নিঃসঙ্গতা

সালসাবিল করিম চৌধুরী | শনিবার , ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখব

প্রতিটি ঘরে সব একা একা মানুষ!

একটা লাগোয়া স্নানের ঘর,

একটা এলোমেলো পাকা পাকের ঘর

আর নীল রঙের নির্জনতা,

এই হবে একমাত্র এইভাবে বেঁচে থাকা!

মিশুক মানুষটাও খুব একা হয়ে যাবে

একদিন ঠকে যাওয়ার ভয়ে!

একদিন দেখা যাবে পাড়া মহল্লায়,

চায়ের দোকানে,বড় বড় রেস্তোরাঁয়

মানুষ গোপনে, উঁকি দিয়ে দেখবে

আর কেও খাবারের টেবিলে আছে কিনা!

একলা নির্জন একটা টেবিল পেলে

ছোঁ মেরে সে সেটা দখল করে নেবে।

মানুষ সত্যি একদিন খুব একা হয়ে যাবে।

বনের হিংস্র বাঘ আর সিংহের মত মানুষ

মানুষকে ভয় পাবে, এড়িয়ে চলবে।

কিছু মানুষের মাথার উপর গোলগাল

লাল বাতির হুইসেল থাকবে,

তারা সবসময় যন্ত্রণা বাজাবে।

তাদের দেখলে মানুষ দৌড়ে

কাফনের দোকানে ঢুকে পড়বে।

তাদের দেখতে মৃত্যু মৃত্যু লাগবে,

আগরের ধোঁয়া ছড়াবে,

পাপের সমাপ্তি করবে।

আখেরী যুগ বলে মানুষ আসলেই

খুব একা হয়ে যাবে সেদিন।

একদিন এমন হবে কেও কারও

মুখ দেখতে চাইবে না।

কারও ঘরে নতুন সন্তান আসবে না।

কারও বারান্দা জুড়ে শিশুর কাঁথা

শুকানো হবে না।

মানুষ, মানুষ জন্ম না দিয়ে

কুকুর বিড়ালের মুখে মা বাবা

ডাক শুনতে চাইবে।

মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে ইনফ্লুয়েন্সার

হয়ে বক্তব্য দেবে মানুষের চেয়ে জানোয়ার

অনেক আপন, তারা কখনো ঠকাবে না,

কষ্ট দেবে না, ছেড়ে যাবে না, মিথ্যা বলবে না।

মানুষ একদিন আর পার্কে যাবে না!

চিড়িয়াখানার টিকিট কাউন্টারে লম্বা লাইনে

দাঁড়িয়ে মানুষ শুধু জন্তু জানোয়ার দেখবে

আর নিশ্চিন্ত মনে ভাববে মানুষের চেয়ে

এরা অনেক ভালো!

কেউবা কুকুরের মুখে চুমু দেবে, কেউবা

বিড়ালের পিঠে হাত বুলাবে, কোট বা হাতির

পিঠে চড়ে রাজার সুখ নেবে আবার কেও বা

জিরাফের পিঠে উড়োজাহাজে চড়ার

গল্পে মজবে।

বক্সির হাটে একদিন আর ডালাকুলো,

মোম, মেহেদি আর ঝাঁঝর বিক্রি হবে না।

কোনও ঘরে আর হলুদ বাটো মেহেন্দি বাটো

এইসব লোকও গান হবে না।

একসময়ের বিচ্ছিরি ভীড় থাকা কমিউনিটি

সেন্টারে আর বিয়ের বাতি জ্বলবে না!

মানুষ আর কোনদিন কারও

জীবনসঙ্গী হতে চাইবে না!

পৃথিবীটা একদিন সত্যি মানব শূন্য হয়ে যাবে।

ফার্মেসিতে আর ভিটামিন বিক্রি হবে না

হবে না কোনও শক্তিবর্ধক ওষুধ কেনাবেচা

মানুষ সব লতাপাতা খেয়ে

শুকরিয়ার ঢেঁকুর তুলবে!

আর আমিও বসে বসে ভাবব

আমার লেখা নির্জনতা কবিতার পঙক্তিগুলো

মানুষ পেলাম না বলে আজ অবধি ছাপানো হল না।

অক্ষরগুলো পুরোনো কাঠের আলমারিতে

কতটা অসহায় হয়ে অপেক্ষা করছে অনাদিকাল!

পরে ভাবলামথাক,আমিও না হয় আজ

মানবশূন্য এই পৃথিবীর বুকে নিজের

অসমাপ্ত ব্যথার গুণগান গাইলাম!

পূর্ববর্তী নিবন্ধএক শ্রেণি থেকে পাস করা ছাত্রের অন্য শ্রেণিতে ভর্তি হতে পুনঃ ভর্তি ফি লাগবে কেন?
পরবর্তী নিবন্ধবিদায়ী সূর্যের চুম্বন