অনেকের স্বাক্ষরে শ্রমিকও শিক্ষক হয়ে গেছে : মেয়র

কৌশলে কেউ ফাঁকি দিলে মেনে নেওয়া হবে না চসিকের শিক্ষকদের একগুচ্ছ প্রস্তাবনা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৯ নভেম্বর, ২০২৪ at ৮:০০ পূর্বাহ্ণ

রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে বা অন্য কোনো কৌশলে কেউ ফাঁকি দিলে তা মেনে নেয়া হবে না বলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) পরিচালিত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সতর্ক করেছেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এসময় একাডেমিক কাজ বাদ দিয়ে দলাদলি করা উচিৎ নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। একাডেমিক কার্যক্রমে গতি আনতে ভিজিল্যান্স টিম গঠন এবং নিজেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সারপ্রাইজ ভিজিট করার ঘোষণা দেন মেয়র। গতকাল টাইগারপাস নগর ভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ে চসিক শিক্ষা বিভাগের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি। এতে উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, শিক্ষা কর্মকর্তা মোছাম্মৎ রাশেদা আক্তার এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ।

শিক্ষকদের একগুচ্ছ প্রস্তাবনা : শিক্ষক সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত কয়েক বছরে শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলি তৈরি হয়েছে দাবি করে তা নিরসনসহ সভায় একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছেন শিক্ষকরা। প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছেযে সব প্রতিষ্ঠান ভারপ্রাপ্ত প্রধান দিয়ে চলছে সেগুলোর প্রধানদের ভারমুক্ত করা। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করা। শিক্ষার্থীদের জন্য মিড ডে মিল চালু করা। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতে দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বেতন ফি মওকুফ করা। শিক্ষকদের নামে বেনামি চিঠি দিয়ে হয়রানি বন্ধ করা। রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে শিক্ষকদের হয়রানি বন্ধ করা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকদের মধ্যে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন চালু করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত পরিদর্শনের জন্য ভিজিল্যান্স টিম চালু করা। দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা শিক্ষকদের বদলি করা। যে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মার্কেটে করা হয়েছে সেগুলোর জন্য পৃথক ক্যাম্পাস অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা করা।

শিক্ষকরা মনে করেন, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষা কর্মকর্তা পদে প্রেষণে কর্মকর্তা আনলে ঘনঘন বদলির কারণে প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। তাই বিদ্যমান শিক্ষকদের মধ্যে অথবা অন্যান্য সরকারি কলেজ থেকে এসব প্রশাসনিক পদে পদায়ন করা। সভায় চসিকের শিক্ষা বিভাগের মান গত কয়েক বছরে কমে গেছে বলেও অভিযোগ করেন একাধিক সিনিয়র শিক্ষক।

মেয়র যা বললেন : ডা. শাহাদাত বলেন, আপনার আজ দলাদলির যে অভিযোগ করেছেন তা হতাশাজনক। আসলে একাডেমিক কাজ বাদ দিয়ে শিক্ষকদের দলাদলি করা উচিৎ নয়। যে কারো যে কোনো মতাদর্শে বিশ্বাস থাকতে পারে, কিন্তু সেটা অফিস টাইমের বাইরে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে তার চর্চা করা উচিৎ।

তিনি বলেন, আমি নিজে একটি রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করি, একটি দল করি। কিন্তু আমি এটাও মনে করি, রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় থাকবে। আর যখন আমি একটা প্রশাসনের দায়িত্বে থাকব সেখানে রাজনীতি টেনে আনব না। রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে কোনো অন্যায় করবনা। এ জন্য চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের আমি আসতে বারণ করি। অথচ আমিই সন্ধ্যা হলে দলীয় কার্যক্রমে যাই। ঠিক একইভাবে এখানে যারা এসব দলবাজি করবে তাদেরকে আমি বরদাস্ত করব না।

