আমার শৈশব কৈশোর স্মৃতিতে ঈদ মানেই ঈদগাহ ময়দান। সেই ময়দান জুড়ে ঈদের দিনের মেলা। ঈদের দু‘দিন আগে গ্রামের বাড়িতে যাত্রা। ভোরে পাখির ডাকে ঘুম ভাঙতো। দাদার বাড়ির মাটির ঘরে নতুন ভোর। আহা কী যে প্রশান্তি মাখা অনুভূতি ছিলো আমার।
আম্মা গোসল করিয়ে ঈদের কাপড় পড়িয়ে সম্পূর্ণ তৈরী করে দিতেন। আব্বা দিতেন ঈদ সালামি। জামা কাপড়ের সাথে প্রতিবছর ছোট কাঁধে ঝুলানো ব্যাগের চাহিদাও পূরণ করা হতো। ব্যাগে টাকা ভরে, নূতন জুতা পায়ে একদৌড়ে ছুট্ ঈদগাহ ময়দানে। মুসল্লীরা ঈদের নামাজ শেষে মেলার মধ্যবর্তী স্থানে বহুবছরের পুরনো বিশাল গাব গাছের সুশীতল ছায়ায় ঈদের কোলাকুলি ও কুশল বিনিময় করতেন।
শিশু হতে বৃদ্ধ সবার পরনে সফেদ বর্ণিল পাঞ্জাবীতে সে এক অপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা। ঈদের নামাজ শেষে আব্বা বাড়িতে এলে উঠোনে লম্বা লাইনে সারিবদ্ধভাবে মানুষ দাঁড়াতো আর আব্বা সবাইকে ঈদের বকশিস দিতেন।
বাবুর্চি দিয়ে রান্না করা হতো টলটলে সেমাই। টিনের বাসন চামচে সেমাই পরিবেশন করা হতো সব মানুষদের। আম্মা প্রতিবছর বাসন চামচগুলো টেরীবাজারের ক্রোকারিজ দোকান থেকে ক্রয় করতেন। আমি থাকতাম আম্মার সহকারী। সেই রসনাবিলাস সেমাই আহা! টালানো চিনাবাদাম খাঁটি ঘি এর সুঘ্রাণ মাতানো স্বাদ এখন অনেকটাই দুর্লভ মনে হয় আমার কাছে। ঐতিহ্যের ধারায় এখনকার খাবারে অনেক বৈচিত্র্য এসেছে ঠিক, কিন্তু স্বাদের ক্ষেত্রে এই সেমাই অতুলনীয় ছিলো।
বাংলাদেশের প্রতিটা গ্রামই সুন্দর। পূর্বপুরুষের ভিটেয়, দাদুর বাড়িতে ঈদ পালনের আত্মিক প্রশান্তি এই শহুরে ঈদে যেন পূর্ণ আনন্দে খুঁজে পাওয়া দায়। তাই পরিবারের শিশু–কিশোরদের নিয়ে গ্রামে ঈদুল ফিতর পালন করা সকলের উচিৎ। কর্মব্যস্ত জীবনে যান্ত্রিকতার মাঝেও যে আদর্শ, যে ঠিকানা, যে শেকড় কোথায় নিহিত তাদেরও সেটা শেখাতে হবে, বুঝতে দিতে হবে। বংশ পরম্পরায় ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সেই আদর্শে ব্রতী হোক প্রতিফলিত হোক ঐতিহ্যের ধারা।