চট্টগ্রাম বিএসটিআইয়ে নেই পূর্ণাঙ্গ ল্যাব

অনেক পণ্য পরীক্ষা করতে হয় ঢাকায় ।। ভোগান্তিতে ব্যবসায়ীরা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৮ মে, ২০২১ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

মান নিয়ন্ত্রণে দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউটের (বিএসটিআই) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে নেই পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষাগার (ল্যাব)। ২০১৫ সালে বিএসটিআইয়ে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে ১০ তলা ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। একইসাথে ওই ভবনে একটি পূর্ণাঙ্গ অত্যাধুনিক ল্যাব নির্মাণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পের নির্ধারিত ৪ বছরের মেয়াদ শেষে এক দফা মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলেও এখনো পর্যন্ত ভবনের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ। অথচ প্রকল্পের দ্বিতীয় দফার বর্ধিত মেয়াদ শেষ হতে বাকি আছে আর মাত্র একমাস। অর্থাৎ আগামী জুনের ৩০ তারিখে শেষ হচ্ছে দ্বিতীয় দফার মেয়াদ। ভবন নির্মাণ শেষ না হওয়ায় বিএসটিআইয়ের আধুনিক ল্যাব নির্মাণের কাজটিও তাই ঝুলে আছে। বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার আমদানিকৃত ও উৎপাদিত পণ্যের মান পরীক্ষা হয় এই ল্যাব থেকে। অন্যদিকে আমদানি নীতিতে তালিকাভুক্ত ৫৫টি পণ্য বন্দর থেকে খালাসে বিএসটিআই থেকে আমদানিকারকদের সনদ নিতে হয়। বিএসটিআইয়ের ল্যাবে উন্নত যন্ত্রপাতি এবং রাসায়নিক পরীক্ষকের সংকটে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা ঢাকার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ফলে ঢাকায় পণ্যের নমুনা পাঠানো থেকে শুরু করে রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত এক সপ্তাহ সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। তাই ব্যবসায়ীরাও আর্থিক লোকসানের মুখে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন।
বিএসটিআই চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিএসটিআই দেশে উৎপাদিত শিল্পপণ্য, বৈদ্যুতিক ও প্রকৌশল পণ্য, খাদ্য ও কৃষিজাত পণ্যসহ মোট ২২৭টি পণ্য নজরদারি করে। এসব পণ্যের মধ্যে চট্টগ্রামে ল্যাবে রাসায়নিক পরীক্ষা সম্পন্ন করা যাচ্ছে ৯৫টি পণ্যের। এছাড়া ফিজিক্যাল পরীক্ষা সম্পন্ন করা যাচ্ছে ২২টি পণ্যের। তবে পানি, গুঁড়ো দুধের মেলামিন, ফায়ার এক্সটিংগুইসারের মান, ত্বকের বিভিন্ন প্রসাধনী, ইলেকট্রিক মিটারের মান, লেখা ও ছাপাখানার কাগজ পরীক্ষা এবং শিশু খাদ্যের পরীক্ষাও ঢাকার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তবে বর্তমানে নির্মাণ সামগ্রী টাইলস, সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেল, কলম, সস, জুস, টুথপেস্ট, শ্যাম্পু, পেনসিল এবং চকলেট জাতীয় পণ্যের পরীক্ষা চট্টগ্রাম ল্যাবে সম্পন্ন হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিএসটিআইয়ের ল্যাবে সব ধরনের পণ্য পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। আমদানি নীতিতে তালিকাভুক্ত অনেক পণ্যের পরীক্ষার জন্য ঢাকার ওপর নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। ফলে বিএসটিআই সনদ পেতেও ভোগান্তি পড়তে হচ্ছে। একইসাথে আমদানিকারকদের সময়ক্ষেপণের পাশাপাশি লোকসানও গুণতে হচ্ছে। এতে মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানটির মান নিয়েই ব্যবসায়ীদের মনে সংশয় রয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানি রিগ্যান দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর। আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের ৮০ শতাংশ এই চট্টগ্রাম দিয়ে হয়ে থাকে। অথচ এই চট্টগ্রাম বন্দরে কিছু কিছু আমদানিকৃত পণ্য ছাড় করতে ঢাকা বিএসটিআই ল্যাবের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। ঢাকায় পণ্যের নমুনা পাঠানো থেকে শুরু করে পণ্যের মানের সনদ পাওয়া পর্যন্ত ক্ষেত্রবিশেষে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। এতে আমদানিকারকদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই বিএসটিআই বিভাগীয় কার্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ ল্যাব তৈরি করা বেশি দরকার। তবে এটাও ঠিক, ল্যাবে আগের চেয়ে সক্ষমতা কিছুটা বেড়েছে।
জানতে চাইলে বিএসটিআই চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক শওকত ওসমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, বিএসটিআই ল্যাবের সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তবে নতুন ১০ তলা ভবন না হওয়ায় আধুনিক ল্যাব নির্মাণের বিষয়টিও আটকে আছে। এরমধ্যে ল্যাবে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি যুক্ত হয়েছে। এক সময় টাইলসের পরীক্ষায় ঢাকার ওপর নির্ভর করতে হতো। এখন সেটি চট্টগ্রামে হচ্ছে। এছাড়া ভোজ্যতেলের পরীক্ষাও এখানে হচ্ছে। গুঁড়ো দুধের কিছু পরীক্ষা চট্টগ্রাম থেকে হয়, তবে শুধুমাত্র ম্যালামিন পরীক্ষা করার জন্য আমরা ঢাকায় নমুনা পাঠাই। এছাড়া পানির সম্পূর্ণ পরীক্ষা ঢাকা থেকে করাতে হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসয়াবিন তেলের দাম একবারে বাড়ল লিটারে ১২ টাকা
পরবর্তী নিবন্ধপলিথিন আটকাতে সংযোগ খালের মুখে নেট বসানোর পরামর্শ