ইপিজেডে দুই পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সংঘর্ষ, আহত ২০

তুচ্ছ ঘটনার জের । কারখানা দুটিতে কয়েক দিনের ছুটি ঘোষণা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১২ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম ইপিজেডে দুই পোশাক কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে দ্বিমুখী সংঘর্ষে নারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। গত বুধবারের একটি ঘটনার জের ধরে গতকাল শনিবার দুই কারখানার শ্রমিকেরা পরস্পরের সাথে সংঘর্ষে জড়ায়। পরবর্তীতে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কারখানা দুইটির একটিকে আগামী সোমবার এবং অপরটিকে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৯টার দিকে শুরু হয়ে এ সংঘর্ষ এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে। এসময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

বেপজা, পুলিশ, শ্রমিক এবং স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, বাৎসরিক ৯ শতাংশ বেতন বৃদ্ধিসহ নানা দাবিতে বেশ কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিল বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। তাদের আন্দোলনের মুখে অনেক কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নেয়। দেখাদেখি একই দাবিতে অন্য কারখানাগুলোর শ্রমিকরাও আন্দোলন শুরু করে। চীন এবং বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগে গড়া জেএমএস কারখানার শ্রমিকেরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গত বুধবার ইপিজেডের কাস্টমস গেট পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলন করছিল। ওই সময় কোরিয়ান কোম্পানি মেরিমোর শ্রমিকদের ছুটি হলে তারা বাইরে চলে যেতে চায়। কিন্তু গেট বন্ধ থাকায় তারা বেরুতে পারছিল না। এই সময় মেরিমোর শ্রমিকেরা গেট খুলে দেয়ার জন্য জেএমএস গ্রুপের শ্রমিকদের চাপ দেয়। তারা গেট না খোলায় এক পর্যায়ে মেরিমোর শ্রমিকেরা জোর করে গেট ফাঁক করে চলে যায়। ওই সময় প্রথম দুই পক্ষের হাতাহাতি হয়। গত বৃহস্পতিবার জেএমএস কারখানা বন্ধ থাকায় কোনো অসুবিধা হয়নি। তবে গতকাল শনিবার সকাল ৯টা নাগাদ ইপিজেডের এক নম্বর সড়কস্থ জেএমএস এবং রাস্তার অপর পাশের মেরিমো কারখানার শ্রমিকেরা আবারো সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই সময় এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে কারখানায় ঢিল ছোঁড়ার অভিযোগ করে। পরবর্তীতে মেরিমোর দুইটি ইউনিটের অন্তত ৬ হাজার শ্রমিক এবং জেএমএসের প্রায় ৬ হাজার শ্রমিকদের বেশির ভাগই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই সময় লাঠিসোটা নিয়েও পরস্পরের প্রতি হামলা চালায় তারা। এতে নারী শ্রমিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে ১০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে মহিবুল (২৬), ফরিদা (৪০), ইলিয়াস (৩৪), বিদ্যুৎ (৩০), শিউলি (২৪), চঞ্চল (২৮) ও মনোয়ারা (৩৩) নামের ৭ জনের নাম পাওয়া গেছে।

দুইটি শিল্প গ্রুপের শ্রমিকদের মারামারির খবর পেয়ে ইজিজেড থানা পুলিশ, শিল্প পুলিশ এবং সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে দুইপক্ষকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরমধ্যে দুপুরের দিকে একটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে শ্রমিকদের ঘরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। দুপুরের পরে ছুটি দিয়ে দেয়া হয় অপর কারখানাটিতেও। একইসাথে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ এড়াতে মেরিমো কারখানা আগামী সোমবার পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে মঙ্গলবারে খোলা হবে। অপরদিকে জেএমএস আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে বুধবারে চালু হবে বলে জানিয়েছেন বেপজার নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সোবহান।

ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানান, এটি বেতন ভাতা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কোনো সংঘর্ষ নয়। আসলে ইগো থেকেই দুইটি দিন তারা নষ্ট করে দিল। তিনি বলেন, আন্দোলনের সময় ইপিজেডের মূল গেইট খোলা নিয়ে এক কারখানার শ্রমিকের সঙ্গে আরেক কারখানার শ্রমিকের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এসময় এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঢিল ছুড়তে থাকে। এতে অনেকেই আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত আছে। ঘটনার ব্যাপারে কোনো মামলা হয়নি জানিয়ে ওসি জানান, কেউ অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি।

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুস সোবহান বলেন, জেএমএস এবং মেরিমো কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থেকে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। দুইটি কারখানা ছুটি দিয়ে দেয়া হয়েছে। কারখানা দুইটির একটিতে আগামী সোমবার এবং অপরটিতে মঙ্গলবার পর্যন্ত ছুটি থাকবে। ইপিজেডের পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত। অন্যান্য কারখানায় স্বাভাবিক উৎপাদন চলছে। এটি বেতন ভাতা নিয়ে কোনো সংঘর্ষ নয় বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কথা কাটাকাটি এবং ঢিল ছোঁড়া নিয়ে দুইটি কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখানে আর্মি, নেভি, শিল্প পুলিশ এবং মেট্রোপলিটন পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

কয়েকজন কারখানা মালিক বলেছেন, বুধবারের সংঘর্ষের জের ধরে আজ সংঘর্ষ হয়েছে। এই ব্যাপারে বেপজাসহ পুলিশ প্রশাসনের আরো সতর্ক থাকা প্রয়োজন ছিল। অবশ্য শিল্প পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ছোট্ট একটি ঘটনাকে যে তারা এতো বড় করে তুলবে তা তাদের ধারণাতেই ছিল না। তবুও ইপিজেডে সকাল থেকে পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছিল। কিন্তু দুইটি কারখানার প্রায় ১২ হাজার শ্রমিক যেভাবে সংঘর্ষে জড়িয়েছে সেটা বিস্ময়কর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ
পরবর্তী নিবন্ধউপলব্ধিতে বেড়ে উঠছে সেই শিশু