প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য নানা রকম উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে

| শুক্রবার , ১২ আগস্ট, ২০২২ at ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ

দেশে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক জনশুমারির তথ্যে উঠে এসেছে, দেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে। প্রবীণ বলা হয় তাঁদের, যাঁদের বয়স ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশে এখন প্রবীণ মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ ২৬ হাজার ৭১৯। এটি মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০১১ সালে দেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর হার ছিল ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ২০০১ সালে ছিল ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। ২০০১ সাল থেকে পরবর্তী দশ বছরে দেশে প্রবীণের সংখ্যা বেড়েছিল ১ দশমিক ২৪ শতাংশ। পরবর্তী ১০ বছরে এ সংখ্যা বেড়েছে ১ দশমিক ৮১ শতাংশ। এর অর্থ হচ্ছে, প্রবীণের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। একদিকে জন্মহার কমে যাওয়া এবং নানা ধরনের আধুনিক চিকিৎসা কার্যক্রম সমপ্রসারিত হওয়ার কারণে দেশে মৃত্যুহার ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থায় প্রবীণ জনসংখ্যা বেড়েছে। ইউনিসেফ বলছে, আগামী দুই থেকে আড়াই দশকের মধ্যে বাংলাদেশ প্রবীণপ্রধান দেশে পরিণত হবে। জাতিসংঘের এই প্রতিষ্ঠান বলছে, অর্থনীতিতে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর বাড়তি সুবিধা পাওয়ার সুযোগ বাংলাদেশের আস্তে আস্তে কমে আসছে।
ইউনিসেফ বলছে, বাংলাদেশ প্রবীণপ্রবণ সমাজে পদার্পণ করবে ২০২৯ সালে। আর সেখান থেকে আস্তে আস্তে প্রবীণপ্রধান সমাজ পরিণত হবে ২০৪৭ সালে। মাত্র ১৮ বছরে এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাবে বাংলাদেশ। দ্রুততম সময়ে এই পরিবর্তন ঘটতে চলেছে বিশ্বে এমন সব দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। সিঙ্গাপুরে এটি ঘটবে ১৭ বছর সময়ের মধ্যে। সবচেয়ে বেশি সময় পাবে ফ্রান্স, তাদের এই পরিবর্তন ঘটতে সময় লাগবে ১১৫ বছর।
জনসংখ্যাবিদরা বয়সের কারণে অন্যের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর হারকে বিবেচনায় নিয়ে কোনো দেশ বা সমাজকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করার চেষ্টা করেন। মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশ বা তার বেশি মানুষের বয়স ৬৫ বছরের বেশি হলে সেটি তাদের দৃষ্টিতে প্রবীণপ্রবণ সমাজ (এজিং সোসাইটি)। আর মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ বা তার বেশি বয়স্ক মানুষ হলে সেটি প্রবীণপ্রধান সমাজ (এজড সোসাইটি)।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার আগের চেয়ে বেড়েছে- এ তথ্য এটাই প্রমাণ করে যে, দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু এ লক্ষণ সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত ইতিবাচক হলেও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করলে উদ্বেগজনকই বটে। কারণ প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধির অর্থ হচ্ছে দেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থা থেকে দ্রুত সরে আসছে। আগামীতে আমাদের দেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর প্রাধান্য সৃষ্টি হলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্তিমিত হয়ে পড়তে পারে।
জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘একটি দেশে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থা একবারই আসে। আবার কারও কারও মতে, হাজার বছরে একবার এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশের মতো কর্মক্ষম। ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থায় প্রবেশ করেছে এবং এটি ২০৩৫/২০৩৬ সাল পর্যন্ত চলতে থাকবে। তারপর আমরা আর ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সুযোগ পাব না। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সুফল কাজে লাগানোর মতো তেমন কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থা উত্তীর্ণ হলে একটি দেশের অর্থনীতি কেমন পরিণতি ভোগ করতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে জাপান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থায় প্রবেশ করে। সেই অবস্থাকে তারা সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়। এরপর ৪৪ বছর ধরে জাপান বিশ্ব অর্থনীতিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম শক্তি হিসাবে বিরাজমান ছিল। সমপ্রতি জাপান চীনের কাছে তার অবস্থান হারিয়েছে। চীন এখন বিশ্ব অর্থনীতিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থা অতিক্রান্ত হলে দেশে প্রবীণের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। দেশে কর্মক্ষম মানুষের হার কমে যায়। জাপান এ অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশ দ্রুত ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড পেরিয়ে যাচ্ছে। আগামীতে মোট জনসংখ্যার বেশিরভাগই হবে প্রবীণ। সে অবস্থায় দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম কিছুটা হলেও স্থবির হয়ে যেতে বাধ্য।’
একজন প্রবীণ মানুষের সারা জীবন সঞ্চিত যে জ্ঞান, দক্ষতা এবং প্রজ্ঞা তা অত্যন্ত মূল্যবান। এগুলো আমাদের জাতীয় সম্পদ। প্রবীণ হলেও সুযোগ ও সহায়তা পেলে তারা নানাভাবে সেগুলোকে ব্যবহার করে সমাজ ও জাতির উন্নয়নে অবদান রাখতে পারেন। তাঁদের জন্য নানা রকম উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। প্রবীণদের সমাজের বোঝা মনে করার মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। অবসর গ্রহণের পরও অনেকেই কর্মক্ষম থাকেন। অবসর গ্রহণের পর যারা কর্মক্ষম থাকেন, তাদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে আয়বর্ধক উৎপাদনশীল কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। তাঁদের বিভিন্ন আনন্দময় আয়বর্ধক কাজে নিয়োজিত করা যেতে পারে।.

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে