হালদা পাড়ে হতাশা

হাটহাজারী ও রাউজান প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২৮ মে, ২০২১ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদায় গত বুধবার দিবাগত রাতে ডিম ছেড়েছে মা মাছ। দীর্ঘ অপেক্ষার পর মা মাছ ডিম ছাড়ায় একপ্রকার স্বস্তি এসেছিল ডিম সংগ্রহকারীদের মাঝে। সংশ্লিষ্ট সবাই ভেবেছিলেন এবার হয়তো গতবারের চেয়ে বেশি পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করা যাবে। কিন্তু গতকাল ডিমের স্বল্পতা দেখে সংগ্রহকারীরা হতাশ হয়ে পড়েন। এবার জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, নৌ পুলিশের তৎপরতা, হালদা নদীর জীব বৈচিত্র্য ও মিঠা পানির ডলফিন রক্ষায় নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ এবং নদী দূষণ ঠেকাতে অভিযান অব্যাহত ছিল। এছাড়া নদী থেকে মাছ চুরি ঠেকাতে মদুনাঘাট থেকে আমতুয়া পর্যন্ত ৮টি পয়েন্টে সিসি ক্যামরা স্থাপন এবং নদী থেকে বালু উত্তোলন, ড্রেজার ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা বন্ধ করা হয়। কিন্তু এত কিছুর পরও আশানুরূপ ডিম না পাওয়ায় ডিম আহরণকারীসহ সংশ্লিষ্টদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে।
এবার নদীতে প্রায় সাড়ে ৩শ নৌকা প্রয়োজনীয় লোকবলসহ ডিম সংগ্রহের সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত ছিল। সাধারণত এপ্রিল মাস থেকে জুন মাসে নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। এরমধ্যে তিনটি তিথি/জো চলে গেছে। এবার পূর্ণিমার জো থাকায় মে মাসের ২৪ তারিখ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে ডিম ছাড়ার সম্ভাবনার কথা সংশ্লিষ্টরা বলে আসছিলেন। সে অনুযায়ী গত বুধবার ডিম ছাড়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে কর্ণফুলী, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, চেংখালী, সোনাইখাল, কুমারখালী, বোয়ালিয়া ও সর্ত্তাখালসহ বিভিন্ন নদী, খাল ও ছরা থেকে মা মাছ হালদা নদীতে ছুটে আসে ডিম ছাড়তে। পরিবেশ অনুকূল থাকলে চৈত্র-বৈশাখ মাসের আমাবস্যা, অষ্টমী ও পূর্ণিমা তিথির জোতে ডিম ছাড়ে। কিন্তু এবার চৈত্র-বৈশাখ মাসে পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টি হয়নি। ফলে পাহাড়ি ঢল না থাকায় তখন মা মাছ ডিম ছেড়েনি। তবে চলতি মাসের শেষদিকে এসে পূর্ণিমা তিথির জোতে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কয়েক দফা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হয়। এতে মা মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে।
ডিম আহরণকারী কামাল সওদাগর জানান, তিনি এবার ডিম সংগ্রহের জন্য ৬টি নৌকায় এক বালতি করে ৬ বালতি ডিম আহরণ করেছেন। যা গত বছরের চেয়ে অনেক কম। কোনো কোনো ডিম আহরণকারী প্রতি নৌকায় ১ থেকে ২ বালতির উপরে ডিম সংগ্রহ করতে পারেননি। তিনি তার সংগৃহীত ডিম থেকে রেণু ফোটানোর কাজ করছেন বলে জানান। মাদার্শা এলাকার ডিম সংগ্রহকারী আশু বড়ুয়া জানান, তিনি ৩টি নৌকার মাধ্যমে ৩ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছেন। এখন রেণু ফোটানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তবে আবার বৃষ্টি হলে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হুদা রনি বলেন, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও হালদা গবেষকদের নিয়ে একটি টেকনিকেল কমিটি রয়েছে। তারা হিসাব নিকাশ করে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করলে সেখান থেকে আহরিত ডিমের পরিমাণ জানানো হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপলিথিন আটকাতে সংযোগ খালের মুখে নেট বসানোর পরামর্শ
পরবর্তী নিবন্ধ‘রহস্যের’ আগুনে দগ্ধ ৫