দেশে প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। কিডনি রোগ নামক এই নীরব ঘাতকের ব্যাপকতা দিনদিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষ বুঝতেই পারেন না তাদের কিডনি আক্রান্ত হতে বসেছে। রোগের জটিল পর্যায়ে (ক্রিটিক্যাল পর্যায়ে) পৌঁছলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন অধিকাংশ রোগী। কিডনি এবং কিডনি রোগ নিয়ে সচেতনতার অভাবই এর মূল কারণ। অথচ, কেবল সচেতনতার মাধ্যমেই ৬০ শতাংশ কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
সারাবিশ্বের ৯০টি দেশে বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত হচ্ছে আজ। প্রতি বছর মার্চ মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য– ‘সুস্থ কিডনি সবার জন্য– অপ্রত্যাশিত দুর্যোগের প্রস্তুতি–প্রয়োজন ঝুঁকিপূর্ণদের সহায়তা।’ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বের ন্যায় চট্টগ্রামেও দিবসটি উদযাপন করছে চট্টগ্রাম কিডনী ফাউন্ডেশন ও চমেক হাসপাতালের কিডনি বিভাগ। দিবসটি উপলক্ষে আজ সকাল ৯টায় বর্ণাঢ্য র্যালীর আয়োজন করেছে চমেক হাসপাতালের কিডনি বিভাগ। আর শুক্রবার এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা থাকায় দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে ১২ মার্চ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগ নির্ণয় করা গেলে নিরাময় সম্ভব। কিন্তু এটা নীরব ঘাতক হওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় সম্ভব হয় না। যখন রোগীরা ডাক্তারের কাছে আসেন, তখন কিডনি প্রতিস্থাপন অথবা ডায়ালাইসিস ছাড়া উপায় থাকে না। এক্ষেত্রে কিডনি প্রতিস্থাপন অনেক ব্যয়বহুল।’ অধিকন্তু দেশের কিডনি রোগীর মাত্র ১০ শতাংশ কিডনি প্রতিস্থাপন এবং ডায়ালাইসিস করে বেঁচে থাকে। আর বাকি ৯০ শতাংশই বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। কারণ এর চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। এক্ষেত্রে রোগটির প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধের দিকেই জোর দেয়া জরুরি বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসকরা বলছেন– ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, নেফ্রাইটিস (কিডনিতে এক ধরণের ইনফেকশন), মূত্র তন্ত্রের বাধা, জন্মগত কিডনি রোগ, পাথর রোগ এবং গর্ভাবস্থা ও শল্য চিকিৎসার জটিলতায় আক্রান্তদের কিডনি রোগের ঝুঁকি বেশি। এছাড়া ব্যাথানাশক ও কিডনির অন্যান্য ক্ষতিকর ওষুধের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এবং ধুমপানও কিডনি রোগের অন্যতম কারণ। বর্তমানে ডায়াবেটিস বিশ্বজুড়ে কিডনি রোগের অন্যতম প্রধান কারণ জানিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের কিডনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. নুরুল হুদা বলেন, আগের তুলনায় কিডনি রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। গত দশ বছরে রোগীর সংখ্যা অন্তত দ্বিগুণ হয়েছে। কিছু বিষয় মেনে চললে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে কিডনি সুস্থ রাখা সম্ভব।
কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ও চমেক হাসপাতালের কিডনি বিভাগের (নেফ্রোলজি) প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ইমরান বিন ইউনুসের মতে, কিডনি ও কিডনি রোগ নিয়ে সচেতন হওয়া খুব বেশি জরুরি। মাত্র ২০ শতাংশ রোগ রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে কিডনি আক্রান্তের বিষয়টি ধরা পড়ে। আর ৮০ শতাংশ রোগ পরোক্ষভাবে কিডনিকে আক্রান্ত করে। ডায়াবেটিসসহ এই ৮০ শতাংশ রোগ হলে কিডনি আক্রান্তের বিষয়টি মানুষ বুঝতে পারে না। মানুষ নিজের কিডনি ও কিডনি রোগ নিয়ে সচেতন নয় বলেই এমনটি ঘটে। অথচ, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগের বিষয়টি জানতে পারলে এ রোগ নিরাময় সম্ভব।