চাল ও নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর হাতে সিন্ডিকেট দমন এবং মজুতবিরোধী আইন প্রয়োগের দাবি জানিয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি চট্টগ্রাম জেলা শাখা।
চালের উর্ধমূল্যরোধ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দাবিতে ওয়ার্কার্স পার্টি কেন্দ্র ঘোষিত দেশব্যাপী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক-এর মাধ্যমে খাদ্যমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) সকাল ১১টায় ওয়ার্কার্স পার্টি চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেয়া হয়।
ওয়ার্কার্স পার্টি চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান-এর নেতৃত্বে স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন জেলা কমিটির সদস্য শামসুল আলম, আব্দুর রশিদ, সুপায়ন বড়ুয়া, অধ্যাপক শিবু কান্তি দাশ, যুব মৈত্রী চট্টগ্রাম জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক খোকন মিয়া। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এর পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন জেলা সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক রূপান্তর চাকমা।
স্মারকলিপি প্রদানকালে ওয়ার্কার্স পার্টি চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান বলেন, “দেশে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের পরও চালের দাম প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সরকার চলতি মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল তার চেয়ে ৯ লাখ টন কম সংগ্রহ হয়েছে। চালকল মালিকরা চুক্তি অনুযায়ী সরকারকে চাল দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ইতিমধ্যে বিশ্ব বাজারে চাল রপ্তানিকারক দেশসমূহ চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এর সাথে যোগ হয়েছে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে কিন্তু বাজারে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। এই পরিস্থিতি নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জীবনধারণের ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। গরীব ও প্রান্তিক মানুষ দুঃসহ অবস্থায় পড়েছে।”
শরীফ চৌহান বলেন, “মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চালের দাম রাখতে হলে অবিলম্বে মজুতবিরোধী আইন প্রয়োগ করা উচিত। মজুত করা খাদ্যদ্রব্য উদ্ধার করে মজুতকারীদের দণ্ডিত করলে চালের বাজারের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে আসবে। পাশাপাশি কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হলে সরকারি ধান-চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রায় যে ঘাটতি এখনও রয়ে গেছে তা প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে কিনে পূরণ করতে হবে।”
স্মারকলিপিতে বলা হয়, সরকারের সর্বশেষ খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতিমালায় যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঘোষণা করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে উৎপাদক কৃষকদের উৎসাহ মূল্য প্রদান, খাদ্যশস্যের বাজারদর যৌক্তিক পর্যায়ে স্থিতিশীল রাখা, খাদ্য নিরাপত্তা মজুত গড়ে তোলা ও সরকারি খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থায় সরবরাহ অব্যাহত রাখা কিন্তু খাদ্য পরিস্থিতি এসব লক্ষ্য উদ্দেশ্যের বিপরীত দিকই নির্দেশ করছে।
কৃষকদের উৎসাহ মূল্য দেয়ার যে কথা বলা হয় তা নিছক কৌতুক মাত্র। আমন মৌসুমে প্রতি কেজি ধানে উৎপাদন খরচের ওপর মাত্র এক টাকা বাড়তি মূল্যে ধান সংগ্রহ করা হয়েছে অথচ পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাজার দরের চেয়ে অনেক বেশি দরে ধান ক্রয় করা হয়।
ধান-চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রাও অনেকগুণ বেশি কিন্তু বাংলাদেশে ধান-চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা যেমন উৎপাদনের তুলনায় নেহাতই কম তেমনি দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে এমনই কৃপণতা করা হয় যে মনে হয় কৃষকদের করুণা করা হচ্ছে। আর ঐ নির্ধারিত দামও কৃষকরা পান না। ক্রয়কেন্দ্রে তাদের হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়।
আর সংগ্রহ শুরু হয় যখন প্রান্তিক ও মধ্যচাষীদের হাত থেকে ধান চলে যায়। সুতরাং উৎসাহমূল্য প্রদান কথার কথাই থেকে যাচ্ছে।
এবার আমন ও বোরো মৌসুমে ভালো উৎপাদনের খাদ্যশস্য দেশের চাহিদার চেয়ে উদ্ধৃত্ত রয়েছে অথচ প্রতিদিনই চালের দাম বাড়ছে।
ধানের দাম বেশি অজুহাতে চালকল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে কেবল নয় সরকারের সাথে চুক্তিমতো চাল সরবরাহ করতেও অস্বীকার করছে।
চালের দাম বাড়বে এই ধারণায় বিপুল পরিমাণ ধান-চাল মজুত করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার মজুতবিরোধী আইন প্রয়োগ করতে পারে কিন্তু সেরকম কিছু ভাবা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। চালকল মালিকদের চুক্তিমতো চাল সরবরাহ বাধ্য করার জন্য জরিমানাসহ দণ্ডারোপেরও বিধান আছে।
আসলে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সিণ্ডিকেটের কাছে প্রতিবারের মতো এবারও সরকার অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে।
খাদ্য নিরাপত্তার মজুত গড়ে তুলতে খাদ্য অধিদপ্তর যে নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে তার প্রমাণ ধান-চাল সংগ্রহের সময়সীমা বাড়িয়েও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ লাখ টন কম সংগ্রহ হওয়া। এই মজুত যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না তা কাউকে বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না।
চালের মূল্য ভোক্তার ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে এবং অতীতের মতো খাদ্য থাকার পরেও কেউ যাতে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ যাতে কেউ সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য আট দফা দাবি জানানো হয়।
দাবিগুলো হলো সরকারি ধান-চাল ক্রয়ের যে লক্ষ্যমাত্রায় যে ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ, চালকল মালিকদের চুক্তিমতো চাল দিতে বাধ্য করা, অন্যথায় জামানত বাজেয়াপ্ত জরিমানাসহ দণ্ডাদেশ প্রদান, মজুতবিরোধী আইন প্রয়োগে মজুত করা খাদ্য উদ্ধার ও মজুতকারীকে দণ্ড প্রদান, চালের বাজারে সক্রিয় সিন্ডিকেট কঠোর হস্তে দমন, কৃষকদের ধানসহ কৃষি পণ্যের উৎসাহ মূল্য প্রদানের জন্য উৎপাদনের খরচ বিবেচনায় উপযুক্ত মূল্য ও ধান চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি পূর্বে নির্ধারণ করা, গুদাম সংকট, ক্রয় কেন্দ্রের অপ্রতুলতা ও হয়রানি বন্ধের জন্য প্রতি উপজেলায় পেডি সাইলে নির্মাণ ও সমবায় ভিত্তিতে তার পরিচালনা, উৎপাদক কৃষকদের সমবায় করে তাদের সাশ্রয়ী সুদে ঋণ দেয়া যাতে ধান উঠার সময় নিজেদের উদ্বৃত্ত নিজেরাই পেডি সাইলোসহ সুবিধাজনক স্থানে গুদামজাত করা ও অবস্থা বুঝে তা বিক্রি করে বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখতে পারে, বছরের ৫ মাস ১০ টাকা কেজি মূল্যে ৩০ কেজি চাল প্রদানের কর্মসূচি বছরব্যাপী বিস্তৃত করা এবং সারাদেশে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা।