চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশের প্রথম দৈনিক ‘জ্যোতি’র শতবর্ষপূর্তি (১৯২১–২০২১)

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী | রবিবার , ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ১২:০৩ অপরাহ্ণ


চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকার জন্মভূমি বললে অত্যুক্তি হবে না। কেননা সাতচল্লিশে দেশভাগের পূর্বে নিখিল ভারত ও নিখিল বঙ্গে পূর্ববঙ্গ হিসেবে পরিচিত ছিলো বর্তমান বাংলাদেশ। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বৃহৎ বঙ্গের অর্ধাংশ কেটে তার সঙ্গে চট্টগ্রামকে জুড়ে দিয়ে যখন নতুন প্রদেশ গঠন করা হয়েছিলো, তখনো এই বাংলাদেশকে পূর্ববঙ্গ নামেই অভিহিত করা হয়েছিলো। সাতচল্লিশে পাকিস্তান গঠিত হলে পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান থেকেই স্বাধীন বাংলাদেশ-এর অভ্যুদয় ঘটে।
এখন আমরা যদি সংবাদপত্রের ইতিহাসকে আলোচনায় নিয়ে আসি, তাহলে আমরা দেখবো ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে বাংলাদেশ ভূখন্ড থেকে কোন দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামে “জ্যোতিঃ” নামে একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়, এই পত্রিকাটিকেই অনায়াসে বর্তমান বাংলাদেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা বলা যায়। চট্টল গৌরব মহিম চন্দ্র দাশ, যিনি চট্টগ্রামে স্বাদেশিকতা, স্বাধীনতা সংগ্রাম, অসাম্প্রদায়িক জাতীয় রাজনীতি, মানবিক সংস্কৃতি ও জীবনবোধ এবং লোকহিতকর বহু কর্মের উদ্বোধন ও প্রসার ঘটিয়েছিলেন, তিনিই জ্যোতিঃ প্রকাশ করে পূর্ববঙ্গ ও চট্টগ্রামে একটি দৈনিক পত্রিকার আকাল ঘুচিয়েছিলেন।
এখানে জ্যোতির আলোচনা মুলতবি রেখে জ্যোতির স্রষ্টা মহিম বাবুর কিছু কথা বলার অবকাশ বেছে নেয়া হলো। তাঁর সৃষ্টি অনেক বড় হয়েছিলো, কিন্তু তার স্রষ্টা যে আরো বড় ছিলেন। মহিম বাবুর কাছে চট্টগ্রামের সংবাদপত্র শিল্পের ঋণ অনেকখানি। শুধু ‘জ্যোতি’ নয়, সাপ্তাহিক ‘পাঞ্চজন্য’ ও ‘সাপ্তাহিক আলোক’ এরও সম্পাদক ছিলেন তিনি।
দৈনিক পাঞ্চজন্য (১৯২৯) তাঁরই প্রতিষ্ঠিত ও তাঁরই আদর্শে পরিচালিত। সাপ্তাহিক ‘দেশপ্রিয়’ও তিনিই প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
মহিমচন্দ্র দাশ চট্টগ্রামের সর্বজননন্দিত জননায়ক এবং সুপ্রসিদ্ধ দেশসেবক ও সমাজকর্মী। তিনি দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে জননায়ক যাত্রামোহন সেনের বিলাত ফেরত ব্যারিষ্টার পুত্র যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত চট্টগ্রামের রাজনীতিতে অবতীর্ণ হলে মহিমচন্দ্র দাস তাঁকে কংগ্রেস সভাপতির পদ ছেড়ে দিয়ে নিজে সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত (ততদিনে তিনি ‘দেশপ্রিয়’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন) চট্টগ্রাম থেকে কলকাতায় গিয়ে সেখানে অবস্থান করে বঙ্গীয় ও সর্বভারতীয় রাজনীতিতে অংশ নিতে থাকলে তাঁর পক্ষে যখন চট্টগ্রাম কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হচ্ছিল না, তখন মহিমচন্দ্র দাসকে (১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ) পুনরায় কংগ্রেস সভাপতির পদ গ্রহণ করতে হয়। সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন মার্স্টারদা সূর্যসেন।
মহিম বাবুর চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল তাঁর ত্যাগ। তিনি কখনও প্রতিদান চাইতেন না। দেশের জন্য, দশের জন্য তিনি জীবন উৎসর্গ করেছিলেন কিন্তু তিনি নেতৃত্বের বা সুখ্যাতির মোহে তা করেননি। তিনি ছিলেন নীরব কর্মযোগী। কর্মই ছিল তাঁর সাধনা।
মহিম বাবু এমএলএ-ও নির্বাচিত হয়েছিলেন। এমএলএ হিসেবে যে ১৫০ টাকা ভাতা তিনি পেতেন, তা কংগ্রেসের কাজের জন্য তিনি দান করেছিলেন। তিনি পটিয়া থানা হতে লোকাল বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন কিন্তু যখন দেখলেন সেখানে কাজ করার কিছু নাই তখন একদিনের জন্যও বোর্ডে যোগদান না করে স্বীয় পদত্যাগ পত্র দাখিল করেছিলেন।

মহিমচন্দ্র (১৮৭২) ও তাঁর যমজ জ্যেষ্ঠাগ্রজ রায় বাহাদুর ডা. বেনীমোহন দাশ (১৮৭২) পটিয়া থানার ভাটিখাইন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কনিষ্ঠ ভ্রাতা সারদাচরণ দাস, পাঞ্চজন্য সম্পাদক অম্বিকা চরণ দাস ও মতিমহল থিটোর্সের সঙ্গীত পরিচালক হরিপ্রসন্ন দাস তাঁর বৈমাত্রেয় ভ্রাতা। এই ভ্রাতাগণের মধ্যে পরস্পরের প্রতি যে স্নেহ প্রীতি, ভালবাসা ও ভক্তির বন্ধন ছিলো তা আদর্শস্থানীয় সন্দেহ নাই। তাঁর চারপুত্র প্রিয়ব্রত, সুব্রত, দেবব্রত ও সত্যব্রত এবং দুই কন্যা শ্রীমতী নমিতা ও শ্রীমতী অনিতা। তাঁর দ্বিতীয় পুত্রকে তিনি পোষ্যরূপে দান করেছিলেন, এতেও তাঁর হৃদয়ের উদারতা ও মহানুভবতা সুপ্রকাশ হয়েছে। এই পুত্র চট্টগ্রামে সুপরিচিত দত্ত চিকিৎসক ডাঃ তড়িৎ কান্তি গুহ। তাঁর ভ্রাতুপুত্র চট্টগ্রামের বিখ্যাত নেতা নলিনীকান্ত দাস।
পাঠশালার শিক্ষা সমাপনান্তে তিনি পটিয়া স্কুলে অধ্যয়ন করেন। স্কুলের শিক্ষকগণ বালকের মেধা ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধি দেখে বিস্মিত হন। তখন থেকেই তাঁর বক্তৃতাশক্তি, তর্ক, জ্ঞানগবেষনা প্রভৃতি তাঁকে সকলের বিস্ময়স্থান করে রেখেছিলো। অতঃপর কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বি এ ও বি এল উপাধি লাভ করে তিনি কর্মজীবন আরম্ভ করেন।
তিনি প্রথমে কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকতা গ্রহণ করেন। তিনি অংক শাস্ত্রের শিক্ষক ছিলেন। অল্পদিনের মধ্যেই তিনি ছাত্রমহলে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হন। কিছুদিন পরে তাঁকে নোয়াখালি জেলা স্কুলে বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি স্বীয় জন্মভূমি পরিত্যাগ করে উক্ত সরকারি পদ গ্রহণে অস্বীকৃত হন। অতঃপর তিনি কিছুকাল কাজেম আলী স্কুলে ও ন্যাশনাল স্কুলে শিক্ষকতা করেন। স্বদেশী আন্দোলনের সময় তিনিই অন্যতম উদ্যোগী হয়ে সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের আচার্য্য হরিশ দত্তের সহযোগে নন্দনকাননে ন্যাশনাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
