বিটিভি চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের মানুষের জন্য বড় সম্পদ, বড় প্রাপ্তি

| রবিবার , ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের আজ রজতজয়ন্তী। এ উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি উদযাপিত হবে। রজতরেখা নামে একটা সংকলন প্রকাশেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২৫ বছর আগে ১৯৯৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম অঞ্চলের মাটি ও মানুষের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি শিক্ষা এবং সংস্কৃতির বিকাশের লক্ষ্যে এ কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়। অনেক পরিশ্রম, আন্দোলন আর সংগ্রামের ফসল আমাদের বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র। এ কেন্দ্রে আছে অনেক সমস্যা, আছে অতৃপ্তি, আছে অনেক সীমাবদ্ধতা। ব্যবস্থাপনাতেও আছে নানা ত্রুটি। তবু আমরা মনে করি, এটি চট্টগ্রামের মানুষের জন্য বড় সম্পদ, বড় প্রাপ্তি। শুরুতে ১৯৯৬ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশন কেন্দ্র হিসেবে মাত্র দেড় ঘণ্টার অনুষ্ঠান সমপ্রচার করা হতো। পরে ধীরে ধীরে তার সম্প্রচার সময় বৃদ্ধি পায়। নানা সংকটের মধ্যেও ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে শুরু হয় ৬ ঘণ্টার স্যাটেলাইট সমপ্রচার কার্যক্রম। ২০১৯ সালের ১৩ এপ্রিল থেকে শুরু হয় ৯ ঘণ্টার সমপ্রচার। ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় ১২ ঘণ্টা অনুষ্ঠান সমপ্রচার। ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রের অনুষ্ঠান বহির্বিশ্বেও সমপ্রচার শুরু হয়। ১৪ ডিসেম্বর আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রায় ত্রিশ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৩৮ ফুট বা ১৩৩ দশমিক ৫ মিটার উঁচু চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্রের টাওয়ার নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়। এই টাওয়ার দিয়ে ১২টি ক্যাবল চ্যানেল ও দুটি টেরিস্ট্রিয়াল চ্যানেল চালানো যায়। টাওয়ারের পাশেই স্থাপন করা হয়েছে ট্রান্সমিশন। গত বছর ৩ সেপ্টেম্বর থেকে এই ট্রান্সমিশন দিয়ে বিটিভি, বিটিভি ওয়ার্ল্ড, সংসদ টিভি ও চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্র সমপ্রচার করা হচ্ছে। এর ফলে চট্টগ্রামের মত সারাদেশেও বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের অনুষ্ঠান টেরিস্ট্রিয়াল হিসেবে দেখা যাচ্ছে। গত ১০ জানুয়ারি থেকে ১৮ ঘণ্টা অনুষ্ঠান সম্প্রচার চলছে। আজ থেকে এ কেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা সমপ্রচারে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার নিতাই কুমার ভট্টাচার্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন। তিনি
প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, এই কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো হবে। এখানকার মাটি ও মানুষের কথা বলা হবে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সংস্কৃতিকে বিশ্বব্যাপী উপস্থাপন এবং ট্যুরিজম সেক্টরের বিকাশে চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি ২৪ ঘণ্টার এই সমপ্রচারের ফলে আগের চেয়ে অনেক বেশি অনুষ্ঠান করা সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করে বলেন, অনুষ্ঠানের মান উন্নয়নে আমরা বহু পদক্ষেপ নিয়েছি। চট্টগ্রামের মানুষের প্রত্যাশা পূরণে আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি।
তবে তাঁর প্রত্যাশাকে স্বাগত জানিয়ে বলতে চাই, এ কেন্দ্রের উন্নয়নের জন্য চাই পর্যাপ্ত ও দক্ষ লোকবল, প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট এবং সর্বোপরি প্রয়োজন পর্যাপ্ত বরাদ্দ। এখানে এখনো পর্যন্ত অনুষ্ঠান সংরক্ষণের জন্য আরকাইভের ব্যবস্থা নেই, যেটা খুবই জরুরি। আরো কয়েকটি দিকে একটু মনোযোগী হতে হবে। যেমন বর্তমানে যে সব অনুষ্ঠান সম্প্রচার হয়, তার মধ্যে দৈনিক বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান থাকে ঢাকা কেন্দ্রের। ঢাকা কেন্দ্রের অনুষ্ঠান প্রচার করে চ্যানেল চালানোর মধ্যে বাহাদুরির কিছু নেই। এ কেন্দ্র থেকে মৌলিক অনুষ্ঠান তৈরি এবং প্রচার করতে না পারলে ধার করা অনুষ্ঠান বা পুনঃপ্রচার দিয়ে স্বতন্ত্র টেলিভিশন চ্যানেলে রূপান্তর করা সম্ভব নয়। কিছু কিছু অনুষ্ঠান আছে, যেগুলো কেন্দ্রের সুনাম অর্জনে সহায়ক। জানা যায়, তম্মধ্যে কয়েকটি অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। সেগুলো আবার প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে। আর্থিক সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে তোলার জন্যও আয়বর্ধক প্রতিষ্ঠানের দিকে অগ্রসর হতে হবে। আমরা জানি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মধ্যে একমাত্র লাভজনক মিডিয়া হলো বিটিভি। সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম কেন্দ্রটি অনেক পিছিয়ে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন।
আমরা মনে করি, হাজারো সীমাবদ্ধতার মধ্যেও চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্রটি এবার একটু মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে। এ কেন্দ্রটিকে একটি ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর আন্তরিক প্রচেষ্টা যেন আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারি। রজতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বিটিভি চট্টগ্রাম পরিবারের সকল সদস্যকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে