ড. মঈনুল ইসলামের কলাম

| বৃহস্পতিবার , ১৩ জানুয়ারি, ২০২২ at ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ

শ্রীলংকার অর্থনৈতিক মেল্টডাউন
রাজাপাকসে পরিবারের একনায়কত্বের ফসল

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে অগ্রসর অর্থনীতির দেশ শ্রীলংকা, যেখানে মাথাপিছু জিডিপি চার হাজার ডলারের বেশি। শ্রীলংকার ৯৫ শতাংশ মানুষ শিক্ষিত, তাদের শিক্ষাব্যবস্থা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে গণমুখী। তাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থাও দক্ষিণ এশিয়ার সেরা। একমাত্র ভারতের কেরালার স্বাস্থ্যব্যবস্থা এর চাইতে উন্নততর ও সর্বজনীন। দক্ষিণ এশিয়ার পর্যটনের আকর্ষণের বড় ঠিকানাও ছিল শ্রীলংকা। শ্রীলংকান তামিল টাইগারদের ওপর সরকারী বাহিনীর বিজয়ের মাধ্যমে ১৯৮৩ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত চলা গৃহযুদ্ধের সমাপ্তির পর বিশ্বের কাছে একুশ শতকের সফল অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল হয়ে উঠার সম্ভাবনা ধারণ করছিল দেশটি। কিন্তু, ঐ গৃহযুদ্ধে একতরফা বিজয় অর্জনের সময় প্রায় ৪০,০০০ থেকে ৭০,০০০ তামিল সিভিলিয়ান জনগণকে বিচার-বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে জাতিসংঘের তদন্ত কমিটি অভিযোগ উত্থাপন করলে বিশ্বের কাছে তদানীন্তন ক্ষমতাসীন সরকার প্রবল বিরূপ সমালোচনার পাত্রে পরিণত হয়। সরকার এবং সংখ্যাগুরু সিংহলীরা এ-ধরনের কোন হত্যাকান্ড ঘটেনি দাবি করে কোন রকম আন্তর্জাতিক বিচার তারা চালাতে দেবে না বলে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। ফলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং প্রতীচ্যের বেশিরভাগ দেশ শ্রীলংকাকে একপ্রকার ‘অস্পৃশ্য রাষ্ট্রের’ (pariah state) মত বৈরী মর্যাদার অবস্থানে নিয়ে যায়। গৃহযুদ্ধে বিজয় এসেছিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের (রাজাপক্ষ) শাসনামলে, যিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের বড়ভাই। মাঝখানে এক মেয়াদের জন্য মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মৈত্রীপালা সিরিসেনার কাছে হেরে যাওয়ায় বিরোধীদলের নেতার আসনে বসেছিলেন। কিন্তু, ঐ সময়ে শ্রীলংকার ভোটের রাজনীতিকে দলীয় জোর-জবরদস্তির প্রতিযোগিতায় পর্যবসিত করে রাজাপাকসে পরিবার পরবর্তী নির্বাচনে আবারো জয়লাভ করে ক্ষমতায় ফিরে আসে। ক্ষমতায় আসীন হয়ে এবার বড়ভাই মাহিন্দা ছোটভাই গোটাবায়াকে প্রেসিডেন্ট পদে বসিয়ে নিজে প্রধানমন্ত্রী বনে গেলেন। গৃহযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের ওপর সিংহলী জাতিসত্তার যে উগ্র-আধিপত্য স্থাপনের খায়েশ বাস্তবরূপ পেয়েছিল সেটাই রাজাপাকসে পরিবারের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়ায় শ্রীলংকার গণতন্ত্রের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় বিপদ ডেকে এনেছে মনে হয়।

সারা বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে গত এক বছর ধরে শ্রীলংকার অর্থনীতি কঠিন সংকটে ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে। দেশটিতে আমদানীকৃত পণ্যের ক্রমবর্ধমান ঘাটতি জনগণের জীবনকে পর্যুদস্ত করে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেল এবং এলএনজি’র দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় শ্রীলংকায় পেট্রোল, এলপিজি এবং ডিজেলের দাম ৮৫ শতাংশ বাড়িয়েও চরম ঘাটতি সংকট এড়ানো সম্ভব হয়নি। এখন জ্বালানী রেশনিং চালু করতে যাচ্ছে তারা। নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সংঘবদ্ধ মজুতদারি এতই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে