সোনার হরিণ চাকরির পেছনে না ঘুরে কৃষিতেই বিপ্লব ঘটিয়ে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষ করা মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের শুকরিয়া পাড়া গ্রামের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা নেজামুল করিম। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পেঁপে ও তরমুজ চাষের পর এবার মহেশখালী দ্বীপের পাহাড়ি এলাকায় সৌদি আরবের বহুল প্রচলিত সুস্বাদু মিষ্টি ফল সাম্মাম চাষ করে চতুর্দিকে সাড়া ফেলেছেন তিনি। প্রথমবার চাষেই সাফলতার মুখ দেখছেন তিনি। মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের শুকরিয়া পাড়া পাহাড়ি এলাকায় ৪০ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে সাম্মামের চাষ করেছেন। বাঙ্গি জাতীয় পুষ্টিগুণে ভরপুর বিদেশি এ ফল চাষাবাদের তেমন একটা প্রচলন নেই দেশে। সাম্মাম চাষে ঝুঁকি এবং চাষাবাদ সম্পর্কে প্রচারণার অভাবে চাষ কম হয়। ভিনদেশি রসালো ফল উৎপাদনের খবরে প্রতিদিন তার ক্ষেত দেখতে আসছেন আশপাশের কৃষকরা।
গতকাল শুক্রবার নেজামুল করিমের ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি তার সাম্মাম ক্ষেত পরিচর্যা করছেন। কুমড়া গাছের মতো লতা জাতীয় গাছ। প্রথমবার মাটিতেই চাষ করা গাছের ফাঁকে ফাঁকে ধরেছে গোল গোল সাম্মাম ফল। প্রায় প্রতিটি গাছেই ভরপুর ফল। নেজাম আজাদীকে বলেন, লেখাপড়া শেষ করে চাকরির পেছনে জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট না করে নিজেকে একজন কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে এই কৃষি কাজে মনোনিবেশ করি। গত এক বছর আগে প্রায় দেড় একর হারি জমিতে ফলনশীল জাতের পেঁপে চাষ করি। এতে আমার প্রায় ৭ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। গত এক বছরে আমার খাটানো পুঁজির প্রায়ই অংশ পেঁপে বিক্রিতে উঠে গেছে। আগামী এক বছরের বিক্রিলব্ধ টাকা আমার লাভের অংশ। আশা করছি এতে ৭/৮ লাখ টাকা আয় হবে। পেঁপে চাষের পাশাপাশি প্রায় ১ কানি তরমুজ ক্ষেত করেছি। সাথে দুইটি পানের বরজ রয়েছে। এসব চাষে আমি সফলতার মুখ দেখায় এবার উৎসাহ নিয়ে হাত দিয়েছি সৌদি আরবে চাষ করা সুস্বাদু মিষ্টি ফল সাম্মাম চাষে। প্রথম প্রথম আমি ইউটিউবে সাম্মাম চাষের পদ্ধতি ও পরিচর্যা সম্পর্কে জেনে নিন। এর উপর ভিত্তি করে আমি ৪০ শতক জমিতে সাম্মাম চাষ শুরু করি। সাম্মামের বীজ বপনের শুরু থেকে এক মাস ২০ দিনের মাথায় আর তার মাত্র ৫০ দিনেই গাছে ফল এসেছে। তাতে আমি আরো উৎসাহিত হয়ে স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার এবং ঢাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সাথে পরামর্শ করে সাম্মাম চাষের পরিধি আরও বাড়ানোর জন্য আরও কিছু বিষয়ের অর্ডার দিয়েছি। ৪০ শতাংশ জমিতে আমার খরচ পড়েছে ৭০ হাজার টাকা। আশা করছি উক্ত পরিমাণ চাষে আমি খরচ পুষিয়ে অন্তত দুই লাখ টাকা আয় করতে পারবো। মহেশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মুমিনুল ইসলাম বলেন, মহেশখালীতে একজন তরুণ শিক্ষিত কৃষি উদ্যোক্তা নেজামের খবর আমরা ইতিমধ্যে পেয়েছি। সে এর আগে উচ্চ ফলনশীল জাতের রেড লেডি পেঁপে চাষ করে সফল হয়েছে। এখন রক মেলন বা সাম্মাম ফল চাষ করে সে সফল।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, সাম্মাম খুব মিষ্টি এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল। বহির্বিশ্বে এ ফলের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশে এটির প্রচলন এখনো কম। এ ফলকে সৌদিতে সাম্মাম বলে, তবে বিভিন্ন দেশে এটি রক মেলন, সুইট মেলন, মাস্ক মেলন, হানি ডিউ নামেও পরিচিত। সাম্মামের দুটি জাত রয়েছে। একটি জাতের বাইরের অংশ সবুজ আর ভেতরের অংশ লাল, আরেকটি জাতের বাইরের অংশ হলুদ এবং ভেতরের অংশ লাল। তবে খেতে দুই ধরনের ফলই খুব মিষ্টি ও রসালো। চাষ সম্পর্কে তিনি বলেন, দো আঁশ মাটিতে সাম্মাম চাষ করা ভালো। মাটি ভালোভাবে চাষ করে বেড এবং নালা তৈরি করে, মালচিং দিয়ে এ ফলের চাষ করতে হয়। তাহলে বেশ ভালো ফলন পাওয়া যায়।










