‘রহস্যের’ আগুনে দগ্ধ ৫

একজনের মৃত্যু, পুলিশ বলছে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট, স্থানীয়রা বলছেন বিস্ফোরণ, ফায়ার সার্ভিস কিছুই জানে না

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৮ মে, ২০২১ at ৬:২১ পূর্বাহ্ণ

নগরীর বন্দর থানাধীন কলসী দীঘিরপাড় এলাকায় রহস্যজনক এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ হয়েছে দুই শিশুসহ পাঁচজন। গত বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সিইপিজেডের কলসী দীঘিরপাড় পকেট গেট সংলগ্ন রফিক কলোনি রোডের হাজী ইমাম শরীফের ভাড়া বাসায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন- মো. রাসেল (৩৩), তার স্ত্রী নাজু বেগম (২৮) ও দুই সন্তান লামিয়া (১০), জিহাদ (৬) এবং রাসেলের ভাই মো. শিপন (৩০)। আহতদের মধ্যে গৃহকর্তা রাসেল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে চমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নিহতের নিকটাত্মীয় জুবায়ের রাত পৌনে ৯টার দিকে রাসলের মৃত্যু বিষয়টি দৈনিক আজাদীকে নিশ্চিত করেন। এদিকে এই অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে স্থানীয় বন্দর থানা পুলিশ বলছে ঘটনাটি বৈদ্যুতিক শট সার্কিটে, স্থানীয় লোকজন বলছেন বিস্ফোরণ। তবে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস বলছে তারা কিছুই জানে না। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাস্থল হাজী ইমাম শরীফের ভাড়া বাসাটিতে গিয়ে দেখা গেছে, তিনতলা দালানটিতে অসংখ্য ভাড়া ঘর রয়েছে। নিচ তলার ২নং বাসাটিতে দুর্ঘটনা ঘটে। বাসাটিতে দেখা গেছে, রান্না করা খাবার, কিছু থালাবাসন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বাসার মেঝেতে মানুষের অনেক চুল ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। খালি প্লাস্টিকের বোতল ভর্তি বস্তাটি উড়ে গেছে। তবে অক্ষত রয়েছে দুইটি এলপিজি সিলিন্ডার। বিদ্যুতের লাইনগুলোও অক্ষত রয়েছে। একটি কক্ষের বৈদ্যুতিক লাইন বাইরে থেকে আগুনে জ্বলেছে। সুইচগুলোও অক্ষত রয়েছে। রাত্রিযাপনের প্লাস্টিকের মাদুরটির এক অংশ পুড়ে গেছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত আড়াইটার দিকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনেছেন তারা। আহতদের উদ্ধারকারী পাশের বাসার সুমন মিয়া বলেন, ‘আহত রাসেলের বাড়ি হবিগঞ্জে। তারা মানুষের চুল ও পুরোনো প্লাস্টিক সামগ্রী কেনাবেচা করতেন। স্বামী-স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে ছাড়াও তাদের এক আত্মীয়ও এইদিন বাসায় ছিল। সবাই পুড়েছে। বাসায় তেমন কোনো আসবাবপত্র নেই। ফ্লোরে প্লাস্টিকের মাদুর বিছিয়ে রাত্রিযাপন করতেন। বিকট শব্দ হওয়ার পর অনেক লোক জড়ো হয়ে যায়। এসময় দগ্ধদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। আমি নিজেই ঘরের বিভিন্ন জায়গায় জ্বলে থাকা আগুন নিভিয়েছি। সিলিন্ডারের মুখে থাকা কাপড়ও জ্বলছিল। আমি চট দিয়ে আগুন নিভিয়েছি।’
স্থানীয়রা জানান, ওই বাড়িটির কেয়ারটেকার ছগীরও সামনে একটি চায়ের দোকান করেন এবং পরিবার নিয়ে ওই বাসার দ্বিতীয় তলায় বসবাস করেন। ঘটনার পর থেকে ছগীর গা ঢাকা দিয়েছেন। ঘটনাস্থলে ছগীরের বৃদ্ধ পিতা বলেন, ছগীর দগ্ধদের চিকিৎসার কাজে হাসপাতালে আছে। কিন্তু পরে চমেক হাসপাতালে গিয়ে ছগীরকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত অসংখ্যবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। চমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ওয়ার্ডে আহতদের আত্মীয়-স্বজনরা বলেন, ছগীর হাসপাতালে আসেনি। তারাই আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই শীলাব্রত বড়ুয়া জানান, কলসী দীঘিরপাড় এলাকায় দগ্ধ পাঁচজনকে রাত তিনটার দিকে চমেক হাসপাতালে আনা হয়। পরে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাদের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. সাম্য দাশগুপ্ত বলেন, ‘দগ্ধ পাঁচজনের মধ্যে রাসেল ৭৫ শতাংশ, নাজু ৪৩ শতাংশ ও শিপন ৪০ শতাংশ পুড়েছে। তাদের শ্বাসনালীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অবস্থা আশঙ্কাজনক। দুই শিশুর মধ্যে লামিয়া ১৫ শতাংশ এবং জিহাদ ১০ শতাংশ পুড়েছে। দুই শিশুর অবস্থা শঙ্কামুক্ত।’
ঘটনাটি বিস্ফোরণ নয়, বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে ঘটেছে বলে জানালেন বন্দর থানার ওসি নিযাম উদ্দিন। তিনি দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আহতরা ভাড়াটিয়া। তারা গরীব মানুষ। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আমরা ইন্সিডেন্স রিপোর্টও দিয়েছি। এখানে কোনো বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। বিদ্যুতের প্লাগে শট সার্কিট থেকেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।’
পাঁচজন দগ্ধ হওয়ার ঘটনাটিই জানে না মাত্র এক কিলোমিটার দূরের সিইপিজেড ফায়ার সার্ভিস। সিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আবদুল মান্নান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘কলসী দীঘিরপাড় এলাকায় আগুনে ৫ জন দগ্ধ হওয়ার কোনো খবর আমরা পাইনি।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধহালদা পাড়ে হতাশা
পরবর্তী নিবন্ধ১৩ জুন স্কুল-কলেজ খোলার প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