অতঃপর তিনি ওকালতী ব্যবসায়ে যোগদান করেন এবং স্বীয় অর্পূ্ব প্রতিভাবলে ঐ ক্ষেত্রেও অল্পকালের মধ্যেই সুখ্যাতি লাভ করতে সক্ষম হন। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন আরম্ভ হলে তিনি ঐ আন্দোলনে যোগদান করেন এবং তখন হতেই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত হয়। তিনি সাংবাদিকতা ক্ষেত্রেও স্বীয় বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করেন। তিনি সাপ্তাহিক ‘পাঞ্চজন্য’ পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করে সুদক্ষভাবে তার সম্পাদনা ও পরিচালনা করেছিলেন। সেই সময়ে আইন ব্যবসায়েও তিনি যথেষ্ট কৃতিত্ব প্রদর্শন করছিলেন এবং মাসিক ৬০০/৭০০ টাকা তিনি উপার্জন করতেন।
মহাত্মা গান্ধী ভারতীয় রাজনীতিতে আগমনের পর তিনি একটি অপূর্ব কর্মসূচী দিয়ে গোটা ভারতবর্ষকে আন্দোলিত করেছিলেন। সেই কর্মসূচি হলো অসহযোগ আন্দোলন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে যখন এই অসহযোগের বাণী নিয়ে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ চট্টগ্রামে আসলেন, তখন দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহনের সঙ্গে তিনি এবং আরও কয়েকজন ওকালতী ব্যবসা পরিত্যাগ করলেন। তিনি অবশিষ্ট জীবনে পুনরায় ঐ ব্যবসায়ে প্রত্যাবর্ত্তন করেন নি। এই সময় হতে তিনি সম্পূর্ণরূপে নিজকে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিয়োজিত করেছিলেন।
এই সময়ে দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহনের সহকর্মীরূপে তিনি যেভাবে চট্টগ্রামে আন্দোলন পরিচালনা করেছিলেন তাই সমগ্র ভারতে চট্টগ্রামকে সুপরিচিত করে তুলেছিল এবং মহাত্মা গান্ধী তাঁর সেই সুখ্যাত ‘Chhittagong to the fore’ প্রবন্ধ লিখে চট্টগ্রামকে রাজনীতিক ক্ষেত্রে অমর করে দিয়েছেন। প্রকৃত পক্ষে দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহনের সাফল্যের প্রধান হেতুই ছিলেন মহিমচন্দ্র। সেই সময়ে তিনি অন্যান্য সহকর্মীগনের সঙ্গে কারাদন্ডে দণ্ডিত হন। কারাগার হতে প্রত্যাবর্তন করে তিনি চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেস কমিটির সভাপতি পদে যুক্ত হন এবং মৃত্যু পর্যন্ত তিনি ঐ পদ অলংকৃত করেছিলেন। তিনি অনুভব করতেন এবং বলতেন যে একটা পরাধীন দেশের অধীনতা শৃঙ্খল ছিন্ন করতে হলে চালাকীর দ্বারা তা সম্ভবপর হতে পারে না, তজ্জন্য স্বার্থত্যাগ করতে ও দুঃখ নির্যাতন লাঞ্ছনা বরণ করতে হবে।
