কি টেস্ট, কি ওয়ানডে। ব্যাটিংটা যেন ভুলেই গেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। বোলাররা মাঝে মধ্যে জ্বলে উঠলেও ব্যাটসম্যানরা লজ্জার ছাদর গায়ে জড়িয়েই যেন ছুটছে। তবে চট্টগ্রাম টেস্টে বোলার, ব্যাটার, ফিল্ডার সবাই যেন একাট্টা হয়ে ব্যর্থতার মিছিলে যোগ দিয়েছে। নাহয় প্রথম দিনেই অল আউট হতে পারতো যে দল কিভাবে সেই ভারত চারশ পার করে ফেলে। আগের দিন একাধিক ক্যাচ ছেড়ে দেওয়া বাংলাদেশের ফিল্ডাররা গতকাল সকাল থেকেই ক্যাচ ছাড়া শুরু করে। আর ব্যাটাররা তো যেন পাড়া গায়ের কোনো ক্রিকেট খেলতে নেমেছিল। কার আগে কে সাজঘরে ফিরবে তার যেন প্রতিযোগিতা চলছিল। দিনের শেষ বেলায় মিরাজ আর এবাদত মিলে ৩১ রানের জুটিটা না গড়লে আরো বড় লজ্জা পেতে হতো বাংলাদেশকে। হয়তো দ্বিতীয় দিনেই ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয়বার ব্যাট করতে নামতে হতো। যদিও এখনো ফলোঅনের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। দ্বিতীয়বার ব্যাট করা থেকে বাঁচতে হলে এখনো ৭২ রান করতে হবে মিরাজ, এবাদত এবং খালেদকে। যা এক প্রকার অসম্ভবই। হয়তো সম্ভবও। জবাব মিলবে আজ সকালে। চট্টগ্রাম টেস্টে ভারত অল আউট হয় ৪০৪ রানে। জবাবে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে করেছে ১৩৩ রান। উইকেট হারিয়েছে ৮টি।
আগের দিনের ৬ উইকেটে ২৭৮ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করা ভারত দিনের শুরুতেই হারায় শ্রেয়াস আইয়ারকে। ৮২ রান নিয়ে দিন শুরু করা শ্রেয়াস আইয়ার ফিরেন আর ৪ রান যোগ করে। কিন্তু অশ্বিন ও কুলদীপ অষ্টম উইকেটে গড়েন ৯২ রানের জুটি। পাঁচটি টেস্ট সেঞ্চুরি করা অশ্বীনের ব্যাট থেকে আসে ৫৮ রান। কুলদীপ খেলেন ক্যারিয়ার সেরা ৪০ রানের ইনিংস। বাংলাদেশের দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও মেহেদি হাসান মিরাজ নিয়েছেন চারটি করে উইকেট।
জবাবে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরা খাবি খাচ্ছিল দুই ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ সিরাজ ও উমেশ যাদবের সামনে। এরপর কুলদীপ যাদবের স্পিনে যেন প্রলয় নৃত্য করতে থাকে টাইগার ব্যাটসম্যানরা। ভারতীয় এই পেস স্পিনের যৌথ আক্রমণে বিধ্বস্ত বাংলাদেশের ব্যাটিং। ভারতীয় পেসারদের সাফল্য ইনিংসের প্রথম বল থেকেই। সিরাজের অফ স্টাম্প ঘেঁষা ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত। মূলত তিন নম্বরে ব্যাট করলেও এবার ওপেন করতে নেমে এক বল খেললেন মাত্র। টেস্টের আগে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেও তিনি পেয়েছিলেন ‘গোল্ডেন ডাক।’
সিরাজের পর এবার আঘাত উমেশ যাদবের। তার শিকার লোকাল বয় ইয়াসির আলি রাব্বি। বোল্ড হয়ে ফিরেন তিনি উমেশের বলে। করেন মাত্র ৪ রান। অভিষিক্ত জাকির হাসান অবশ্য শুরুটা মোটামুটি স্বস্তিতে করেন। তবে লিটন দাসকে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবার তুলে আনা হয় এই চার নম্বর পজিশনে। বেশ ভাল খেলারই ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু মেজাজ হারিয়ে শেষ করে দিলেন সবকিছু। লিটনকে একটু স্লেজিং করে নাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন সিরাজ। তাতে কাজ হয়েছে। স্লেজিংয়ের জবাব দিতে গিয়ে হারিয়ে ফেলেন মনোযোগ।
ফলে সিরাজের পরের বলেই বোল্ড হয়ে ফিরলেন লিটন। ৩০ বলে ২৪ রান করেন তিনি। জাকিরের ইনিংসও থামে সেই সিরাজের বলেই। অফ স্টাম্পের বাইরে ছেড়ে দেওয়ার মতো বলে খোঁচা মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আসেন তিনি। ৪৫ বলে ২০ রান করেন এই অভিষিক্ত। ৫৬ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর দলের ভরসা তখন দুই অভিজ্ঞ সাকিব এবং মুশফিক। কিন্তু এই দুজনও পারেননি দলের ভরসা হতে। বরং কুলদীপ আক্রমণে আসার পর আরও ভেঙে পড়ে ইনিংস।
এই স্পিনারের দ্বিতীয় বলেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আলগা শট খেলতে গিয়ে কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন সাকিব। ২৫ বলে ৩ রান করেন টাইগার দলপতি। মুশফিক ও নুরুল হাসান সোহানের শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। কিন্তু তারাও যোগ দিলেন সেই ব্যর্থদের মিছিলে। দুজনই ফিরেন কুলদীপের পরপর দুই ওভারে। মুশফিক ৫৮ বলে ২৮ রান করলেও সোহান করেন ২২ বলে ১৬ রান। ১০২ রানে ৭ উইকেট নেই বাংলাদেশের। মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ অলআউট হয়ে যাবে দ্বিতীয় দিনেই। তবে নবম উইকেটে দিনের শেষ ৯ ওভার কাটিয়ে দেন মিরাজ ও এবাদত হোসেন। তাতে বাংলাদেশ গুটিয়ে না গেলেও ব্যাটিং জীর্ণতা ফুটে উঠল ভালোভাবেই। ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিংয়ের ধরন ছিল একেবারেই দৃষ্টিকটু। যা কোনোভাবেই টেস্ট ক্রিকেটের সাথে যায় না। দিন শেষে এবাদত অপরাজিত ১৩ রানে আর মিরাজ ১৬ রানে। ভারতের পক্ষে ৩৩ রানে ৪ উইকেট নেন কুলদীপ যাদব। আর ১৪ রানে ৩ উইকেট নেন মোহাম্মদ সিরাজ।