কুণ্ডেশ্বরীর প্রাক্তন অধ্যক্ষ শ্রীমতি কল্যাণী সিংহ : আঙিনা ছেড়ে মনের গভীরে

জাহানারা মুন্নী | রবিবার , ২৮ মার্চ, ২০২১ at ৮:৫১ পূর্বাহ্ণ

একেক করে যেন খসে পড়ছে কুণ্ডেশ্বরীর বিদ্যামন্দির নীলিমায় ফোটা সমুজ্জ্বল তারাগুলো। কুণ্ডেশ্বরী প্রতিষ্ঠাতা শহীদ নূতন চন্দ্র সিংহের কনিষ্ঠ পুত্রবধূ, সদ্য প্রয়াত কুণ্ডেশ্বরী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মুক্তিযোদ্ধা শ্রী প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ আমাদের অত্যন্ত প্রিয় (মন্টু স্যার) এর জীবনসঙ্গিনী, আমাদের মানস অভিভাবিকা, কুণ্ডেশ্বরী মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যক্ষা শ্রীমতী কল্যাণী সিংহ এর জীবনাবসান হলো।
স্যার প্রয়াত হওয়ার পর থেকে শয্যাশায়িনী হয়ে পড়েছিলেন স্যারের সহধর্মিণী, যিনি ছিলেন আমাদের বড় দিদিমণি। দীর্ঘ আড়াই মাস যাবৎ চট্টগ্রাম নগরীর এক বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসারত ছিলেন। সকল ডাক্তার ও পরিবারের সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার পরও জীবনমৃত্যুর লড়াইয়ে দিদিমণির আর বেঁচে ওঠা সম্ভব হয়নি। সবাইকে শোকের সমুদ্রে ভাসিয়ে স্যার এর চিরবিদায়ের মাত্র তিনমাসের ব্যবধানে ২৩ মার্চ রাতে তিনিও চলে গেলেন অনন্তধামে। কুন্ডেশ্বরী ইতিহাসে দ্রুততম সময়ে ঠাঁই নিলো আরও এক বিয়োগান্ত অধ্যায়। দিদিমণি ছিলেন, উচ্চশিক্ষীত পরিবারের সন্তান এবং পরিবারের জ্যেষ্ঠ কন্যা। গ্রেজুয়েশন পরবর্তী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় মাস্টার্স সম্পন্ন করে উপাধ্যক্ষ পদে কুণ্ডেশ্বরী মহাবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে এখানে অধ্যক্ষ পদে আসীন হন। সদালাপী, সর্বদা শান্তশিষ্ট মেজাজের অধিকারী আমাদের দিদিমণি তার অনন্য যোগ্যতায় মহাবিদ্যালয়কে সুনামের সাথে প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি মহাবিদ্যালয়ের সম্মানিত প্রাক্তন, বর্তমান শিক্ষকম-লী ও ছাত্রীদের মনে ঠাঁই করে নিতে পেরেছিলেন চির ভালোবাসার স্থান। অধ্যক্ষের সাফল্যম-িত কর্মময় জীবন থেকে ২০১০ সালে তিনি অবসরপ্রাপ্ত হন। কীর্তিময়ী দিদিমণি চলে গেলেও একজন সফল ব্যক্তিত্ব হয়ে তিনি স্বমহিমায় চির উজ্জ্বল থাকবেন। তাঁর বিবাহিত ও সাংসারিক জীবনের পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় কাটানো গৃহ আঙিনায় তাঁর প্রতিটা ছোঁয়া, বসন্ত সমীর প্রভাতী ফুলের সৌরভ নিয়ে প্রতি অন্তরে প্রষ্ফুটিত থাকবেন মনের গভীরে। আমাদের সকলের দোয়া আমাদের প্রিয় দিদিমণি যেন স্বর্গবাসী হন।
গভীর শোকে মুহ্যমান পরিবার, শুভ্যানুধ্যায়ী, বিশেষত তাঁদের কন্যাদ্বয় রাখি সিংহ, রাজশ্রী সিংহ রিমি, পুত্র রাজীব সিংহ ও পুত্রবধূ কস্তুরি সিংহ এর প্রতি অন্তস্তল থেকে জানাই সমবেদনা। সৃষ্টিকর্তা যেন ‘ সমুখে শান্তি পারাবারে ‘ দিদিমণি এবং স্যারকে মঙ্গলালোকের তরণীর সাথী করে রাখেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজামালখানের দুঃখ, একটি নালা
পরবর্তী নিবন্ধবাঙালি জাতির জনক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর যথার্থতা