কর্ণফুলী নদীর তলদেশ পলিথিনমুক্ত রাখতে নদীর সংযোগে থাকা খালগুলোর মুখে নেট বসানোর পরামর্শ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় বন্দর কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি, চট্টগ্রাম বন্দরের বিস্ফোরক ও ঝুঁকিপূর্ণ দ্রব্যাদির মজুদ, রক্ষণাবেক্ষণ, হ্যান্ডলিং ও পরিবহন আইন এবং নীতিমালা সম্পর্কে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, কর্ণফুলী নদীতে যেসব খাল দিয়ে এই বর্জ্য আসে সেই খালগুলোর সাথে নদীর সংযোগস্থলে নেট দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সেখানে স্লুইস গেট করুক বা যাই করুক, সেখানে পলিথিন পরিষ্কারের লোক লাগবে। কথা ছিল সিটি কর্পোরেশন এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এটা পরিষ্কার করবে। মন্ত্রণালয় এ নিয়ে মিটিংও করেছিল। কিন্তু ফলপ্রসূ কিছু পাওয়া যায়নি। এজন্য বলা হয়েছে বন্দরের টাকায় এই কাজটি করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ মে দৈনিক আজাদীতে ‘কর্ণফুলীর বুকে পলিথিনের চর’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণা বলছে, কর্ণফুলীর অনেক স্থানে পলিথিন ও প্লাস্টিকের দুই থেকে সাত মিটার আকারের স্তর জমেছে। ২০১৯ সালের মে মাসে কর্ণফুলীর নাব্যতা ফেরাতে ২৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর খনন’ প্রকল্প শুরু করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। চার বছরের এ প্রকল্পটি ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ২০১৯ সালে সেপ্টেম্বরে তিনটি ছোট ড্রেজার দিয়ে খননকাজ শুরু করা হয়। কিন্তু নদীর তলদেশে জমে থাকা পলিথিনের কারণে সেই কাজ থেমে যায়। চীন থেকে একটি সাকশন ড্রেজারও ফেরত পাঠাতে হয়।
গত জানুয়ারিতেও কর্ণফুলীর পলিথিন অপসারণ নিয়ে আলোচনা করে সংসদীয় কমিটি। ওই বৈঠকে বুড়িগঙ্গা ও কর্ণফুলী নদীর আবর্জনা ও পলিথিন অপসারণ করার জন্য জরুরিভিত্তিতে ‘গ্র্যাব ড্রেজার’ সংগ্রহ করে কার্যক্রম গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এদিকে গতকালকের বৈঠকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ পলিথিনমুক্ত রাখার জন্য সুপরিকল্পিত কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তা নির্ধারণ করে প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনার জন্য নৌমন্ত্রী এবং সচিবকে পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করে কমিটি।
এদিকে সংসদীয় কমিটি আমদানি করা যে সব কন্টেইনারে বিপজ্জনক, দাহ্য ও বিস্ফোরক রয়েছে, সেসব কন্টেইনারের গায়ে পণ্যের নাম সুনির্দিষ্টভাবে লেখা এবং লাল স্টিকার সংযুক্ত বাধ্যতামূলক করার জন্য সুপারিশ করেছে। বৈঠকে চট্টগ্রাম বন্দরের চুরিরোধে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম বন্দরের ১০১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী শহীদ হওয়ায় তাদের স্মরণে মেরিন মিউজিয়াম স্থাপনের সুপারিশ করা হয়। কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য শাজাহান খান, মো. মজাহারুল হক প্রধান, রনজিত কুমার রায়, মাহফুজুর রহমান, মো. আছলাম হোসেন সওদাগর এবং এস এম শাহজাদা বৈঠকে অংশ নেন।