১৯৭১ এর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” ঘোষণা দিয়ে নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ দিয়েছিলেন। সেদিন যদি তিনি সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করতেন, রেসকোর্স ময়দানের চতুর্দিকে জল্লাদ ইয়াহিয়া খানের তাক করা মেশিন গানের গুলি থেকে একটি লোকও জীবিত ফিরতে পারত না। এখানেই, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতা। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে ২৫ মার্চের কালো রাতে বঙ্গবন্ধু আত্মরক্ষার্থে পালিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু, তিনি বুঝেছিলেন যে, হানাদার বাহিনী তাঁকে না পেলে বাঙলার মাটি ও মানুষের ওপর চরম প্রতিশোধ নেবে।
তাই, ‘জন্ম-মৃত্যু পায়ের ভৃত্য চিত্ত ভাবনাহীন’ করে স্বেচ্ছায় পাক হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দী হয়েছিলেন। এখানেই বঙ্গবন্ধুর অসীম সাহসিকতা। দীর্ঘ নয়মাস মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জল্লাদ ইয়াহিয়া খান ও তার দোসর ভুট্টো মৃত্যু ভয় দেখিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলো বঙ্গবন্ধুকে নতি স্বীকার করাতে। কিন্তু, জীবন বিপন্ন নিশ্চিত জেনেও বাঙালি জাতির বীরত্বের প্রতীক, স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু জাতির ললাটে কলংকের কালিমা লেপন করতে দেন নি। তিনি জল্লাদের কারাগারে দৃঢ়কন্ঠে বলেছিলেন, “আমি তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইবো না। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় বলবো, “আমি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলা আমার দেশ। শুধু, তোমাদের নিকট একটাই অনুরোধ, মৃত্যুর পরে আমার লাশটি বাঙালিদের নিকট পৌঁছাইয়া দিও।” এখানেই বাঙালি জাতির জনক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর শতভাগ যথার্থতা।