ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের একমাস পূর্তি উপলক্ষে দেশব্যাপী ‘শহীদী মার্চ’ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। চট্টগ্রামে এই কর্মসূচি পালিত হয় নগরের ষোলশহর স্টেশনে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ছাত্র–জনতার ঢল নামে এই কর্মসূচিতে। স্লোগানে স্লোগানে আবারও উত্তাল হয়ে উঠে চট্টগ্রামের রাজপথ।
এদিন বিকাল সাড়ে ৩টার পর ষোলশহর স্টেশন থেকে মিছিল নিয়ে বহদ্দারহাট এলাকা ঘুরে মুরাদপুর এলাকায় গিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়। এ সময় ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘আমাদের শহীদেরা, আমাদের শক্তি’, ‘আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আইয়ুব–মুজিব–হাসিনা স্বৈরাচার মানি না’, ‘শহীদের স্মরণে, ভয় করি না মরণে’স্লোাগানে উত্তাল হয়ে উঠে চারদিক। পরে মিছিল নিয়ে মুরাদপুর ও বহদ্দারহাট মোড়ে গিয়ে সবাই দৃপ্ত কণ্ঠে শপথ নেন ‘এই লড়াই শেষ লড়াই নয়। আমাদের লড়াই চলবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ ও খান তালাত মাহমুদ রাফির নেতৃত্বে এ কর্মসূচি পালিত হয়। অংশ নেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এবং এর আওতাধীন কলেজের শিক্ষার্থীসহ ছাত্রজনতা। এর আগে গত বুধবার চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেট, লুটপাট এবং হয়রানিসহ সব ধরনের অন্যায় রুখতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচিতে ছাত্রনেতারা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এমন দেশ তৈরি করতে চায়, যেখান থেকে নতুন কোনো স্বৈরাচার তৈরি হবে না। ধর্ম বর্ণ রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে চায় শিক্ষার্থীরা। তাই বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই শেষ হয়ে যায়নি। এসময় শিক্ষার্থীদের হাতে, ‘সীমান্ত হত্যা বন্ধ কর, করতে হবে’; ‘পানি পানি পানি চাই, তিস্তার পানি চাই’; ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ নানা লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ডে দেখা যায়
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, যারা ছাত্র জনতার এই বিজয়কে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র লিপ্ত রয়েছে তাদের হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি। এই রাষ্ট্র সংস্কারে ছাত্র জনতা এভাবেই মাঠে থাকবে। ছদ্মবেশে থাকা আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করা হবে। রাসেল আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে লুটপাট, চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়ানোর কারসাজিতে যারা মেতে উঠেছে তারা সাবধান না হলে প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধেও ছাত্র সমাজ মাঠে নামবে। এসময় শেখ হাসিনাসহ ছাত্র আন্দোলনে হত্যা–নির্যাতনের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি।
রাফি বলেন, শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা নতুন ভাবে অর্জন করেছি, তা সমুন্নত রাখতে লড়াই অব্যাহত রাখার শপথ নিচ্ছি। রাষ্ট্রের কাঠামোয় এখনো ফ্যাসিবাদ রয়ে গেছে। রাষ্ট্রের কাঠামো এখনো ঠিকমতো কাজ করছে না। সংস্কার করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করবে ছাত্র সমাজ।