ওয়েস্ট সফরের শুরুটা মোটেও ভাল হলোনা বাংলাদেশ নারী দলের। ক্যারিবীয় সফরে ভাল করে সরাসরি বিশ্বকাপে খেলতে চেয়েছিল বাংলাদেশ নারী দল। কিন্তু তাদের সে চাওয়া শুরুতেই ধাক্কা খেল। ৯ উইকেটের বিশাল পরাজয় দিয়ে ক্যারিবীয় সফর শুরু হলো নিগারদের। আর জয়ে ক্যারিবিয়ানরা শুরু করল তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। বাংলাদেশ সময় গতকাল সোমবার ভোরে অনুষ্ঠিত ম্যাচে বাংলাদেশকে স্রেফ ১৯৮ রানে আটকে রেখে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতে যায় ১১০ বল বাকি রেখেই। ব্যাটে–বলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ক্যারিবিয়ানদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন হেইলি ম্যাথিউস। অফ স্পিনে গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটের জোর দেখান তিনি। ৯৩ বলে ১০৪ রান করে অপরাজিত রয়ে যান তিনি। স্টেফানি টেইলরকে পেছনে ফেলেন ক্যারিবিয়ানদের সর্বোচ্চ ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ড এখন ম্যাথিউসের। ৮৫ ইনিংসেই ৮ সেঞ্চুরি হয়ে গেল তার। সেন্ট কিটসে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ ব্যাটিং উইকেটের ফায়দা নিতে পারেনি। দলের প্রথম ছয় ব্যাটার দুই অঙ্ক ছুঁলেও ফিফটি করতে পারেননি কেউ। অর্ধশত রানের জুটি ছিল কেবল একটি ফারজানা হক বিদায় নেন ২২ বলে ১০। মুর্শিদা খাতুন ও শারমিন আক্তার সুপ্তা অবশ্য ভালো খেলে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু দুজনের কেউ বড় করতে পারেননি ইনিংস। সম্ভাবনাময় জুটিও তাই বড় হয়নি। এই দুজনকেই ফেরান ম্যাথিউস। মুর্শিদাকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে দেখেই বলের লেংথ টেনে দেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক। বাংলাদেশের ওপেনার তেড়েফুঁড়ে মেরে আুট হস সহজ ক্যাচ দিয়ে। ৪০ রান করেন তিনি ৫৩ বলে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের দ্বিতীয় অধ্যায়ে নতুনভাবে ফেরা শারমিন ফর্মের ধারা ধরে রেখেই ইনিংস গড়তে থাকেন। কিন্তু ৪২ রানে তিনি বিদায় নেন ম্যাথিউসকে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে। এই দুই উইকেটের মাঝেই আরেকটি বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। অ্যাফি ফ্লেচারের ঝুলিয়ে দেওয়া বলে বোল্ড হন নিগার সুলতানা। ৪৪ বল খেলে কেবল ১৪ রান করতে পারেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। স্বর্ণা আক্তার ও সোবহানা মোস্তারি এরপর দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। প্রায় ১২ ওভার খেলে ৫৪ রান যোগ করেন দুজন। কিন্তু শেষ পাঁচ ওভারে যখন ঝড় তোলার পালা, তখন বিদায় নেন দুজনই। ৫০ বলে ৩৫ রান করেন সোবহানা। ১৭ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তার সর্বোচ্চ স্কোর এটি। স্বর্ণা করেন ৩৮ বলে ২৯ রান। পরের ব্যাটাররা পারেননি ভালো কিছু করতে। শেষ ৫ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে কেবল ২১ রান করতে পারে বাংলাদেশ। আর তাতেই ১৯৮ রানে থামে বাংলাদেশ নারী দল। দুইশর কম লক্ষ্য দিয়ে ক্যারিবিয়ানদের আটকে রাখা যে কঠিন সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন স্বাগতিকদের দুই ওপেনার। নতুন বলে মারুফা আক্তার ভালো বোলিং করেন বটে। তার প্রথম পাঁচ ওভারে রান আসে ১১। কিন্তু আরেক প্রান্তে অফ স্পিনার সুলতানা খাতুন সুবিধা করতে পারেননি। অভিষিক্ত বাঁহাতি স্পিনার সানজিদা আক্তার মেঘলা বোলিংয়ে এসে ছিলেন আরও খরুচে। ম্যাথিউস ও জোসেফ শুরুতে একটু সময় নেন। পরে ম্যাথিউস স্বভাবজাত স্ট্রোকের জোয়ারে দ্রুত বাড়াতে থাকেন রান। ৫ ওভার শেষে ম্যাথিউসের রান ছিল ২১ বলে ১৪। সেখান থেকে ফিফটি করে ফেলেন তিনি কেবল ৪৪ বলেই। ওই সময় জোসেফের রান ২৮ বলে ১৩। পরে তিনিও দারুণ খেলে ফিফটি করে ফেলেন ৬৫ বলে। ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৯ বলে ৭০ রান করে আউট হন জোসেফ। উদ্বোধনী জুটিতে আসে ১৫৩ বলে ১৬৩ রান। বাংলাদেশের বিপক্ষে যে কোনো উইকেটে দ্বিতীয় সেরা জুটি এটি। এরপর বাকি পথটুকু অনায়াসেই পাড়ি দেন ক্যারিবিয়ানরা। ৯২ বলে সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ম্যাথিউস। ওই ওভারেই বাউন্ডারিতে শেষ করে দেন ম্যাচ। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ একই মাঠে বাংলাদেশ সময় আজ মঙ্গলবার রাত ১২টায়। সরাসরি ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত করতে পরের দুই ম্যাচেই জিততে হবে বাংলাদেশকে। সুযোগ থাকবে একটি ম্যাচ জিতলেও।