গাছে গাছে ঝুলছে পাকা টমেটো। টমেটোর ভারে নুয়ে পড়েছে গাছ। কিন্তু সেই টমেটো তুলতে আগ্রহ করছেন না কৃষক। ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে টমেটো। সঠিক দাম না পাওয়ায় সীতাকুণ্ডের অনেক কৃষক ক্ষেতেই ফেলে রেখেছেন টমেটো। বহিরাগত অনেকে দলবেঁধে এসে সেখান থেকে কুড়িয়েও নিচ্ছেন। অনেক ক্ষেতের টমেটো খাচ্ছে গরু–ছাগলে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সীতাকুণ্ডে টমেটোর বাজারে ধস নেমেছে। বিক্রি করতে না পারায় জমিতেই নষ্ট হচ্ছে শত শত মণ টমেটো। বাজারে ন্যাযমূল্য না পাওয়ায় বিক্রি করতে না পেরে জমিতে ও রাস্তায় ফেলে দিচ্ছেন বহু কষ্টে উৎপাদিত এসব টমেটো। সীতাকুণ্ড উপজেলার মুরাদপুর গুলিয়াখালী, বাড়বকুণ্ড শুকলাল হাট, ছোট দারোগারহাট, কুমিরা, বাঁশবাড়িয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, জমিতে গাছে ঝুলছে কাঁচা–পাকা টমেটো। বাজারে দাম না থাকায় উত্তোলনে আগ্রহ নেই কৃষকদের। প্রতিটি জমিতেই নষ্ট হচ্ছে শত শত কেজি টমেটো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, এ বছর সীতাকুণ্ডে ৫৯০ হেক্টর জমিতে চার হাজার ৫০০ জন কৃষক টমেটো চাষ করেছেন। ১৫ হাজার মেট্রিক টন টমেটো উৎপাদন হয়েছে। এখন প্রচুর টমেটো উঠছে। ফলে দাম একেবারেই কমে গেছে। কিন্তু কৃষকরা দাম না পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, যারা টমেটো উত্তোলন করে বাজারজাত করেছেন তাদের চার থেকে পাঁচ টাকারও কম কেজি ধরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে মিলছে না উত্তোলন খরচও। সীতাকুণ্ডের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পড়াশোনা শেষে উদ্যোক্তা হওয়ার আশায় গ্রামে এসে ৬০ হাজার টাকা খরচ করে চার বিঘা জমিতে টমেটোর চাষ করেছি। ফলনও হয়েছে বাম্পার। কিন্তু বাজারে আশানুরূপ দাম না থাকায় জমিতে সব টমেটো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। টমেটোর ভালো ফলন দেখে আশা করেছিলাম, খরচ বাদে এবার দেড় থেকে দুই লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করব। কিন্তু ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজির টমেটো এখন পাঁচ টাকায়ও কিনছেন না ক্রেতারা। লাভ তো দূরের কথা, খরচের টাকাও উঠবে না।
মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিস্তির্ণ এলাকাজুড়ে টমেটোর চাষ হয়েছে। কৃষকরা জমি থেকে উৎপাদিত টমেটো তুলে তা বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন। গ্রামের পথে, পুকুর পাড়ে, জমির পাশে অসংখ্য স্তূপ ও ঝুঁড়িতে সাজানো টমেটো। কিন্তু কৃষকের কণ্ঠে হতাশার সুর। কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, কয়েক দিন আগে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি করেছি মাত্র ছয় টাকা করে। এখন তো কেউ কিনছেও না।
শুকলাল হাট ও কুমিরা এলাকার জাহাঙ্গীর আলম লিটন, আলী, মুনাফসহ কয়েকজন কৃষক জানান, তাদের আবাদকৃত টমেটো বেশি দিন মজুদ রাখতে এ এলাকায় সরকারি কোল্ড স্টোর স্থাপনসহ সরকারি ঋণ ও সার বীজ সুবিধা দেয়া না হলে আগামীতে আর তারা টমেটো চাষ করবেন না।
তবে সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, এবার টমেটোর ভালো ফলন হওয়ার কারণেই বাজারে দাম কমে গেছে। তবে কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এগুলো সংরক্ষণের জন্য হিমাগার স্থাপনের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