অনেকগুলো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহে সৃষ্ট কৃত্রিম সংকট মনিটরিং করার জন্য একজন মিলিটারি জেনারেলের নেতৃত্বে ‘কন্ট্রোলার অব সিভিল সাপ্লাইজ’ নামের কঠোর নজরদারি সংস্থা গড়ে তুলেও অবস্থা সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। গাড়ী, সেনিটারি আইটেম ও ইলেকট্রনিকস গ্যাজেটের অনেকগুলোর আমদানি সরাসরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, অন্য অনেক আইটেমের আমদানি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণাধীন করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপের ব্যর্থতার পর সম্প্রতি শ্রীলংকার সরকার দেশে ‘অর্থনৈতিক ইমার্জেন্সি’ ঘোষণা করেছে, কারণ দেশটি এখন অভূতপূর্ব ‘ফাইনেন্সিয়াল মেল্টডাউনের’ সম্মুখীন। বেশ কয়েকমাস ধরে ভয়ংকর খাদ্য সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশটি। অথচ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একেবারে তলানীতে পৌঁছে যাওয়ায় বিদেশ থেকে খাদ্যদ্রব্য আমদানি করে সংকট মোকাবেলার সামর্থ্য এখন তাদের নেই বললেই চলে। অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতির হার দিনদিন বাড়ছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যাদির বেশির ভাগই যেহেতু আমদানী করতে হয় তাই ওগুলোর ক্রমবর্ধমান ঘাটতি জনজীবনে অভূতপূর্ব বিপর্যয় ডেকে এনেছে। বিভিন্ন আইটেম কেনার জন্য লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। শ্রীলংকান রুপির বৈদেশিক মান কিছুদিন আগেও ছিল এক ডলারে একশত নব্বই রুপি, গত এক মাসে সেটা বেড়ে দু’শ ত্রিশ রুপিতে পৌঁছে গেছে। বর্তমানে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১.৬ বিলিয়ন ডলার থেকে ২.৮ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ওঠানামা করছে, অথচ আগামী এক বছরের মধ্যে শ্রীলংকাকে ৭.৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সুদাসলে পরিশোধ করতেই হবে। এর মানে, শ্রীলংকা নিজেকে ‘ফাইনেন্সিয়ালি ব্যাংকরাপ্ট’ বা ‘আর্থিক দেউলিয়া’ ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।
দেশটির এই দেউলিয়াত্ব ডেকে এনেছে করোনা ভাইরাস মহামারি, গত কয়েক বছর ধরে উল্টাপাল্টা নানা প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের হিড়িক এবং রাতারাতি কৃষিখাতে ‘অর্গানিক ফার্মিং’ চালুর জন্য প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের একটি হঠকারি ও অবিবেচক (তোগলকি) সিদ্ধান্ত। প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া দেশের কৃষিবিদ এবং বিজ্ঞানীদের কারো সাথে শলা-পরামর্শ না করেই সম্পূর্ণ নিজের খামখেয়ালী সিদ্ধান্তে দেশের কৃষিতে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। তিনি জাতিসংঘে প্রদত্ত ভাষণেও দাবি করেন যে বিশ্ব থেকে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহারকে নির্মূল করতে নেতৃত্ব দেবে শ্রীলংকা। ‘অর্গানিক ফার্মিং’ পদ্ধতি অনুসরণে কৃষিজাত খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে বিশ্বে ‘পাইওনিয়ার’ হবে শ্রীলংকা। তাঁর সরকার জৈব কম্পোস্ট সার সরবরাহের প্রক্রিয়া গড়ে তুলবে, যাতে রাসায়নিক সারের ‘প্রকৃতি-বান্ধব বিকল্প’ ব্যবহার করে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে সাফল্য অর্জন করা যায়। কিন্তু, মতাদর্শগত অবস্থান থেকে ‘অর্গানিক ফার্মিং’ পদ্ধতি চালুর ঘোষণা দেওয়া এক কথা, আর ধাপে ধাপে পরিকল্পিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তা সফলভাবে চালু করার চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়ন অনেক কঠিন আরেকটা প্রক্রিয়া–এটা হয়তো তাঁর কিংবা বড়ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের বিবেচনায় যথাযথ গুরুত্ব পায়নি! কৃষক ‘অর্গানিক ফার্মিং’ করার প্রয়োজনে জৈব কম্পোস্ট সারের জন্য হাপিত্যেশ করলেও পুরো ফলন-মৌসুমে তার দেখা মেলেনি। ফলে, এক অভূতপূর্ব ফলন-বিপর্যয়ে পতিত হলো শ্রীলংকার কৃষিখাত। ‘অর্গানিক ফার্মিং’ নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে শ্রীলংকার কৃষিজাত খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন এক বছরে বিপর্যয়করভাবে নেমে আসলো এক-চতুর্থাংশে।
