বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে ‘নতুন অর্থনৈতিক মডেল চালুর’ ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে হোটেল লেকশোরে অর্থনৈতিক সংস্কার বিষয়ক সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা আগামী দিনের তাতে একটা নতুন অর্থনৈতিক ভিশন থাকতে হবে, নতুন অর্থনৈতিক মডেলে যেতে হবে। যে মডেলে অর্থনীতি চলেছে সেই মডেলে আপনার বেশি এগোনোর কোনো সুযোগ নাই। আগের দিনের মডেল একটি গোষ্ঠীর জন্য কাজ করেছে তুলে ধরে তিনি বলেন, তা সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেনি। এ অবস্থায় সবার জন্য অর্থনীতি চালু করতে হবে। খবর বিডিনিউজের।
আমীর খসরু বলেন, দেশের উন্নয়নে যদি সবার অংশগ্রহণ না থাকে, সবার যদি অংশীদারত্ব না থাকে, তার যদি লাভ না হয় তাহলে সেই মডেলে অবশ্যই সমস্যা আছে। সেজন্যই আমরা (বিএনপি) বলেছি যে, গণতান্ত্রিক অর্থনীতির চর্চা করতে হবে– এটা শ্লোগান নয়, এটা হচ্ছে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষের সুযোগ থাকতে হবে। এই সুযোগটা কীভাবে দেব? আমি একটা উদাহরণ দিচ্ছি, ধরুন একটা গ্রামে কামার–কুমার তাদের জীবনে কোনো পরিবর্তন নেই। বিশ্বাস করেন এরা গরীব থেকে গরীব হয়েছে আরও। এদের জন্য আমরা কোনো কিছু দিতে পারি। আপনি অর্থনৈতিক উন্নয়ন করবেন, মেগা প্রকল্প করবেন, ব্যবসায়ীদের জন্য করবেন, শিল্পপতিদের জন্য করবেন কিন্তু সাধারণের জন্য কী করছেন। তাহলে তাদের জন্য কী করতে হবে? তাদের উৎপাদনে সহায়তা দিতে হবে। তাকে তার পণ্যের নকশায় সহায়তা দিতে পারি, অর্থায়নে সহায়তা দিতে পারি। প্রান্তিক মানুষের জন্য এসব আমাদেরকে করতে হবে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভয়েস ফর রিফর্ম, ব্রেইন, ইনোভিশন কনসাল্টিং, ফিনটেক সোসাইটি ও নাগরিক কোয়ালিশন দুই দিনের এ সম্মেলন আয়োজন করছে।
এনবিআর বিভক্তিতে কোনো লাভ হয়েছে কী :
এনবিআরকে দুই ভাগ করা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আমীর খসরু বলেন, এতে কী লাভ হয়েছে? এখানে ট্যাঙের প্রতিনিধি আছেন কী লাভ হয়েছে? লাভ হবে না। কারণ এনবিআর দুই ভাগ করেছেন। এখানেও আমলা আছেন, ওখানেও আমলারা আছেন। ওরা কী বাংলাদেশের মানুষের দৈনিন্দিন জীবনের যে সমস্যাগুলো আছে ওদের হিসাবের মধ্যে এটা আছে? তিনি বলেন, ওদের নীতিতে কী আছে? বাংলাদেশের মানুষের কীভাবে আয় করে, কীভাবে ব্যয় করে, ব্যবসায়ীরা কীভাবে আয় করে, কীভাবে ব্যয় করে এবং একেকটা ব্যবসার পেছনে কী শ্রম যায়, একেকটা ব্যবসা পরিচালনায় তার কতগুলো সমস্যার সমাধান করতে হয় এবং তার উদ্বৃত্ত আয় কোথায় যায়? এসব বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হয়। কর নীতি ট্যাঙ পলিসি যারা করবেন এসব বিষয়গুলো তাদের মাথায় থাকতে হবে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দরকার কী :
আমীর খসরু প্রশ্ন রেখে বলেন, সরকারের এই বিভাগের দরকারটা কী। এই বিভাগ তৈরি করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। এর উদ্দেশ্য ছিল এমডি নিয়োগ ও পর্ষদে পছন্দের লোক বসিয়ে লুটপাট করা। বিএনপি আগের বার ক্ষমতায় এসে এটি তুলে দিয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে এটি আবার ফিরিয়ে এনেছিলেন। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আবার এটি বিলুপ্ত করবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও শক্তিশালী করা ও স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলেন সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আর্থিক খাতে সংস্কার করা ও শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংককে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। শুধু স্বায়ত্তশাসন যথেষ্ট নয়, পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। এ ছাড়া বিনিয়োগ বাড়াতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সংস্কার করা হবে। দেশের নীতি নির্ধারণে আমলাতন্ত্রকে সম্পৃক্ত না করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে আমীর খসরু বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আমলাতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করবে না, জবাবদিহিরও কিছু নেই। বরং আমলাদের দায়িত্ব কমিয়ে আনা হবে। সরকার পরিচালনার সব ক্ষেত্রে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। সেই সঙ্গে নীতিনির্ধারণের দায়িত্ব আমলাতন্ত্র নয়, নীতিনির্ধারকদের হাতেই দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম, ঢাবি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মামুদ তিতুমীর, পলিসি এঙচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য মনজুর হোসেন, বিএনপির মাহাদী আমিন, ইসরাফিল খসরু, জামায়াতে ইসলামীর যুক্তরাষ্ট্রের মুখপাত্র নকিবুর রহমান, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান হাসান আরিফ, চার্টার্ড অ্যাকাউটেন্ট স্নেহাশীষ বড়ুয়া, কাউন্টারপার্টের নির্বাহী সম্পাদক জ্যোতি রহমান, চালডালের সিইও ওয়াসিম আলিম বক্তব্য রাখেন।










