের কাছে স্বচ্ছ পানিতে ছেলেকে নিয়ে ডুব দেন তিনি। প্রথমে এটিকে জাহাজের ধ্বংসাবশেষ মনে করে এগিয়ে গেলেও পরীক্ষানিরীক্ষার পর বুঝতে পারেন জীবন্ত প্রাণীদের তৈরি অসামান্য সৌন্দর্য আবিষ্কার করে ফেলেছেন তিনি। গবেষকদের ধারণা, বিশ্বের বৃহত্তম জলজ প্রাণী নীল তিমির চেয়েও আকারে অনেকটা বড় এই প্রবাল।

এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের সামোয়াতে থাকা ‘বিগ মামা’ প্রবালটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রবাল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছিল। তবে নতুন সন্ধান পাওয়া প্রবালটি ‘বিগ মামা’র চেয়েও প্রায় তিন গুণ বড়। ৩৪ মিটার দীর্ঘ প্রবালটি এতটাই বিশাল যে ধারণা করা হচ্ছে, মহাকাশ থেকেও দেখা যাবে এটি।

বর্তমানে গাছ কাটা দেশের অর্থনীতির একটি প্রধান অংশ। দেশের বার্ষিক রপ্তানি আয়ের ৫০৭০ শতাংশ আসে এখান থেকে। তবে এটি উচ্চমাত্রার পানি দূষণ ঘটায় যা প্রবালের ক্ষতি করে। এরিক ব্রাউন, যিনি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এই গবেষণা ভ্রমণে একজন প্রবাল বিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দিয়েছে, বলেছেন এই প্রবালের স্বাস্থ্য বেশ ভালো দেখাচ্ছে। প্রবাল হলো পেভোনা ক্ল্যাভাস নামক একটি জাতি, যা চিংড়ি, কাঁকড়া, মাছ এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীদের একটি বাসস্থান হিসেবে কাজ করে।

নমুনার বয়স বলে দিচ্ছে, এটি অতীতের সামুদ্রিক অবস্থা জানার জন্য একটি জানালার মতো কাজ করবে। এটি কীভাবে বেড়েছে সে সম্পর্কে আরও জানতে বিজ্ঞানীরা এটি নিয়ে আরও গবেষণা করার আশা করছেন। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অব নেচারের এ সপ্তাহের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে উষ্ণ জলে বসবাসকারী ৪৪ শতাংশ প্রবাল বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে। ২০০৮ সালে প্রজাতিটির সর্বশেষ মূল্যায়নের পর থেকে এই হার একতৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভূতুড়ে মন্দির
পরবর্তী নিবন্ধপটিয়া জঙ্গলখাইন উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান মেলা