মহাত্মাজীর আহ্বানে দেশ যখন পুনরায় সংগ্রাম ক্ষেত্রে পরিণত হল তখন স্বীয় বার্ন্ধক্য ও শারীরিক অসুস্থতা উপেক্ষা করে তিনি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে কুমিরায় লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যোগ দেন। এই সময়ে ১৪৪ ধারা অমান্য করায় তাাঁর প্রতি অর্থদন্ড হয়। তিনি উৎসাহ সহকারেই কারাদণ্ড বরণ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু তথাপি সরকার তাঁর বাড়ির জিনিষপত্র ক্রোক করে সেই অর্থদন্ড আদায় করেছিলো।
১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের বহু হিন্দু গৃহ লুণ্ঠিত হয়েছিল। তখন তিনি কলিকাতা গিয়ে ঐ সম্পর্কে তদন্ত করার জন্য দেশপ্রিয়ের সহযোগে ব্যবস্থা করেছিলেন এবং সেটা যে প্রকৃতপক্ষে হিন্দু মুসলমানের হাঙ্গামা নয় তা সপ্রমাণিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন।
দেশের স্বাধীনতালাভের সঙ্গে দেশের শিল্প বাণিজ্যের উন্নতির যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে তাও তিনি মনে প্রাণে অনুভব করতেন। তাই দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন কটন শিল, বেঙ্গল বার্ম্মা ষ্টীম নেভিগেশন কোম্পানি, ন্যাশনাল কটন মিল প্রভৃতি যাবতীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য তিনি সচেষ্ট ছিলেন।
আমাদের দেশের শিক্ষার অভাব বিশেষভাবে নারী শিক্ষার অব্যবস্থা তিনি অনুভব করেছিলেন বলেই পাথরঘাটা বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। শ্যামাচরণ আয়ুর্ব্বেদ বিদ্যাপীঠের সভাপতিরূপে তার ভিত্তি সুদৃঢ় করার জন্য তিনি যে চেষ্টা করেছিলেন তা থেকেই তাঁর শিক্ষানুরাগ প্রমাণিত হয়।
তিনি চট্টগ্রাম সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে আজীবন সংশ্লিষ্ট ছিলেন এবং বহুকাল তার সভাপতি পদেও বৃত ছিলেন। তিনি সুবক্তা ছিলেন। ব্যঙ্গ চিত্র রচনায় এবং সাহিত্য সমালোচনায় তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন। ‘জাতের বজ্জাতি’ গ্রন্থে তিনি তাঁর সমাজ সংস্কার মূলক চিন্তাধারা পরিবেশন করে গেছেন।
১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ৩ এপ্রিল, ১৩৪৭ বঙ্গাব্দের ২১ চৈত্র, কলিকাতার আইডিয়েল হোমে চট্টলার গৌরব রবি অস্তমিত হয়।
মহিমচন্দ্র দাশ ও তাঁর ভাই ডা. বেণীমোহন দাস চট্টগ্রামে একটি অক্ষয় র্কীতি স্থাপন করে গেছেন। সেটি হলো চট্টগ্রাম আর্বান কোঅপারেটিভ সোসাইটি ও ব্যাংক প্রতিষ্ঠা।
সমবায় আন্দোলনের প্রতি তাঁর বিশেষ অনুরাগ ছিল। তিনি সেন্ট্রাল ব্যাংকের সম্পাদকরূপে ও আর্ব্বান ব্যাংকের সম্পাদক রূপে বহুদিন কাজ করেছেন। কিন্তু সমবায় আন্দোলন মহাজনী কারবার পর্যবসিত হতে দেখে তিনি যারপরনাই দুঃখিত হয়েছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম কর্মাশিয়াল ব্যাংকের সভাপতি ও মহালক্ষ্মী ব্যাংকের ডিরেক্টর ছিলেন।
