ব্রেইন টিউমার থেকে প্রাণহানির ঝুঁকি বেশি

বিশ্ব ব্রেইন টিউমার দিবস আজ

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৮ জুন, ২০২৩ at ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

আজ ৮ জুন, বিশ্ব ব্রেইন টিউমার দিবস। ১৯৯৮ সালে জার্মান ব্রেইন টিউমার অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি দাতব্য সংস্থা গঠিত হয়। সংস্থাটির উদ্যোগে ব্রেইন টিউমারের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ২০০০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

চিকিৎসকরা বলছেনব্রেইন টিউমার থেকে প্রাণহানির ঝুঁকি বেশি। রোগটির নাম শুনলেই মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এই টিউমার মস্তিষ্কে হতে পারে। আবার শরীরের অন্য অংশে তৈরি হয়ে মস্তিষ্কে ছড়াতে পারে।

টিউমার কি : টিউমার হলো শরীরের কোনো কোষের অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি। যেমন পাকস্থলীর কোষের সংখ্যা যদি অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায় তাহলে তা চাকার মতো বড় হয়ে যায়। একেই বলে পাকস্থলীর ক্যান্সার। দেহের বিভিন্ন অঙ্গে ক্যান্সার বা টিউমার হতে পারে।

টিউমার দুই প্রকার। একটি হলো বেনাইন ও অন্যটি মেলিগনেন্ট। বেনাইন টিউমার অত বেশি ক্ষতিকর নয়। এটি চিকিৎসায় পুরোপুরি ভালো হয়। ক্যান্সার বলতে মেলিগনেন্ট টিউমারকে বুঝানো হয়ে থাকে। ক্যান্সারকে অন্যভাবেও ভাগ করা যায়। ক্যান্সার একটি নির্দিষ্ট অঙ্গে সীমাবদ্ধ থাকলে তাকে বলে প্রাইমারি। আর যদি বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে যায় তবে তাকে মেটাস্টাসিস বলে। সবচেয়ে খারাপ হলো মেটাস্টাসিস। এর চিকিৎসা করা অনেকটা দুরূহ ও ব্যয়সাপেক্ষ।

মস্তিষ্কের টিউমার : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্য মতে, ২০২০ সালে বিশ্বে তিন লাখ আট হাজার ১০২ জন মস্তিষ্কের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এর মাঝে মারা গেছেন প্রায় আড়াই লাখ। আমাদের দেশে এ সংক্রান্ত সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়না। তবে যতটুকু জানা যায়, তাতে এক হাজার ২৮৪ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এক হাজার ১৪৪ জন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এ হার আরো বেশি।

চিকিৎসকরা বলছেন, পরিসংখ্যানই বলে দেয় মস্তিষ্কের ক্যান্সার বা টিউমার কতটা মারাত্মক। তবে আশার কথা হলো মস্তিষ্কে বেনাইন টিউমার বেশি হয়। মস্তিষ্কে মেটাস্টাসিসও (ক্ষতিকর) হতে পারে, তবে তা খুব কম।

কারণ : মস্তিষ্কের টিউমার যেকোনো বয়সে হতে পারে। শিশুদের যত ক্যান্সার হয় তার দ্বিতীয় কারণ এটি। কিন্তু এর কারণ জানা যায় না। তবে কিছু জিনের মিউটেশনে এটি হতে পারে। এ ছাড়াও রেডিয়েশনেও টিউমারের ঝুঁকি রয়েছে।

লক্ষণ : মস্তিষ্কের ক্যান্সারের মূল লক্ষণ হলো মাথা ব্যথা। তবে মাথা ব্যথা হলেই যে মস্তিষ্কের টিউমার বা ক্যান্সার, তা কিন্তু নয়। মাথা ব্যথার যত কারণ আছে তার বেশির ভাগই কিন্তু অন্য। মস্তিষ্কের টিউমারের মাথা ব্যথার ধরন একটু ভিন্ন। মাথা ব্যথা সারাক্ষণ থাকে, পুরো মাথায় হালকা বা মাঝারি ধরনের ব্যথা থাকে। হাঁচিকাশি দিলে মাথা ব্যথা বেড়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠলে ব্যথা বেশি হয়। মাথা ব্যথার সঙ্গে বমি হতে পারে। টিউমারের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন মস্তিষ্কের সামনের দিকে টিউমার হলে আচরণে অস্বাভাবিকতা, হঠাৎ রেগে যাওয়া, মনোযোগে ঘাটতি হতে পারে। শরীরের এক পাশ ধীরে ধীরে অবশ হওয়া, চোখে দেখার সমস্যা, হাঁটতে সমস্যা, ভারসাম্যহীনতা, কথা বলার সমস্যা, খিঁচুনি, কানে শোনার সমস্যা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যেতে পারে।

পরীক্ষানিরীক্ষা : টিউমার নির্ণয়ে শারীরিক পরীক্ষার পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি জরুরি মস্তিষ্কের সিটিস্ক্যান বা এমআরআই। এ ছাড়া আরো কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে।

চিকিৎসা : মস্তিষ্কের টিউমারের চিকিৎসাপদ্ধতির মধ্যে আছে মেডিক্যাল চিকিৎসা, সার্জারি, রেডিওথেরাপি এবং কিছু ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি। সার্জারি ব্রেন টিউমারের মূল চিকিৎসাপদ্ধতি। কিছু টিউমার আছে, যেটি মস্তিষ্কের মূল অংশ থেকে আলাদা থাকে। এগুলোর চারদিকে পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে। এমন হলে সার্জারির মাধ্যমে টিউমার পুরোপুরি কেটে ফেলা সম্ভব হয়। কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের মূল অংশ থেকে টিউমার দেখা দেয়। সেসব ক্ষেত্রে অপারেশন করে পুরো টিউমার কেটে ফেলা যায় না। তখন টিউমার আংশিক কেটে ফেলে অন্যান্য চিকিৎসাপদ্ধতি প্রয়োগ করতে হয়। আবার কিছু টিউমার আছে, যার পরিমাণ বেশ কম, তা শুধু ওষুধের মাধ্যমে পুরোপুরি সেরে যায়।

দেশে টিউমারের চিকিৎসা সুবিধা : বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই ব্রেইন টিউমারের চিকিৎসা হচ্ছে এবং বেশির ভাগ টিউমারের চিকিৎসা বাংলাদেশেই করা সম্ভব। গত ১০ বছরে বাংলাদেশে নিউরোসার্জারি বা ব্রেইন টিউমার সার্জারি অনেক দূর এগিয়ে গেছে, যদিও কিছু আধুনিক ব্যবস্থা এখনো আমাদের দেশে আসেনি। চিকিৎসকরা বলছেন, মস্তিষ্কের চিকিৎসায় দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। নিউরোলজিস্টের পাশাপাশি দেশে বেশ ভালো মানের নিউরোসার্জন আছেন। এখন সব ধরনের অপারেশনের জন্য ভালো মানের সার্জনও আছেন।

প্রতিরোধ : সুস্থস্বাভাবিক জীবনযাপন, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও নিয়মিত শরীর চর্চার মাধ্যমে ব্রেইন টিউমার ঠেকানো সম্ভব বলে অভিমত চিকিৎসকদের। তবে লক্ষণ দেখা দিলে বা রোগ হয়ে গেলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএসএসসির অবসরে স্পোকেন ইংলিশ ও কম্পিউটার কোর্স
পরবর্তী নিবন্ধশিবির ক্যাডার সাজ্জাদের সহযোগী মামুন গ্রেপ্তার