অন্যদিকে, করোনা ভাইরাস মহামারি শ্রীলংকায় খুব বেশি মানুষের মৃত্যু না ঘটালেও সর্বনাশ ডেকে আনলো শ্রীলংকার বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের গুরুত্বপূর্ণ খাত পর্যটন খাতকে প্রায় ধসিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। গত দু’বছর ধরে সারা বিশ্বের পর্যটন খাতে এহেন বিপর্যয় গেড়ে বসেছে, যা থেকে উত্তরণ এখনো সুদূরপরাহত। শ্রীলংকার রফতানি আয়ের আরো দুটো প্রধান সূত্র এলাচ এবং দারুচিনিও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মহামারির এই দু’বছরে। ফলে শ্রীলংকার বৈদেশিক আয়ে বড়সড় ধস নামলো এমন এক সময়ে, যখন কৃষিখাতের ফলন-বিপর্যয় খাদ্যদ্রব্যসহ প্রায় সকল নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে গুরুতর ঘাটতি অবস্থায় টেনে নামিয়েছে শ্রীলংকার অর্থনীতিকে। এর সাথে যুক্ত হলো ২০০৯ সাল থেকে বৈদেশিক ঋণের অর্থে যত্রতত্র প্রকল্প গ্রহণের বদখাসলতের চরম মূল্য চুকানোর পালা। গৃহযুদ্ধে তামিল টাইগারদের পরাজয় যেহেতু ভারতের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার কোন কারণ নেই তাই গৃহযুদ্ধের শেষপর্বে সিভিলিয়ান তামিল-হত্যাযজ্ঞের আন্তর্জাতিক তদন্তের জন্য ভারত তার বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর মাধ্যমে শ্রীলংকার ওপর প্রবল চাপ প্রয়োগের কৌশল অবলম্বন করেছিল। শ্রীলংকার সংখ্যাগুরু সিংহলীরা এর ফলে ভারতের ওপর আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে, যার সুযোগ নেয়ার জন্য তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে গণচীনের দিকে অনেকখানি ঝুঁকে পড়েছিলেন। চীনও শ্রীলংকার ভূরাজনৈতিক অবস্থানের গুরুত্বের বিবেচনায় দেশটিকে নিজেদের প্রভাববলয়ে টেনে নেয়ার জন্য বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এর আওতায় হাম্বানটোটায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, কলম্বোয় সমুদ্রবন্দরের কাছে চাইনিজ সিটি নির্মাণসহ আরো কয়েকটি প্রকল্পে সহজ শর্তে শ্রীলংকাকে প্রকল্পঋণ প্রদান করে। পরবর্তীতে যখন হাম্বানটোটা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ সম্পন্ন হয় তখন দেখা গেল যে বন্দর ব্যবহারের যথেষ্ট চাহিদা পরিলক্ষিত হচ্ছে না, ভারত এবং বাংলাদেশ মোটেও আগ্রহী নয় ঐ বন্দরে। বন্দরের আয় বাড়াতে চরমভাবে ব্যর্থ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত শ্রীলংকা ৯৯ বছরের জন্য বন্দরটিকে চীনের কাছে লীজ দিতে বাধ্য হয়। একই রকম বিপদে পড়তে হচ্ছে কলম্বোর চাইনিজ সিটি নিয়ে এবং কয়েকটি বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্প নিয়ে। যথাযথ ‘প্রকল্প মূল্যায়ন’ পদ্ধতি অবলম্বনে এসব প্রকল্প গৃহীত না হওয়ায় এগুলোর কোনটাই যথেষ্ট আয়বর্ধনকারী প্রকল্প হয়ে উঠবে না। এজন্যেই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ মহলে বলা হচ্ছে লোভে পড়ে শ্রীলংকা ‘চীনা ঋণের ফাঁদে’ আটকে গেছে। আরো মারাত্মক হলো, ‘সভরেন বন্ড’ ছেড়ে শ্রীলংকা আন্তর্জাতিক অর্থ-বাজার থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার পুঁজি সংগ্রহ করেছিল ঐ সময়টায়, যেগুলোর ম্যাচুরিটি ২০২২ সাল থেকেই শুরু হতে চলেছে। কিন্তু, এখন তো সুদাসলে ঐ বন্ডের অর্থ ফেরত দেওয়ার সামর্থ্য শ্রীলংকার নেই। অতএব, পাকিস্তানের মত নিজেদেরকে ঋণ পরিশোধে অপারগ ঘোষণা করে আইএমএফ এবং বিশ্ব ব্যাংকের কাছে নাকে খত দিয়ে ‘রেসক্যু প্যাকেজের’ জন্য হাত পাতা ছাড়া ঘনায়মান বিপদ থেকে উদ্ধারের কোন পথ খোলা নেই শ্রীলংকার। সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে, ২৫ শতাংশ শ্রীলংকান নাগরিক এখন বিদেশে চলে যাওয়ার জন্য মরিয়া প্রয়াস চালাচ্ছে।
