কয়েকদিনের ধারাবাহিক বৃষ্টিপাতে মে মাসের শুরু থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশে স্বস্তি ফিরে এসেছিল। তবে তা হয়তো বেশিদিন স্থায়ী হচ্ছে না। কেননা আবহাওয়া যে অফিস পূর্বাভাস দিচ্ছে, সে অনুযায়ী চলতি মাসের মাঝামাঝি আবার আসছে অস্বস্তিকর গরম। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ রোববার থেকে দেশের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকলেও বাড়তে শুরু করবে মঙ্গলবারের পর থেকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে বলছে, আজ সোমবারের পর থেকেই একটু একটু করে তাপমাত্রা বাড়বে। আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, আগামী ১৪ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এরপরই বাড়বে তাপমাত্রা। ১৫ তারিখ থেকে শুরু হবে তাপপ্রবাহ। খবর বিবিসি বাংলার।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এপ্রিল মাসে যে তীব্রতা দেখা গেছে, ততটা তীব্র হবে না মে মাসের তাপপ্রবাহ। মে মাসের ১৫–২০ তারিখের মধ্যে যে তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস রয়েছে ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায়, সেটি হতে পারে মৃদু থেকে মাঝারি।
আওহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, বজ্রঝড়ের তীব্রতা কমে গেলে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করবে। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই তাপপ্রবাহ মৃদু তাপপ্রবাহই হবে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হতে পারে ৩৭ ডিগ্রি পর্যন্ত।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ২০ তারিখের পরে বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টিপাতের সাথে বজ্রপাত, সেই সাথে হতে পারে কালবৈশাখী ঝড়ও। জুনে বর্ষাকাল শুরুর আগ পর্যন্ত সারা দেশে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সাথে হতে পারে শিলাবৃষ্টিও।
মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড : গতকাল সকালে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে হয়েছে তুমুল বৃষ্টিপাতও। মেঘলা আকাশের কারণে সকালের শুরুতে সূর্যের দেখা মেলেনি ঢাকার বেশিরভাগ জায়গায়। সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে ঘন কালো মেঘে ঢেকে যায় রাজধানীর বেশিরভাগ জায়গা। এরপরই শুরু হয় ভারী বৃষ্টিপাত। আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, ঢাকায় একনাগাড়ে ৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়াবিদ ফারুক বলেন, এটি এ বছরের মধ্যে দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
আগামী তিন দিনের পূর্বাভাস : গতকাল সকাল নয়টায় আবহওয়া অফিস যে ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাস দিয়েছে সেখানে দেখা যাচ্ছে, গতকাল রাজধানী ঢাকা ছাড়াও খুলনা বরিশাল ও সিলেটের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। একই সাথে বিভিন্ন জায়গায় শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাসের কথা জানিয়েছে আবহাওয়ার বুলেটিন।
৭২ ঘণ্টার আবহাওয়া অফিসের এই পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে আজ রোববার রংপুর, রাজশাহী ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে আজও দিন ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
বৃহস্পতিবার থেকে তাপপ্রবাহ : আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে যে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর সেটি কমতে শুরু করবে মঙ্গলবার থেকে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, চলতি মে মাসের ৫ তারিখ রাত থেকে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে বর্তমানে বাংলাদেশের তামপাত্রা ৩২ থেকে ৩৪ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে।
আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, দেশে যদি বজ্রঝড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, এর স্থায়িত্ব যদি বাড়তে থাকে, তখন তাপমাত্রাও কমতে থাকে। আগামী সোমবার পর্যন্ত এই বজ্রঝড় ও বৃষ্টি হবে বিভিন্ন জায়গায়। ১৩ তারিখের পর থেকে বজ্রঝড়ের তীব্রতা কমে যাবে। তখন বৃষ্টি কমতে কমতে এক পর্যায় তাপমাত্রাও বাড়তে শুরু করবে। আগামী বুধ–বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হতে পারে এই তাপপ্রবাহ। এ সময় রাজশাহী, যশোর, নওগাঁ অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৬ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। আস্তে আস্তে সেটি আসতে পারে রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার পশ্চিমাঞ্চলের দিকে।
আবহাওয়া অফিসের হিসেব মানদণ্ড অনুযায়ী, যখন কোনো স্থানের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠে তখন সেটিকে বলা হয় মৃদু তাপপ্রবাহ। ১৫ তারিখের পর থেকে দেশে মৃদু তাপপ্রবাহ শুরু হবে। এই তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠানামা করতে পারে। তবে ৩৮ ডিগ্রি পর্যন্ত নাও উঠতে পারে। আগামী বুধ–বৃহস্পতিবারের দিকে যে তাপপ্রবাহ আসছে সেটি সর্বোচ্চ ১৯ থেকে ২০ মে পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মল্লিক বলছেন, এবারের তাপপ্রবাহ গত মাসের মতো এত ভয়াবহ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে এটির কতদিন স্থায়ী হবে বা এর প্রকৃতি কী হবে সেটি ১৪ তারিখের আগে নিশ্চিত করে বলা যাবে না।