জ্যোতি ভূমিষ্ঠের পর চট্টগ্রামে সংবাদপত্রের রুদ্ধদ্বার খুলে যায় এবং চলতি ২০২১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শতবর্ষে অনেকগুলি পত্রিকার জন্ম আমরা প্রত্যক্ষ করি। যেমন পাঞ্চজন্য, রাষ্ট্রবাত্তা, দৈনিক পূর্ব পাকিস্তান, আজান, সুনীতি, জমানা ( সম্ভবত সত্যবার্ত্তাও) ইত্যাদি পত্রিকা তখন প্রকাশিত হত। সীমান্ত, কোহিনূর, আওয়াজ সাময়িকী প্রকাশিত হত। দেশভাগের (১৯৪৭) পর ভারত থেকে অনেক সাংবাদিক অপশন দিয়ে পাকিস্তানের চট্টগ্রাম জেলায় আগমন করেন। তাঁরা সাধারণত মোহাজের সাংবাদিক নামে পরিচিত ছিলেন। এই সাংবাদিকরা ক্রমান্বয়ে সংবাদপত্র প্রকাশনায় ব্রতী হন এবং সাংবাদিকতার নবদিগন্ত উম্মোচন করেন। তারা যেসব সংবাদপত্র প্রকাশ করেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ইস্টার্ন এক্সামিনার’ ‘ইউনিটি’ ‘ক্রনিকল’ ইত্যাদি। আলী ও বেগম আলী খান, মাসওয়ানী সাহেব, মোবিন সাহেব, জাফর আহমদ জাভেদ সাহেব এসে চট্টগ্রামের সাংবাদিকতাকে সাবালক করে তোলার কত চেষ্টাই না করলেন।
১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে দৈনিক আজাদীর প্রকাশনা চট্টগ্রামের সংবাদপত্রের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৬০, যেদিন আজাদী প্রকাশিত হলো, বলা যায় চট্টগ্রামের সাংবাদিকতা সেদিন আধুনিক যুগে পদার্পণ করলো।
সে ছিলো আদর্শবাদিতার যুগ; যাঁরা বামপন্থী প্রগতিশীল রাজনীতি করতেন, তারা সংবাদপত্রের কাভারে যুগপৎ রাজনীতি ও সাংবাদিকতায় ডুব দিতেন। চট্টগ্রামের প্রবীণ সাংবাদিক মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, কলকাতায় সাংবাদিকতা করা চট্টগ্রামের মানুষ নজির আহমদ চৌধুরী, শাহ বদিউল আলম, আবদুর রশিদ সিদ্দিকী, কবির আহমদ ইজ্জতনগরী, আলী আহমদ ওলী ইসলামাবাদী, মাহবুব উল আলম, কবি আবদুস সালাম, ওহীদুল আলম, ফররোখ আহমদ নিজামপুরী, গোলাম ছোবান, মোহাম্মদ মোনএম, জয়নাল আবেদীন, লোকমান খান শেরওয়ানী, কাজী কবিরউদ্দিন, রুহুল আমিন নিজামী, মাহবুব উল আলম চৌধুরীর পথরেখা অনুসরণ করে সাংবাদিকতায় এসে পড়েছেন হাবিবুর রহমান খান, মঈনুল আলম, ঢাকা থেকে আগত এ বি এম মূসা, ফজলুর রহমান, আতিকুল আলম, নুরুল ইসলাম (পিপলস্‌ ভিউ- গোমদন্ডী), অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ, সাইফুল আলম, শরীফ রাজা, সাধন কুমার ধর, ওবায়দুল হক, সেকান্দর হায়াত মজুমদার, নজির আহমদ, নুরুল ইসলাম চৌধুরী (বড়লিয়া), নুরুল ইসলাম (পূর্বদেশ-মিরসরাই), নুরুল ইসলাম চৌধুরী (চান্দগাঁও), খালেদ বেলাল, কাজী রশিদ উদ্দিন, বেলাল বেগ, বেলাল মোহাম্মদ, শহীদ সাবের, বিমেলন্দু বড়ুয়া, কাজী জাফরুল ইসলাম, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, মাহবুব তালুকদার, মোহাম্মদ ইউসুফ, অরুণ দাশগুপ্ত, মোহাম্মদ মোসলেম খান, মাহবুব উল আলম। চট্টগ্রামের সাংবাদিকতার স্বর্নযুগ এস গেল। মনে পড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের বাংলা গানের স্বর্ণযুগের পন্থি-
“এ কি সোনার আলোয় ভরিয়ে দিলে”

লেখক : সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা, সংস্কৃতি সংগঠক

পূর্ববর্তী নিবন্ধদৈনিক আজাদী : অতন্দ্রিত প্রত্যাশার অনন্য সকাল
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের কবিগান