শ্রীলংকার অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্ব থেকে শিক্ষণীয় হলো, রাজাপাকসে পরিবার ভোটের রাজনীতিকে যেভাবে ‘পারিবারিক একনায়কত্বে’ পর্যবসিত করেছে সেটা একটা সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশকেও গভীর সংকটের গিরিখাতে নিক্ষেপ করতে পারে। বাংলাদেশেও আমরা গণতন্ত্রকে ‘নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর একনায়কত্বে’ পর্যবসিত করেছি। সম্প্রতি এলডিপি’র কর্নেল অলি আহমদ স্বীকার করেছেন যে ১৯৯১ সালে প্রেসিডেন্সিয়াল সিস্টেম থেকে আবার পার্লামেন্টারি সিস্টেমে পরিবর্তনের সময় তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাতে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা কেন্দ্রিভূত করার উদ্দেশ্যে তিনি, ব্যারিস্টার সালাম তালুকদার ও কর্নেল মোস্তাফিজুর রহমান শলা-পরামর্শ করে সংবিধানকে এমনভাবে সাজিয়েছিলেন যে এরপর থেকে রাষ্ট্রের একাধিপতি হয়ে গেছেন শুধুই প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতিকে এভাবে সাংবিধানিকভাবে ‘শিখন্ডিতে’ পরিণত করার জন্য এখন কর্নেল অলি আহমদ জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। হা হতোস্মি! উপরন্তু, বাংলাদেশে এখন সকল প্রকল্প গ্রহণের মালিক একজনই। অতএব, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যৃৎ প্রকল্পের মত একটা ‘সাদা হাতি’ প্রকল্প এদেশে নির্মীয়মাণ। প্রথম বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের দুই-তৃতীয়াংশ ক্যাপাসিটি অব্যবহৃত থাকা সত্ত্বেও এখন দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি পুরোদমে এগিয়ে চলেছে একজনের খায়েসে! শ্রীলংকার দেউলিয়াত্ব এবং মেল্টডাউন থেকে সময় থাকতে যেন আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি। মহান আল্লাহ তাআলাহ আমাদেরকে হেদায়েত করুন, এটাই প্রার্থনা।
লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

শ্রীলংকার অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্ব থেকে শিক্ষণীয় হলো, রাজাপাকসে পরিবার ভোটের রাজনীতিকে যেভাবে ‘পারিবারিক একনায়কত্বে’ পর্যবসিত করেছে সেটা একটা সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশকেও গভীর সংকটের গিরিখাতে নিক্ষেপ করতে পারে। বাংলাদেশেও আমরা গণতন্ত্রকে ‘নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর একনায়কত্বে’ পর্যবসিত করেছি। সম্প্রতি এলডিপি’র কর্নেল অলি আহমদ স্বীকার করেছেন যে ১৯৯১ সালে প্রেসিডেন্সিয়াল সিস্টেম থেকে আবার পার্লামেন্টারি সিস্টেমে পরিবর্তনের সময় তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাতে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা কেন্দ্রিভূত করার উদ্দেশ্যে তিনি, ব্যারিস্টার সালাম তালুকদার ও কর্নেল মোস্তাফিজুর রহমান শলা-পরামর্শ করে সংবিধানকে এমনভাবে সাজিয়েছিলেন যে এরপর থেকে রাষ্ট্রের একাধিপতি হয়ে গেছেন শুধুই প্রধানমন্ত্রী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাল আজকাল
পরবর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে ৬৩ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকাদান কার্যক্রম শুরু