মেয়র বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে ফাঁকি দেয়া মেনে নেয়া হবে না। ছাত্ররা যাতে ঠিকমত পড়াশোনা করে, ঠিকমত যাতে তারা ক্লাসে আসে, কোনো ছাত্র ক্লাস যাতে ফাঁকি না দেয়, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত যে টাইমিং আছে সে টাইমিংএ যাতে সবাই একাডেমিক কার্যক্রমে থাকে তা নিশ্চিতে শিক্ষকদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোনো শিক্ষক যাতে বাড়ির পাশে পোস্টিং থাকায় ক্লাসের ফাঁকে বাসায় চলে না যায়।

প্রধান শিক্ষকদের উদ্দেশে মেয়র বলেন, প্রধান শিক্ষককে ইনিয়েবিনিয়ে বিভিন্ন ধরনের কৌশলে বা বিভিন্ন প্রেসার দিয়ে চলে যাওয়ার কোনো উদাহারণ যদি থাকে, এ ধরনের ফাঁকিবাজ কোনো শিক্ষক যদি থাকে, কোনো প্রধান শিক্ষককে উপর হুমকি দেয় কিংবা এ ধরনের কাজে লিপ্ত হয় তাদের তালিকা আমাকে দিবেন। সে যত বড়ই শক্তিশালী হোক না কেন শাস্তি হবে।

ডা. শাহাদত বলেন, শিক্ষা বিভাগে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা হবে। অতীতে কিছু হয়েছে। অনেকের স্বাক্ষরে শ্রমিকও শিক্ষক হয়ে গেছে। আমি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় এটা আর হবে না। ইতিমধ্যে অনেকে আমার সাথে দেখা করতে ঘোরাঘুরি করছিল, আমি তাদেরকে মানা করে দিয়েছি। সামনে একাডেমিক কার্যক্রমে গতি আনতে ভিজিল্যান্স টিম গঠন করব এবং নিজেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সারপ্রাইজ ভিজিট করব। শিক্ষকদের যোগ্যতাভিত্তিক পদোন্নতির জন্যও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়া হবে।

মেয়র বলেন, যে আন্দোলনের মাধ্যমে আজকে একটি গণঅভ্যুত্থান হয়েছে সে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল কনসেপ্ট ছিল মেধার মূল্যায়ন নিশ্চিতকরণ। ওই আদর্শকে সমুন্নত রেখে আমরা যদি চলি তাহলে সমস্ত দলাদলি ভুলে গিয়ে দেশ গঠনের কাজে ছাত্ররা যাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে সেই শিক্ষাই অবশ্যই দেব।

তিনি বলেন, ছাত্রদের অনেক ইতিবাচক ভূমিকা আছে। তারা রাস্তাঘাটে ট্রাফিক বিভাগের কাজ করেছে। তারা তো আন্দোলন করেছেই। তারা বিভিন্ন জায়গায় পাহারা দিয়েছে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ করেছে। কাজেই আমরা তাদেরকে দিয়ে অনেক ভাল কাজ করাতে পারি। মেয়র বলেন, বাবার পরে যদি কোনো ছাত্র কাউকে মান্য করে সেটা হচ্ছে শিক্ষক। আমরা যখন দেখি যে একজন শিক্ষককে একটা ছাত্র অপমান করছে ভালো লাগে না। যখন আবার একটু গভীরে যাই, তখন স্পষ্ট হয় কেন একটা ছাত্র শিক্ষককে অপমান করেছে বা শিক্ষকের সাথে উল্টাপাল্টা কথা বলেছে। দেখা যাচ্ছে সেখানে চরম অসঙ্গতি। হয়তোবা সেখানে অনেক দুর্নীতির বিষয় ছিল। হয়তোবা এমন এমন কিছু কথাবার্তা চলে আসে যেগুলো আমি এখানে বলতে চাচ্ছি না। কাজেই এই বিষয়গুলোতে আমাদের শিক্ষকদের সতর্ক থাকতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাসিনাসহ ১৮৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
পরবর্তী নিবন্ধএমইএস কলেজে ছাত্রদলের প্রচারে শিক্ষার্থীদের বাধা, হাতাহাতি