কর্ণফুলী নদী সরু হয়ে যাচ্ছে। মাত্র ২২ বছরের ব্যবধানে নদীর ৫২০ মিটার বা ১৭০৬ ফুট প্রশস্ততা কমে গেছে। চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়েছে যে, ২০০০ সালের ৯৩০ মিটার প্রস্থের কর্ণফুলী নদী ২২ বছরের ব্যবধানে ২০২২ সালে এসে ৪১০ মিটার প্রস্থে ঠেকেছে। খনন ও শাসন না করায় শাহ আমানত ব্রিজের নিজ থেকে থেকে চাক্তাই খালের মোহনা এলাকায় তিন কিলোমিটার চর জেগে সংকীর্ণ হয়ে গেছে কর্ণফুলীর গতিধারা। সংকীর্ণ গতিধারায় পানির স্রোতের কারণে শাহ আমানত সেতুর চার ও পাঁচ নম্বর পিলারের নিচে ৭৮.৬ ফুট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যা শিকলবাহা খালের মোহনা থেকে ফিরিঙ্গী বাজার পর্যন্ত তিন কিলোমিটার নদীর তলদেশের সর্বোচ্চ গভীরতা। এই অবস্থা চলতে থাকলে বড় জলোচ্ছাস বা অতি বর্ষণে পানির স্রোতে শাহ আমানত সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলেও সাংবাদিক সম্মেলনে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে।
গতকাল রোববার চট্টগ্রামে প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে “কর্ণফুলী নদীর তলদেশের গভীরতা ও দখল জরিপ ২০২২” শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে নদীর উপর পরিচালিত জরিপ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মেরিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নোমান আহমেদ সিদ্দিকি, বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাশ, অধ্যক্ষ জনার্দন বণিক, এডভোকেট সেলিম চৌধুরী, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতির সভাপতি এস এম পেয়ার আলী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাফর আহমেদ।
এতে বলা হয় যে, শাহ আমানত ব্রিজের উত্তর পাশে ১ ও ২ নম্বর পিলারের মাঝখানে গভীরতা ফিরিঙ্গী বাজার এলাকার পরিমাপ অনুযায়ী থাকার কথা ২৫ ফুট। সেখানে বর্তমান গভীরতা হচ্ছে মাত্র ৭.৭ ফুট। ২ ও ৩ নম্বর পিলারের মাঝখানে গভীরতা থাকার কথা ফিরিঙ্গী বাজার এলাকার গভীরতা অনুযায়ী ৩৮ ফুট বাস্তবে ২ ও ৩ নম্বর পিলারের মাঝখানে চর জেগে উঠেছে। সেখানকার চরে জেলেদের মাছ ধরতে দেখা গেছে। সেতুর ৩ ও ৪ নম্বর পিলার এলাকায় স্বাভাবিক গভীরতা থাকার কথা ৩৮ ফুট। সেখানে বর্তমান গভীরতা ৬৪.৭ ফুট। ৪ ও ৫ নম্বর পিলার এলাকায় (দক্ষিণ তীরের পাশে) নদীর স্বাভাবিক গভীরতা থাকার কথা ২৮ ফুট (চর পাথরঘাটা এলাকার মাপ অনুযায়ী) কিন্তু ৪ পিলারের পাশে গভীরতে ৭৮.৬ ফুট। যা কর্ণফুলী নদীর ফিরিঙ্গীবাজার থেকে শিকলবাহা খালের মুখ প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় সবচেয়ে গভীরতম স্থান। প্যাডোমিটার দিয়ে পরিচালিত সার্ভেতে এই স্থানে পিলারের পাশে নদীর তলদেশের মাটিতে ছোট বড় অনেক ফাটল দেখা গেছে। যা শাহ আমানত সেতুর জন্য উদ্বেগজনক। ব্রিজের দক্ষিণ পাশে তীরের কাছাকাছি নদীর তলদেশে গভীরতা বেড়ে যাওয়ায় তীরের মাটি ধসে ব্রিজ ধসে যেতে পারে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বন্দর কর্তৃপক্ষ ৩২১ কোটি টাকার ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়নের পর এই এলাকায় তিন বর্গকিলোমিটার চর জেগে উঠেছে। এতে বলা হয় যে, চাক্তাই খালের মোহনায় নদীর প্রশস্ততা ছিল ৯৩০.৩২ মিটার। বর্তমানে তা ৪১০ মিটারে নেমে এসেছে।